সারাদেশ

অদম্য মেধাবীদের গল্প

  এস এম রাফি ২৯ আগস্ট ২০২৩ , ৫:২৫ অপরাহ্ণ প্রিন্ট সংস্করণ

গরীব ঘরে জন্ম ওদের। সুখের দেখা জুটেনি ভাগ্যে। এক বেলা খাবার জুটলে আরেক বেলা খাবার চিন্তা তাদের তারা করে বেড়ায়। তবুও নানা প্রতিকূলতার সাথে লড়াই করে জীবন যুদ্ধে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার স্বপ্ন ওদের চোখে মুখে। ওরা যেন গোবরে পদ্ম ফুল । এদের কারো বাবা মসজিদের মুয়াজ্জিন ,কেউ দরিদ্র কৃষক, কারো বাবা দিন মজুর, কারো বাবা নাইট গার্ড। তাদের সন্তানরা এসএসসি পরীক্ষায় ভালো ফল করলেও উচ্চ শিক্ষা কিভাবে গ্রহন করবে, সে চিন্তা ওদের সারাক্ষণ তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে। অর্থের অভাবে ভর্তি হতে পারবে কী না এ চিন্তায় শঙ্কিত তারা। সমাজের বিত্তবানদের একটু সহানুভুতি পেলে কাউনিয়ার ৫ অদম্য মেধাবী শিক্ষার্থীদের উচ্চ শিক্ষা অর্জনের স্বপ্ন পূরন হবে।

মেহেদী হাসান মিঠুনঃ দরিদ্র ঘরে জন্ম মেহেদী হাসান মিঠুনের । নতুন বই কিনে পড়ালেখা করতে পারেনি সে। দরিদ্রতা আর নানা প্রতিকুলতার সাথে যুদ্ধ করে বাংলাবাজার উচ্চ বিদ্যাল থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে সে। উপজেলার সোনাতন গ্রামের বাসিন্দা কেজি স্কুলের পিয়ন গোলাম রব্বানী ও গৃহিনী মোছাঃ মেহেরুন নেছার পুত্র সে। বাড়ি ভিটা ছাড়া আর কোন জমি- জমা নেই তাদের। ৩ হাজার টাকা বেতন পাওয়া বাবার সামান্য চাকুরির টাকায় কোন রকমে চলে সংসার। ছেলের অনেক স্বপ্ন লেখাপড়া শিখে ডাক্তার হবে। কিন্তু সেই স্বপ্ন পূরুণে অর্থের যোগান হবে কি ভাবে ? আর্থিক সহযোগিতা না পেলে মেহেদীর শিক্ষার প্রদীপও নিভে যেতে পারে। তার স্বপ্ন পূরনে এখন বড় বাঁধা দারিদ্রতা। এ বাঁধা ডিঙ্গিয়ে সেই স্বপ্ন পূরন হবে কিনা সে চিন্তাই এখন সারাক্ষণ মেহেদী কে তাড়া করে বেড়ায় ।
ফারজানা আক্তারঃ কাউনিয়া উপজেলার বাংলাবাজার উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে অংশ নিয়ে গোল্ডেন জিপি এ-৫ পেয়েছে ফারাজানা আক্তার । উপজেলার নাজিরদহ জামতলা গ্রামের দরিদ্র পিলার কোম্পানির শ্রমিক ফকরুল ইসলাম ও গৃহিনী ছাইফুন নাহার এর কন্যা সে। চরম অর্থ সংকটের মাঝেও এবার এসএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়েছে সে। দরিদ্রতার সাথে লড়াই করে এসএসসি পাস করলেও উচ্চ শিক্ষা গ্রহন নিয়ে এখন দুচিন্তায় পড়েছে ফারজানা আক্তার । তার শিক্ষার খরচ জুটবে কিভাবে এচিন্তায় বিভোর তার দরিদ্র শ্রমিক পিতা । তারা চার বোন । এতো দিন পড়াশুনার খরচ চালিয়েছে বিভিন্ন কারুকাজ খচিত টুপি সেলাই করে । মাত্র আড়াই শতাংশ জমিতে বাড়ি ভিটা তাদের। আর কোন জমিজিরাত নেই। দারিদ্র্যতা কে জয় করে সামনে এগিয়ে যাওয়ার নিরন্তর সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে সে। মা ছাইফুন নাহার মেয়ের সাফল্যে খুশি হলেও ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। মেয়ে চায় ডাক্তার হতে, কিন্তু দরিদ্র পরিবারের পক্ষে কিভাবে তা সম্ভব। সংসারে একজন মাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তির ওপর নির্ভরশীল তাদের সংসার। তিনি মেয়ের জন্য সকলের কাছে দোয়া ও সহযোগিতা কামনা করেছেন।
আনন্দ কুমার রায়ঃ দারিদ্রতা ও অর্থ সংকট দমিয়ে রাখতে পারেনি কাউনিয়া উপজেলার তালুকশাহবাজ গ্রামের দরিদ্র কৃষক রবীন্দ্রনাথ নাথ বর্মনের পুত্র কে। চরম অর্থ সংকটেও আনন্দ কুমার এবার এসএসসি পরীক্ষায় কাউনিয়ার টেপামধুপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে অংশ নিয়ে জিপিএ-৫ পেয়েছে। দারিদ্রতার সাথে লড়াই করে এসএসসি পাস করলেও উচ্চ শিক্ষা গ্রহন নিয়ে এখন দুঃচিন্তায় পড়েছে আনন্দ কুমার। মা প্রজাপতি রানী জানায় বাড়ী ভিটা ছাড়া কোন জমি জিরাত নেই তাদের রাক্ষসী তিস্তা নদীর ভাঙ্গনে সব নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে । ওরা ২ ভাই পড়ালেখা করে। অভাবের মাঝেও সব প্রতিবন্ধকতাকে পদদলিত করে ভালো কলেজে পড়ার স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে আনন্দ কুমার । ছেলের সাফল্যে খুশি হলেও পিতা রবীন্দ্রনাথ বর্মন তার ভবিষ্যৎ নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় আছেন। ছেলে চায় ইঞ্জিনিয়ার হতে, কিন্তু দরিদ্র পিতা- মাতার পক্ষে কিভাবে তা সম্ভব। তিনি ছেলের জন্য সকলের কাছে আর্শিবাদ ও সহযোগিতা কামনা করেছেন।

আব্দুল্লাহ আল-আমিনঃ উপজেলার রাজীব গ্রামের মুয়াজ্জিন পিতা জাহাঙ্গীর আলমের পুত্র আল-আমিন প্রমান করছে ইচ্ছা শক্তি থাকলে সব সম্ভব। সে টেপামধুপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে এস এস সি পরীক্ষায় গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়েছে। ৫ শতাংশ জমিতে নিজস্ব বসতভিটা ছাড়া আর কোন জমিজিরাত নেই তাদের। আল-আমিন জানায় তার ছোট ২ ভাই মাদ্রাসায় পড়ে। ছোট ভাই আদিল মাহমুদ দীর্ঘ দিন ধরে অসুস্থ। পিতার সামান্য আয় দিয়ে ৩ ভাইয়ের পড়ালেখা ও ভাইয়ের চিকিৎসার খরচ ও ৫ জনের সংসার চলে কোন রকমে। তাই আমার উচ্চ শিক্ষার খরচ যোগান দেয়া আমার বাবার পক্ষে অসম্ভব। তাই অভাবের সংসারে অর্থ জোগান ও পড়ালেখার খরচ জোগাতে সে প্রাইভেট পড়িয়ে এ পর্যন্ত এসেছে । মা আদরী খাতুন জানায়, তার ছেলের স্বপ্ন ডাক্তার হওয়ার। কিন্তু দরিদ্র মুয়াজ্জিন পিতার পক্ষে ছেলের স্বপ্ন পুরুণ হবে কীভাবে।

জাহিদুল ইসলাম জামিলঃ পরিশ্রম ও অধ্যাবসায় থাকলে যে সাফল্যের চরম শিখরে পৌছা যায় তার প্রমান রেখেছেন উপজেলার রাজিব গ্রামের আনসার ভিডিপির সদস্য ( নাইট গার্ড) রাসেদুল ইসলামের পুত্র জাহিদুল ইসলাম জামিল । সে টেপামধুপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে জিপিএ -৫ পেয়েছে। তারা ২ ভাই । জাহিদুল ইঞ্জিনিয়ার হতে চায়, কিন্তু টানাটানির সংসারে ছেলের আশা পূরণ করা কী সম্ভব। বিত্তবানদের সহযোগিতা পেলে ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্ন পূরুণ হতে পারে জাহিদুল ইসলাম জামিলের ।