রাজনীতি

আ.লীগের নেতৃত্বে বড় পরিবর্তনের গুঞ্জন

  Editor ২৩ ডিসেম্বর ২০২২ , ১১:৪৩ পূর্বাহ্ণ প্রিন্ট সংস্করণ

দেশের ক্ষমতাসীন দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন শনিবার (২৪ ডিসেম্বর)। এটি এই দলের ২২তম সম্মেলন। এবার সম্মেলনে কার্যনির্বাহী কমিটির উচ্চ পর্যায়ের পদগুলোতে নেতৃত্বের পরিবর্তন আসতে পারে বলে জোর গুঞ্জন রয়েছে। দলের উচ্চ পর্যায়ের কয়েকটি সূত্রে জানা গেছে, এরই মধ্যে সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পছন্দের তালিকায় ১০ জন কেন্দ্রীয় নেতার নাম রয়েছে।

 

অবশ্য আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বৃহস্পতিবার (২২ ডিসেম্বর) রাজধানী ঢাকায় গণমাধ্যমকে বলেছেন, এই সম্মেলনে গুরুত্বপূর্ণ পদে পরিবর্তন আসার সম্ভাবনা নেই। এদিকে দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের আড্ডায় যে আলাপ ও আলোচনা তাতে স্পষ্ট হয়ে উঠে যে, বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকেই তৃতীয় দফায় এই পদে রাখা হতে পারে।

 

আলোচনা, গুঞ্জন যতই হোক, দলের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব কাকে দেওয়া হবে সে সিদ্ধান্ত এককভাবে ও চূড়ান্তভাবে নেবেন দলের সভাপতি শেখ হাসিনা। কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা নির্বাচনের পূর্ণ ও একক দায়িত্ব তার ওপর অর্পণ করেন কাউন্সিলররা।

 

জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে ক্ষমতাসীন দলের এই সম্মেলনকে কেন্দ্র করে রাজনীতিতে ভিন্ন মাত্রা যোগ হয়েছে। আগের সম্মেলনের মতো এবারও আলোচনার বাইরেই থাকছে সভাপতি পদটি। সর্বসম্মতিক্রমে এ পদ থাকছে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার ঝুলিতেই। তিনি সভাপতির পদ টানা ৪১ বছর ধরে আলোকিত করে রেখেছেন। তার যোগ্য নেতৃত্বের কারণে টানা তৃতীয় মেয়াদে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় রয়েছে আওয়ামী লীগ। এখন সব জল্পনা-কল্পনা ‘সাধারণ সম্পাদক’ পদ ঘিরে। কে হচ্ছেন আওয়ামী লীগের পরবর্তী সাধারণ সম্পাদক তা নিয়ে দলে এবং দলের বাইরে চলছে ব্যাপক আলোচনা।

 

দলীয় তথ্য অনুযায়ী, আওয়ামী লীগের বিগত সম্মেলনের দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যায়, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পর টানা তৃতীয় মেয়াদে দলের সাধারণ সম্পাদক পদ কেউ পাননি। সে হিসাবে বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এই পদ আবারও পাওয়া না পাওয়া নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে। ওবায়দুল কাদের যদি আবারও সাধারণ সম্পাদক হন তাহলে এই নিয়ে তিনি টানা তৃতীয় দফা এই পদটি আলোকিত করবেন। বাকিটা পরিষ্কার হয়ে যাবে শনিবার দলের সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনে।

 

ওবায়দুল কাদের বৃহস্পতিবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সম্মেলন স্থল পরিদর্শন করেন। এ সময় সাংবাদিকরা তার কাছে আগামী দিনের নেতৃত্ব বিষয়ে জানতে চান। তিনি বলেন, ‘নতুন যে কমিটি হবে তাতে তেমন একটা পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনা কম। প্রয়োজনে নির্বাচনের পর আগাম পরবর্তী সম্মেলন করতে পারি। তখন একটা বড় ধরনের পরিবর্তন হয়তো হবে। আপাতত আমরা বড় ধরনের কোনো পরিবর্তনের ব্যাপারে ভাবছি না।’

 

সাধারণ সম্পাদক পদে হ্যাটট্রিক করছেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি কোনো প্রেডিকশন করতে চাই না। টাইম ইজ নট ম্যাচিউরড টু প্রেডিক্ট। এটা আমি করতে পারি না। তাহলে কাউন্সিলরদের চিন্তাভাবনাকে অবমূল্যায়ন করা হয়। অন্তত ১০ জন আছেন, যারা সাধারণ সম্পাদক হওয়ার যোগ্য। সে ধরনের অভিজ্ঞ নেতৃত্ব আমাদের দলে আছে।’ এটা নেত্রীর ইচ্ছা এবং কাউন্সিলরদের মতামতের ওপর নির্ভর করছে।

 

দলের একাধিক সূত্র জানায়, দ্বিতীয় সর্বোচ্চ এই পদের জন্য দৌড়ে আরো দুজন কেন্দ্রীয় নেতা রয়েছেন। তবে পদপ্রত্যাশী এই নেতারা কোনোভাবেই মুখ খুলছেন না। তারা বলছেন, দলের সভাপতি যাকে যোগ্য মনে করবেন তাকেই সাধারণ সম্পাদক পদে বসাবেন। তার সিলেকশনই দলের সব পর্যায়ের নেতাকর্মী মেনে নেবেন।

 

সূত্র মতে, আওয়ামী লীগের বিগত সম্মেলনেগুলোতে কেন্দ্রীয় সভাপতিমন্ডলীর সদস্যদের মধ্যে থেকেই দলের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হতে দেখা গেছে। সে হিসাবে এবারও সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যদের নিয়ে দলের ভেতরে-বাইরে গুরুত্ব থাকছে বেশি। সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যর মধ্যে সাধারণ সম্পাদক পদে আলোচনায় রয়েছেন, অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক ও কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক।

 

তবে আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা দল ও সরকারকে আলাদা করার যে কৌশল নিয়েছেন, তাতে সাধারণ সম্পাদকের দৌড়ে এগিয়ে আছেন জাহাঙ্গীর কবির নানক ও আবদুর রহমান। তারা দুজনই মন্ত্রী-এমপি কোনোটিই নন। গত নির্বাচনে তারা মনোনয়ন পাননি। এর মধ্যে নানক তৃণমূল থেকে উঠে এসেছেন, ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতৃত্বে ছিলেন, যুবলীগের চেয়ারম্যানের নেতৃত্ব দিয়েছেন। দুর্দিনের নেতা হওয়ায় সারা দেশে নেতাকর্মীদের কাছে তাদের গ্রহণযোগ্যতা বেশি। আবদুর রহমানও ছাত্রলীগে নেতৃত্ব দিয়েছেন। দলের দুঃসময়ে দক্ষ সংগঠক হিসেবে কাজ করার জন্য তাদের পরিচিতি ও সুনাম আছে। গত সম্মেলনেও সাধারণ সম্পাদক পদে ড. আবদুর রাজ্জাকের নাম ছিল এবং এবারও শোনা যাচ্ছে। গত নির্বাচনে ইশতেহার প্রণয়নের কাজ করে তিনি দক্ষতার স্বাক্ষর রাখেন। এছাড়া বরাবরের মতো দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকরাও আলোচনায় রয়েছেন। তারা হলেন মাহবুব-উল আলম হানিফ, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ ও আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম।

 

দলীয় গঠনতন্ত্র অনুযায়ী আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক নির্বাচনের দায়িত্ব কাউন্সিলরদের। কিন্তু বরাবরই কাউন্সিলররা এ দায়িত্ব ন্যস্ত করেন সভাপতির ওপর। তাই পরবর্তী সাধারণ সম্পাদক কে হবেন, তা নির্ভর করবে আওয়ামী লীগ সভাপতির সিদ্ধান্তের ওপর। তবে নেতাকর্মীরা বলছেন, এবার সাধারণ সম্পাদক পদে যোগ্য এবং চেইন অব কমান্ড রক্ষাকারী নেতাই আসবেন। এবারের সম্মেলনের গুরুত্ব অন্যবারের চেয়ে বেশি। কারণ এই সম্মেলনের পরই জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচন সামনে রেখে সারা দেশে দলে যেখানেই দ্বন্দ্ব-বিভেদ, সেখানেই হস্তক্ষেপ করতে হবে সাধারণ সম্পাদককে।

 

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, আওয়ামী লীগে যোগ্য নেতারাই নেতৃত্বে আসেন। যারা দলের দুঃসময়ের অবদান রেখেছেন, নির্যাতিত হয়েছেন এমন সৎ ও বিচক্ষণ নেতারাই আসবেন। দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে যেকোনো পরিস্থিতিতে খাপ খাইয়ে নিতে পারেন এমন নেতৃত্বই সব পর্যায়ের নেতাকর্মীদের কাছে গ্রহণযাগ্য হবে।