জাতীয়

ইসির কাছে অসন্তোষ প্রকাশ করে ১১টি দলের নানা দাবি

  uadmin ৫ নভেম্বর ২০২৩ , ৪:১০ অপরাহ্ণ প্রিন্ট সংস্করণ

আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে শনিবার ৪৪টি নিবন্ধিত দলকে সংলাপে ডাকে ইসি। সেই ডাকে সাড়া দিয়ে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টিসহ ২৭টি দল নির্বাচন কমিশন ভবনে আলোচনায় অংশগ্রহণ করে। যেখান থেকে অন্তত ১১টি দল নির্বাচনের বিদ্যমান পরিবেশ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে নানা দাবি করেছে ইসির কাছে। এ আলোচনায় অংশ নেয়নি বিএনপি, সিপিবিসহ ১৭টি দল।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, পরিবেশ অনুকূল বা প্রতিকূল যা-ই হোক না কেন, নির্বাচন আয়োজনের বিকল্প তাদের সামনে নেই।

শনিবার (৪ নভেম্বর) ইসির সঙ্গে আলোচনা শেষে গণমাধ্যমকে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধিরা ইসির সঙ্গে কী কথা হয়েছে তা জানান।যেখানে তারা আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সকল দলের অংশগ্রহণ, তত্ত্বাবধায়ক বা নির্বাচনকালীন সরকার এবং সেনাবাহিনী মোতায়েনসহ নানা দাবি ও নিজেদের মতামত প্রকাশ করেন।

বৈঠক থেকে বেরিয়ে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া বলেছেন, ইসি নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে পাওয়ারপয়েন্ট প্রেজেন্টেশন দিয়েছে। এটির মধ্যে তারা নতুনত্ব কিছু খুঁজে পাননি। একই ধরনের প্রস্তুতি আগের দুই কমিশন নিয়েছিল, কিন্তু তাদের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এবারের প্রস্তুতিতে এমন উল্লেখযোগ্য কিছু নেই, যাতে সব দলের আস্থার পরিবেশ সৃষ্টি হবে এবং সবাই নির্বাচনে অংশ নেবে।

তিনি বলেন, তার দলের পক্ষ থেকে ইসিকে বলা হয়েছে, অতীত অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, নির্বাহী বিভাগের লোকজন একটি দলের হয়ে প্রকাশ্যে কাজ করেন। এ দায়িত্ব যারা পালন করেন, তাদের জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। অন্যথায় দেখা যাবে, ভোটের সময় নীরব ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ থাকলেও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করা সম্ভব হবে না।নিয়ম রক্ষার জন্য ইসি এ আলোচনার আয়োজন করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, দলগুলোর অভিযোগের জবাবে সিইসি যে বক্তব্য দিয়েছেন তাতে আশ্বস্ত হওয়ার মতো কিছু নেই।

অন্যান্য দলের মধ্যে তৃণমূল বিএনপির মহাসচিব তৈমূর আলম খন্দকার বলেছেন, ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের মতো নির্বাচন তারা চান না।

বিকল্পধারার মহাসচিব মেজর (অব.) আবদুল মান্নান বলেন, সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন না হলে জনগণের প্রত্যাশা পূরণ হবে না।

জাতীয় গণতান্ত্রিক আন্দোলনের (এনডিএম) ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মোমিনুল আমিন বলেন, ‘সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে সিইসি রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর যেভাবে দায়িত্ব চাপিয়েছেন, তাতে আকাশ থেকে হজরত জিব্রাইলের (আ.) নেতৃত্বে যদি ফেরেশতাদের বিশাল বাহিনী পাঠানো না হয়, তাহলে কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষে আওয়ামী লীগের ক্যাডার বাহিনীকে মোকাবিলা করে ভোটকেন্দ্রে টিকে থাকা সম্ভব নয়।’

রাজনৈতিক ঐকমত্য সৃষ্টি না হওয়া পর্যন্ত এবং নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচনের তপশিল ঘোষণা স্থগিত রাখার দাবি জানিয়ে মোমিনুল আমিন বলেন, নির্দলীয় সরকার ছাড়া নির্বাচনে অংশ নেওয়া হচ্ছে জেনেশুনে বিষ পান করা।

ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের চেয়ারম্যান আল্লামা সৈয়দ মুহাম্মদ বাহাদুর শাহ মোজাদ্দেদী বলেন, ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের প্রহসনের নির্বাচনের মতো আগামী নির্বাচন জাতি দেখতে চায় না। ২০১৮ সালের মতো নির্বাচন হলে তারা এ নির্বাচন বর্জন করবেন।

বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্টের (বিএনএফ) সভাপতি এস এম আবুল কালাম আজাদ বলেন, নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ার নির্বাচন করা। কমিশন সংবিধানের ১২৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী নির্বাচনের আয়োজন করবে। ভোট হবে নির্বাচন কমিশনের অধীনে, কোনো সরকারের অধীনে নয়।ইনসানিয়াত বিপ্লবের মহাসচিব শেখ রাহান আফজাল রাহবার জানান, সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে নির্বাচন পরিচালনার প্রস্তাব দিয়েছি। বর্তমান সংসদ ভেঙে নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের প্রস্তাবও দিয়েছি।

বর্তমান কমিশনের আমলে নিবন্ধন পাওয়া দল বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির (বিএসপি) সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান কাজী মহসীন চৌধুরী বলেন, বর্তমান পরিস্থিতি সুষ্ঠু নির্বাচনের অন্তরায়। নির্বাচনের আগে পোলিং এজেন্টদের নাম ধরে ধরে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের ছাড়িয়ে নেওয়ার জন্য উচ্চ আদালতে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন সিইসি।

গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক ডা. মো. মিজানুর রহমান বলেন, দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য বর্তমানে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের কোনো পরিবেশ দেশে নেই।

গণফ্রন্টের চেয়ারম্যান মো. জাকির হোসেন বলেন, জাতীয় সরকার কিংবা তত্ত্বাবধায়ক সরকার নয়, বরং আমরা নির্বাচনকালীন রাজনৈতিক সরকার চাই। তা না হলে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না।

দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক শেষে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন হবে, নির্বাচনের পরিবেশটা অনুকূল নয়, কিছু কিছু দল এখনও অংশ নিতে পারছে না। আমরা সেটা স্বীকার করেছি।

বিএনপির প্রতি সিইসি বলেন, ‘আপনারা আসুন। কীভাবে আসবেন, সে কোর্সটা আমরা চার্ট করে দিতে পারব না। আপনারা আসুন, আমাদের শুভকামনা থাকবে।’

নির্বাচনের পরিবেশ অনুকূল-প্রতিকূল হওয়াটা আপেক্ষিক মন্তব্য করে সিইসি বলেন, রাজনৈতিক যে সংকটগুলো সম্পর্কে আমাদের প্রত্যাশা সব সময় ইতিবাচক। নির্বাচন বিষয়ে আমাদের রাজনীতিতে বিদেশিরা এসে অনেক পরামর্শ দিচ্ছেন। অথচ আপনারা দিতে পারছেন না।

সিইসি বলেন, নির্বাচন কমিশনের সামর্থ্য অত্যন্ত সীমিত। নির্বাচনের আয়োজন ইসি করলেও পরিচালনার দায়িত্বটা আমাদের হস্তান্তর করে দিতে হয়। তাদের ওপর আমাদের নজরদারি থাকবে। পোলিং এজেন্ট যদি আপনাদের (প্রার্থী) প্রোটেক্ট করতে না পারে, আমরা ঢাকা থেকে প্রোটেক্ট করতে পারব না।

সংলাপে অংশ না নেওয়া দলগুলোর মধ্যে রয়েছে– বিএনপি, এলডিপি, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি-বিজেপি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ-বিএমএল, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, খেলাফত মজলিশ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ-বিএমএল, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিশ, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি এবং বাংলাদেশ জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ।