এস এম রাফি ২১ জুন ২০২৩ , ১০:৩৯ অপরাহ্ণ প্রিন্ট সংস্করণ
কোরবানি শব্দের অর্থ উৎসর্গ করা ও নৈকট্য অর্জন। শরিয়তের বিধানমতে, জিলহজ মাসের ১০, ১১ ও ১২ তারিখের একদিন নির্দিষ্ট নিয়মে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও নৈকট্য হাসিলের উদ্দেশ্যে পশু কোরবানি করা সামর্থ্যবানদের জন্যে ওয়াজিব।
কোরবানির বিধান
কোরবানি স্রেফ কোনো সামাজিক প্রথা বা উৎসবের নাম নয়। বরং এটি এমন এক ধর্মীয় বিধান যা পূর্ববর্তী পয়গম্বরদের উপরও নির্দেশিত ছিল।
সূরা হজের আয়াত ৩৪-এ আল্লাহ বলেন, “আমি প্রত্যেক সম্প্রদায়ের জন্যে কোরবানিকে ইবাদতের অংশ করেছি। যাতে জীবনোপকরণ হিসেবে যে গবাদি পশু তাদেরকে দেওয়া হয়েছে, তা জবাই করার সময় তারা আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে আর (সবসময় যেন মনে রাখে) একমাত্র আল্লাহই তাদের উপাস্য।”
হাদীসেও এমনটাই পাওয়া যায়।
নবীজী (স.)কে সাহাবাগণ জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের কোরবানির হাকিকত কী। তখন রাসূল (স) বললেন, এটা তোমাদের আদি পিতা হজরত ইব্রাহিম (আ.)-এর সুন্নত।
কোরবানি ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ একটি ইবাদত
সূরা কাওসার-এ আল্লাহ বলেন, “(হে নবী!) আমি অবশ্যই তোমাকে কাওসার (অনন্ত কল্যাণ) দান করেছি। অতএব তুমি তোমার প্রতিপালকের জন্যেই নামাজ পড়ো ও কোরবানি দাও।”
অন্যদিকে নবীজী (স.) বলেন, “কোরবানির সময় আল্লাহর নিকট কোরবানির চেয়ে অধিক প্রিয় আর কোনো জিনিস নেই। কোরবানির সময় কোরবানিই সবচেয়ে বড় ইবাদত। পশু জবেহ করার সময় প্রথম যে রক্তের ফোঁটা পড়ে, তা মাটি পর্যন্ত পৌঁছার আগেই আল্লাহর দরবারে কবুল হয়ে যায়।” (তিরমিজি)
তবে সেজন্যে কোরবানি হতে হবে শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে। কোনো ব্যক্তিগত পারিবারিক সামাজিক বা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থাকলে বা লোক দেখানো সামাজিক প্রদর্শনীর ইচ্ছা থাকলে তা কোরবানি হবে না।
সূরা হজে আল্লাহ বলেন, “কোরবানির মাংস বা রক্ত আল্লাহর কাছে পৌঁছায় না, আল্লাহর কাছে পৌঁছায় শুধু তোমাদের নিষ্ঠাপূর্ণ আল্লাহ-সচেতনতা।”
এজন্যে কোরবানির ক্ষেত্রে নিয়ত খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নিয়তে গড়মিল হলে আল্লাহর দরবারে কোরবানি কবুল নাও হতে পারে। পরিণামে স্রষ্টার ইবাদত পরিণত হতে পারে শুধুই সামাজিক উৎসবে।
কোরবানির নামে যা করছি
প্রতিবছর প্রায় প্রতিটি হাটে কোরবানির ‘বিশেষ আকর্ষণ’ হিসেবে অতিকায় কিছু গরু বিক্রির জন্যে তোলা হয়। রাজা, বাদশা, শাহেনশাহ ইত্যাদি নামের দশাসই গরুগুলো পরিণত হয় প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় মুখরোচক সংবাদের বিষয়বস্তুতে। কে কত লাখ টাকায় কিনলো স্বাভাবিকভাবেই জাগে তা জানার কৌতুহল। কিন্তু কোরবানির পশুর কত ওজন আর কত দাম তা নিয়ে যে মাতামাতি তা কি কোরবানির চেতনার সাথে যায়?
আসলে কোরবানির পশু দেখেশুনে সুন্দরটাই কিনতে হবে এটা ঠিক। কিন্তু যখন সেটা অসুস্থ প্রতিযোগিতা আর স্ট্যাটাস জাহিরের বিষয়বস্তুতে পর্যবসিত হয় কোরবানির শুদ্ধাচার পরিপালন হলো কিনা প্রশ্নটা জাগে তখনই।
আর অনলাইন কোরবানি নিয়ে হালে যে মাতামাতি, প্রশ্ন আছে সেখানেও। অনলাইনে কোরবানিতে কোরবানির শর্ত পূরণ হয় কিনা তা নিয়ে যথেষ্ট মতভেদ রয়েছে।
কোরবানির শুদ্ধাচার
কয়েকটি বিষয় খেয়াল রাখলে কোরবানির মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য হাসিল করা সম্ভব হবে। এককথায় এগুলো হচ্ছে কোরবানির শুদ্ধাচার।
১. কারো কাছে কোরবানির পশুর দাম জিজ্ঞেস করবেন না। কোরবানির পশুর কোনো দাম হয় না।
২. ‘আমি এত টাকা দিয়ে কোরবানি দিলাম’−নিজেকে জাহির করার উদ্দেশ্যে এ ধরনের কথা বলা থেকে বিরত থাকুন।
৩. কোরবানির পশুর দাম ও আকার নিয়ে অসুস্থ প্রতিযোগিতা থেকে বেরিয়ে আসুন।
৪. কোরবানির গোশতের ওজন ও পরিমাণ নিয়ে কথা বলবেন না।
৫. কোরবানির পশু অনলাইনে না কিনে বাস্তবে দেখে ও ভালোভাবে বুঝে কিনুন।
৬. পশু কেনার পর বাজারদর যাচাই করে এ নিয়ে অহেতুক আলাপে যাবেন না।
৭. কোরবানির গোশত যথাযথভাবে বিতরণ করুন।
৮. কোরবানির পশুর সাথে সেলফি তুলবেন না; সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারে যাবেন না।
৯. কোরবানির পশুর গলায়, শিং, পিঠ এবং লেজে রঙিন কাপড় বা পশুর শরীরে রঙ লাগিয়ে প্রদর্শনী থেকে বিরত থাকুন।
১০. নিজের সামর্থ জাহির করতে কোরবানির পশু এলাকায় ঘুরিয়ে দেখানো পরিহার করুন।
তথ্যসূত্র : কোয়ান্টামমেথড ডট ওআরজি ডট বিডি (quantummethod.org.bd)।