এস এম রাফি ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৩ , ৯:২১ অপরাহ্ণ প্রিন্ট সংস্করণ
রংপুরের কাউনিয়ায় মাতৃমৃত্যু ও শিশুমৃত্যু হার রোধে উদ্দ্যোগ নিয়েছে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরকিল্পনা বিভাগ। কমিউনিটি ক্লিনিকের পাশাপাশি ইউনিয়ন ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চালু করা হয়েছে প্রাতিষ্ঠানিক ডেলিভারি সিস্টেম যা ইতি মধ্যেই সারা ফেলেছে উপজেলা ব্যাপী। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানাগেছে ২০২২ সালের মার্চ মাস থেকে এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সিজার অপারেশন চালু হয়েছে ২০২৩ সালের আগষ্ট মাস পর্যন্ত ৫৬ জন গর্ভবতী মায়ের সিজার অপারেশন হয়েছে এবং ২০২৩ সালের আগষ্ট মাস পর্যন্ত ২শ’ ২১ টি নরমাল ডেলিভারি হয়েছে। অর্ধ যুগ আগেও গর্ভবতী নারীরা ছিলেন খুবই অবহেলিত। এক জন নারী ৬-৭ টি কেউ কেউ আবার ১০-১২টি করে সন্তান জন্মদান করতেন। কিন্তু বর্তমান সময়ে এর চিত্র পুরোটাই উল্টো। এখন সেই অবস্থা আর নেই। অনেক ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে চিকিৎসা বিজ্ঞান বদলে দিয়েছে বাংলাদেশকে।
স্বাস্থ্যসেবা জনগণের দ্বোরগোড়ায় পৌঁছাতে দিতে সকল উপজেলা হাসপাতালকে ইতিমধ্যেই ৫০ শয্যা হাসপাতালে উন্নীত করা হয়েছে। পাশাপাশি গ্রামীণ জনপদে প্রতি ৬ হাজার অধিবাসীর জন্য স্থাপন করা হয়েছে এক একটি কমিউনিটি ক্লিনিক। কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে প্রজনন স্বাস্থ্য পরিচর্যার আওতায় অন্তঃসত্বা নারীদের প্রসব-পূর্ব প্রতিষেধক টিকাদান সহ প্রসব-পরবর্তী সময়ে নবজাতকসহ মাকেও স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা হয়। কাউনিয়া উপজেলায় ২০টি কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রত্যন্ত অঞ্চলের সাধারণ মানুষকে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা হচ্ছে। প্রতিটি ক্লিনিকে এ চিকিৎসা সেবা প্রদানের জন্য নিয়োজিত আছেন ৩ জন হেলথকেয়ার প্রোভাইডার। একজন হেলথ প্রোভাইডার সার্বক্ষণিক, একজন স্বাস্থ্য সহকারী ও একজন পরিবার কল্যাণ সহকারী সপ্তাহে ৩ দিন করে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করে থাকেন। এর পাশাপাশি হারাগাছ পৌর শহরের জনগনের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করার জন্য ৩০ শয্যা হাশপাতাল রয়েছে যেখানে স্বাস্থ্য সেবার পাশাপাশি গর্ভবতী মায়ের প্রসব পূর্ববর্তী, প্রসবকালীন ও প্রসব পরবর্তী সেবা প্রদান করা হয়।
এর পরেও অনেক সময় মাতৃমৃত্যু ও শিশুমৃত্যু হার রোধে অসচেতনাতার কারণে এই বিষয়টি অনেকেরে নজরে আসে না। কিন্তু একটি নির্দিষ্ট এলাকায় বাচ্চা জন্মদানের ৪২ দিনের মধ্যে প্রেগন্যান্সি, বাচ্চা জন্মদান কিংবা বাচ্চা প্রসবজনিত জটিলতায় কোন মা মারা গেলে সেটিকে এম এম আর হিসেবে গণ্য করা হয়। এসডিজি লক্ষমাত্রা হলো ২০৩০ সালের মধ্যে এম এম আর ১ লাখ এ ৭০ জনের নিচে নামিয়ে আনাতে কাজ করছে বাংলাদেশে সরকার এবং এটি অর্জনের জন্য কমিউনিটি ক্লিনিকে কিংবা নিকটস্থ হাসপাতালে নরমাল ডেলিভারির কোন বিকল্প নেই বলে প্রাতিষ্ঠানিক ডেলিভারি প্রতি তাগাদা দিচ্ছে উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। কমিউনিটি ক্লিনিকে একজন কিশোরী মেয়ের সকল সেবা, গর্ভবতী মায়ের প্রসব পূর্ববর্তী সেবা, প্রসবকালীন সেবা, প্রসবপরবর্তী সেবা, নবজাতককে টীকা প্রদানসহ সকল সেবা প্রদান করা হয় এমনকি কমিউনিটি ক্লিনিকে এখন চালু করা হয়েছে এক্ষেত্রে যদি কনো সমস্যা বা জটিলতা হয় তখন তাৎক্ষনিক সিজার অপারেশন প্রয়োজন হলে সেই মাকে বিনামূল্যে কাউনিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সেই সেবাও দেয়া হয়ে থাকে।
কমিউনিটি ক্লিনিকের দ্বায়িতে থাকা রোগ নিয়ন্ত্রন মেডিকেল অফিসার ডা.সাব্বির আহম্মেদ জানান মাতৃমৃত্যু ও শিশুমৃত্যু রোধে স্বাস্থ্য সেবার পাশাপাশি সচেতনতা বাড়ানোর জন্য কাজ করে যাচ্ছি। এবং কমিউনিটি ক্লিনিক গুলোতে নরমাল ডেলিভারীর চালু করা হয়েছে। যাতে করে প্রত্যন্ত অঞ্চলের মায়েদের ডেরিভারীর আগে ও পরের সেবা গুলো কমিউনিটি ক্লিনিকেই দেয়া সম্ভব হবে।
শতভাগ প্রাতিষ্ঠানিক ডেলিভারি নিশ্চিত করণের লক্ষ্যে করণীয় বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরকিল্পনা কর্মকর্তা ডা. সাদিকাতুল তাহিরিণ জানান, মাতৃমৃত্যু ও শিশুমৃত্যু হার রোধে আমরা উদ্দ্যোগ নিয়েছি। কমিউনিটি ক্লিনিকের পাশাপাশি ইউনিয়ন ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এই সেবা চালু কো হয়েছে। এসডিজি লক্ষমাত্রা অর্জনের জন্য এম এম আর ১ লাখ এ ৭০ এর নিচে নামিয়া আনা প্রয়োজন। বাংলাদেশে যা বর্তমানে ১২৩ (২০২০ এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী) এটি অর্জনের জন্য কমিউনিটি ক্লিনিকে কিংবা নিকটস্থ হাসপাতালে নরমাল ডেলিভারির কোন বিকল্প নেই। এমন কী কমিউনিটি ক্লিনিকে নরমাল ডেলিভারির সময় যদি কোন জটিলতা দেখা দেয় তাহলে বিনামূল্যে কাউনিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সিজার অপারেশন করা হয়ে থাকে। ২৪ ঘন্টাই নরমাল ডেলিভারীর পাশাপাশি সিজার অপারেশনো করা হয়ে থাকে বলে জানিয়েছেন তিনি।