এস এম রাফি ১০ অক্টোবর ২০২৩ , ৬:৩৮ অপরাহ্ণ প্রিন্ট সংস্করণ
কাউনিয়া রেলওয়ে ওভার ব্রীজ থেকে শহীদ মোফাজ্জল হোসেনের নাম ৫০ বছর পর মুছে ফেলায় এলাকাবাসি ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। সেই সাথে পুনরায় নাম অন্তর্ভুক্ত করার দাবী জানিয়েছে।
১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়কালে বাংলাদেশ রেলওয়ের লালমনিরহাটে চাকরীরত অবস্থায় পাকবাহিনীর ব্রাশ ফায়ারে নিহত হন রংপুর জেলার কাউনিয়া উপজেলার মোফাজ্জল হোসেন। ১৯৭১ সালের ৪ এপ্রিল সকাল ১০টায় লালমনিরহাটে রেলওয়ের ওভার ব্রীজের পশ্চিম পার্শ্বে রেলওয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ ৫শতাধিক লোককে ধরে এনে লাইন করে দাঁড় করিয়ে গুলি চালিয়ে নির্মম ভাবে হত্যা করে পাকিস্তানি সেনা ও তার এদেশীয় দোসর রাজাকার-আলবদররা। উর্দূভাষী বিহারী অধুষ্যিত লালমনিরহাট জেলা শহরে পশ্চিমা শোষক ও তাদের দোসরদের হাতে অনান্যদের সাথে সেদিন শহীদ হন মোফাজ্জল হোসেন।
দেশ স্বাধীনের পর স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধা গনের দাবীর প্রেক্ষিতে ক্যাপ্টেন মনছুর ১৯৭৩ সালে শহীদ মোফাজ্জল হোসেনকে স্বরণ করে রাখতে রংপুরের কাউনিয়া রেলওয়ে ষ্টেশনে নির্মাণ করেন শহীদ মোফাজ্জল তোরণ। পরবর্তীতে কাউনিয়া রেলওয়ে ষ্টেশনে অবস্থিত ওভার ব্রীজটির নামকরণ করা হয় শহীদ মোফাজ্জল হোসেন ওভার ব্রীজ নামে। কিন্তু প্রায় দীর্ঘ ৫০ বছর পর সেই ওভার ব্রীজটিতে লেখা শহীদ মোফাজ্জল হোসেন ওভার ব্রীজ থেকে নাম টি মুছে ফেলেছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সারা দিয়ে তিনিও মুক্তিযুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েন। তাকে স্মরণীয় করে রাখতে লালমনিরহাট শহীদ মিনারে অন্যান্য শহীদদের নামের সাথে তার নামটি রাখা হয় ৮ নাম্বারে।
পরবর্তীতে ১৯৭৩ সালে কাউনিয়া রেলওয়ে ষ্টেশনে শহীদ মোফাজ্জল হোসেন তোরণ এবং ১৯৭৯ সালে শহীদ মোফাজ্জল হোসেনকে স্মরণীয় করে রাখতে ওভার ব্রীজের নাম করণ করা হয় শহীদ মোফাজ্জাল হোসেন ওভার ব্রীজ। কিন্তু দীর্ঘ ৫০ বছর পর ওভার ব্রীজ টি সংস্কার ও রঙ করার সময় সেই নামটি মুছে ফেলে কাউনিয়া জংশন লেখায় উপজেলার বীর মুক্তিযোদ্ধা জনপ্রতিনিধি, সুধিজনসহ সর্বস্তরে নিন্দার ঝড় বইছে। কাউনিয়া মোফাজ্জল হোসেন মডেল সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আইয়ুব আলী বলেন, শহীদ মোফাজ্জল হোসেন নামটি কাউনিয়া উপজেলার গর্ব। ওভার ব্রীজ থেকে তার নাম মুছে ফেলায় আমি বিষ্মিত।
এ বিষয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা কোম্পানী কমান্ডার সরদার আব্দুল হাকিম বলেন, দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭৩ সালে জাতীয় চার নেতার একজন ক্যাপ্টেন মনছুর যিনি স্বরাষ্ট্র এবং যোগাযোগ মন্ত্রী ছিলেন তাকে দিয়ে কাউনিয়া রেলওয়ে ষ্টেশনের পশ্চিম পাশে শহীদ মোফাজ্জল হোসেন তোরণ উদ্ধোধন করা হয়। পরবর্তীতে ১৯৭৯ সালে রেলওয়ে ওভার ব্রীজটির নাম করণ করা হয় শহীদ মোফাজ্জল হোসেন ওভার ব্রীজ। একজন শহীদকে সম্মান দিয়ে তাকে স্মরনীয় করে রাখতে দীর্ঘ ৫০ বছর যে নামটি ব্যবহার হয়ে আসছে সেই নামটি যে মুছে ফেলেছে সে অবশ্যই স্বাধীনতার বিপক্ষের। তিনি রেলমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষন করে বলেন, যে ব্যক্তি শহীদ মোফাজ্জল হোসেনের নাম মুছে ফেলেছে তাকে খুঁজে বের করে দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির দাবী জানিয়েছেন তিনি । আগামী সাত দিনের মধ্যে পুনরায় শহীদ মোফাজ্জল হোসেনের নাম স্থাপনের দাবি জানান তিনি ।
কাউনিয়া রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার হোসনে মোবারকের এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন আমি কিছুই জানি না আমি নতুন এসেছি। তবে শহীদ মোফাজ্জল হোসেনের নামটি নথি পত্রে ছিল কিনা সে বিষয়ে খোঁজ খবর নেয়া হচ্ছে। তার নাম কেন মুছে ফেলা হল সেই বিষয়ে আমার উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।
বাংলাদেশ রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চল রাজশাহী জোনের সিএমই(পশ্চিম) আব্দুল মতিন চৌধুরী বলেন আমরা নাম পরিবর্তনের বিষয়টি খতিয়ে দেখছি কেন এরকম হলো। রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চল রাজশাহী জোনের অতিঃ সিএসটিই/পশ্চিম ও সিপিও/ পশ্চিম (অতিঃ দায়িত্ব) অসীম কুমার তালুকদারের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি।
শহীদ মোফাজ্জল হোসেনের দ্বিতীয় ছেলে ও সাবেক জাতীয় দলের ফুটবলার মোসাব্বের হোসেন বলেন আমার বাবা ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়কালে বাংলাদেশ রেলওয়ের লালমনিরহাটে চাকরীরত অবস্থায় পাকবাহিনীর ব্রাশ ফায়ারে নিহত হয়েছেন। কিন্তু তার স্মৃতি রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ্ই মুছে ফেললো এটা খুবই দুঃখ জনক বিষয়। আমাদের দাবি পুনরায় তার নামে ওভার ব্রীজের নামকরন করে আমার বাবার স্মৃতি ধরে রাখতে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ সহোযোগিতা করবেন।