জহির রায়হান কাউনিয়া (রংপুর)প্রতিনিধি ১ ডিসেম্বর ২০২৩ , ৪:৩০ অপরাহ্ণ প্রিন্ট সংস্করণ
এক সময়ে দেশে এলাকাভিত্তিক প্রচুর সুগন্ধি ধানের চাষের প্রচলন ছিল। কালো রঙ্গের এ ধান এখন আর তেমন চোখে পড়ে না। কেউ বলে ভোগ ধান, কেউ বলে কালোজিরা। আবার জামাই আদুরি ধান নামেও পরিচিত এ ধান। যে নামেই বলা হোক না কেন স্থানীয়ভাবে এর নাম ভোগ ধান। সেই জামাই আদূরী ধান কাউনিয়ায় এখন আর তেমন চোখে পড়ে না।
রংপুরের কাউনিয়ায় এক সময় বড় গৃহস্থরা এই পোলাউয়ের ধান চাষ করত। এই ধান দেখতে কালো এবং বেশ লম্বা। ধানের শীষ আশা থেকে শুরু করে কাটা পর্যন্ত মনোমুগ্ধকর সুগন্ধী ছিলো। গৃহস্থবাড়িতে মেয়ে জামাই আসলে সাধারনত জামাই আদুরী চাল রান্না করা হতো। এই চাল রান্না করলে তার সুগন্ধ চারদিকে ছড়িয়ে পড়তো, রাস্তা দিয়ে পথচারীরা সহজেই বুঝে নিতে পারতো ওই বাড়িতে পোলাও রান্না হচ্ছে। সুগন্ধী ও ছোট হওয়ায় পোলাও, বিরিয়ানি ও পায়েস রান্নায় এই ধানের চাল ব্যবহার করা হয়। বিশেষ করে বিভিন্ন উৎসব, পার্বণ ও অনুষ্ঠানে অতিথি আপ্যায়নে বেশি ব্যবহৃত হয়।
কৃষকরা তাদের নতুন বা পুরাতন জামাইকে দাওয়াত দিলে বা জামাই শ্বশুড় বাড়িতে বেড়াতে আসলে জামাই আদুরী চালের পোলাও খাওয়াতে না পারলে যেন পরিবেশনে অতৃপ্তি থাকতো। এখন সেই ধান আর আগের মতো চোখে পড়ে না। জামাই আদূরী ধানের স্থান দখল করে নিয়েছে উচ্চ ফলনশীল নানা জাতের ধান।
জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে কমে আসছে আবাদী জমির পরিমান তাই নতুন নতুন গবেষনায় আবিস্কৃত স্বল্প মেয়াদী উচ্চ ফলনশীল ধানের ভীড়ে বিলুপ্তির পথে আজ জামাই আদুরী ধান। উপজেলার শহীদবাগ খামারের হাট গ্রামের কৃষক সোলায়মান বলেন, চাহিদার প্রয়োজনে উচ্চ ফলনশীল ধানের কাছে হার মেনেছে পোলাউয়ের ধানের চাষ। কারন এই ধানের ফলন কম হয়।
তারপরও সে উচ্চ ফলনশীল আমন ধানের পাশাপাশি ১০শতক জমিতে পোলাউয়ের ধানের চাষ করেছেন ফলনও ভাল হয়েছে। কালোজিড়া বা জামাই আদুরী ধান উৎপাদন হয় একর প্রতি সবোর্”চ ১৫ থেকে ২০ মন তাই এসব ধানের আড়ালে হারিয়ে গেছে জামাই আদুরী ধান। কৃষকরা বলেন, একটা সময় ছিলো জামাই আদুরী ধান আবাদ না করলে প্রতিটি কৃষকের চাষাবাদে অতৃপ্তি থাকতো। কৃষকরা স্বীকার করেন জামাই আদুরী চালের স্বাদ আর বর্তমান বাজারে পাওয়া পোলার চালের স্বাদ এক নয়। উপজেলা কুষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শাহানাজ পারভীন জানান ওইসব ধান কাউনিয়া থেকে বিলুপ্ত প্রায় কারন উচ্চ ফলনশীল ধানের ফলন বেশী হওয়ায় কৃষকরা ওই ধান চাষে আগ্রহ হারিয়েছে। তবে আমন মৌসুমে সুগন্ধি ধানের উচ্চফলনশীল জাতের মধ্যে বিনা ধান-৯ ও বিনাধান-১৩ এবং স্থানীয় জাতের কাটারিভোগ, কালিজিরা, চল্লিশাজিরা, চিনিগুঁড়া, ফিলিপাইন কাটারী, চিনিকাটারী, চিনি আতপ, বাদশাভোগ, দুলাভোগ, কৃষ্ণভোগ উল্লেখযোগ্য। বিজ্ঞজন বলছেন ধানের ঐতিহ্য জামাই আদূরী ধান চাষে পূণরায় কৃষকদের আগ্রহ বাড়াতে সরকারের পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।