সারাদেশ

কু‌ড়িগ্রাম টি‌টি‌সি অধ‌্যক্ষের কুকী‌র্তি: হুম‌কি দি‌য়ে আয়া‌কে বাধ‌্য কর‌তেন অধ‌্যক্ষ!

  এস এম রাফি,কুড়িগ্রাম ২৩ জানুয়ারি ২০২৫ , ৯:২৬ অপরাহ্ণ প্রিন্ট সংস্করণ

আয়াকে হুমকি দিয়ে অনৈতিক কাজে বাধ্য করাতেন কুড়িগ্রাম কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের (টিটিসি) অধ্যক্ষ প্রকৌশলী মো. আইনুল হক।
এমন অ‌ভি‌যোগ তু‌লে আয়ার স্বীকা‌রো‌ক্তির এক‌টি অ‌ডিও ফাঁস হ‌য়ে‌ছে। অ‌ডিও রেক‌র্ডের এক পর্যা‌য়ে আয়া‌কে বল‌তে শোনা যায়, অধ‌্যক্ষের সা‌থে অ‌নৈ‌তিক কাজ না কর‌লে চাকরি থেকে বাদ দিতে হুমকি দেয়া হয়। রেকর্ড ফাঁসের পর এখন জেলা জুড়ে সমালোচনা শুরু হয়েছে।

টিটিসি সুত্রে জানা গেছে, দেড় থেকে দুই বছর আগে ভুক্তভোগী ওই আয়া কুড়িগ্রাম টিটিসিতে কর্মরত ছিলেন। অধ্যক্ষের সঙ্গে অনৈতিক কাজের বিষয়টি প্রকাশ হলে পারিবারিক কলহের সৃষ্টি হয়। তখন তিনি কাজ ছেড়ে দিয়ে অন্যত্র চলে যান।

ফাঁস হওয়া অডিও রেকর্ডটি এ প্রতিবেদকের হাতে এসেছে।

ফাঁস হওয়া ওই অডিওতে ভুক্তভোগী নারী বলেন, আমার নাম……….. আমার স্বামী কুড়িগ্রাম টিটিসেত চাকরি করতো। ওর নাম ……….. আমি আমার স্বামী, আমার দেবর বোন সবাই আমরা কুড়িগ্রাম টিটিসে চাকরিতে যোগদান করেছিলাম। অন্যান্য মেয়ের তুলনায় হয়তো আমি একটু বেশি সুন্দর তাই আমি স্যারের( অধ্যক্ষ) তার চোখে লেগেছি আমার উপর।

সে আমাকে ফোন দিয়ে বলতো তুমি মনে করো আমার ছোট বোন। আমি হোস্টেলে কাজ করতাম। তিনি মাঝে মাঝে ফোন করে আমার খাওয়া দাওয়ার খোজ নিত। যখন তখন ফোন দিত আমাদের স্বামী স্ত্রীর মাঝেও যখন তখন কল দিত। রাত ১২ টা নাই ১ টা নাই২ টা নই যখন তখন কল দিত। যখন তিনি কোয়াটারে থাকত। যখন তিনি অফিস কোয়াটারে থাকত তখন কল দিত যখন লালমনিহাটে থাকতো তখন কল দিত না।

তখন বাচ্চা পেটে ছিলো প্রিন্সিপাল স্যার বলে তোমার চেহারাটা অনেক টুসটুসে তোমার …… অনেক সুন্দর। তুমি যা চাও তোমাকে তাই দেবো। তুমি যদি স্বর্গের চাঁদটা চাও সেটাও তোমার হাতে এনে দিব। কিন্তু এ কথাটা বলা যাবে না। তুমি মনে করো তুমি আমার সাথে রিলেশন করতেছো। আমরা একে অপরকে ভালোবাসবো আদর করবো।

আমি বলতাম স্যার শোনেন আপনি বললেন আপনি আমার বড় ভাই। বড় ভাই হয়ে এগুলো কথা বলে । তখন তিনি বলেন আচ্ছা ঠিক আছে আর বলবো না। দু দিন পর তিনি আমাকে কোয়াটারের দুই তালায় ডাকেন। ডেকে বলেন বিছানাটা ঠিক করে দাও, আমি যখন বিছানাটা ঠিক করছিলাম তখন তিনি আমার ওড়না টান দিয়ে ধরে পরে রাগ হয়ে চলে এসছি।

পরে ও ( অধ্যক্ষ আইনুল) কোয়াটারে তার মার দেখা শোনার জন্য আমোকে রেখে দিলো। বলতো নাস্তা বানায় দাও। দিতাম নাস্তা বানায় বলতো পাশে বসো। ওনার ছেলে মেয়ে সবাই লালমনিরহাটে থাকতো।

যখন তখন যেটা সেটা আবদার করতো মনে হয় আমি ওর ঘরের বউ। আমার স্বামীর সাথেই আমাকে থাকতে দিত না বলতো আমার মায়ের সাথেই থাকো। তোমাকে চাকরি ফলো করতে হবে। হাসবেন্ড বেশি না । চাকরি বেশি। হুমকি দিত। ৩ মাস স্বামীর কাছে যাইতে দেয় নি।
রাতে তিনি হুট করেই চলে আসে। রান্না ঘরে হুট করে ঢোকে। পরে কোয়াটারের থাকলাম না। পরে অফিসে দিল। কাজ করাতো কোয়াটারের দু তালায়। একদিন তিনি দু তালায় ফাইল লুকিয়ে রেখে আমাকে পাঠায়। আমি ফাইল আনতে গেল দরজা লাগিয়ে দিয়ে নানা খারাপ ব্যবহার করতে থাকে। পরে আমি বললাম কেন স্যার আপনি আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করছেন।

তিনি (অধ্যক্ষ) বললেন তুমি যদি আমার ইচ্ছে পূরণ না করো, তাহলে তোমার পরিবারের সবাইকে চাকরি থেকে বাদ দিয়ে দিবো। হুমকি দিলো। তারপরও মেনে নেই নি। নানা কাহিনী করছে কিন্ত ঐ দিকে যাইতে পারেনি। আমাকে ছুটি দিলো ১০ দিন । পরে আমাদের পরিবোরের সবাইকে চাকরি থেকে বের করে দিলো।

একদিন রাত ৭:৩০ মিনিটে তিনি কল দিয়ে বললো তুমি কোথায় বললাম শ্বশুর বাড়িতে। তথন তিনি বললেন যদি তুমি চাকরি করতে চাও সবার যদি চাকরি। তাহলে এখনই চলে আসো কোয়াটারে। তিনি বললেন আমার সাথে এগুলো এগুলো করতে হবে……… তখন আমি বললাম পাবোনা আপনার কথা শুনতে – তিনি বললেন কেন শুনবানা শুনতে হবে তোমাকে। — উনি নানা জেদ জুলুম করলো করার পর আমাকে হুমকি দিলো।

তারপর ওনার সাথে আমার ভুলটা হলো। ……. উনি আমার সাথে মেলামেশা করলো। করার পরের দিন আমাকে আমার মেয়ের জন্য ৪০০ টাকা দিয়ে বললো মেয়ের জন্য বায়োমিল কিনে নিও। পরের দিন আবার ডেকে ৭২ ঘন্টা সময়ের একটি ওষুধ খাওয়ালো। পরে ২ হাজার টাকা দিয়ে বললো শরীরের যত্ন নাও , কাল থেকে চাকরিতে জয়েন করো। আরে বললো এভাবেই যখন তোমার আমার লাগবে ভালোবাসবো আদর করবো। যদি কথা না শোন যা আছে সব নেটে ছেড়ে দিবো।

অধ্যক্ষের সাথে সম্পর্কের বিষয়ে জানতে চাইলে তার সাবেক স্বামী অধ্যক্ষের সাথে সম্পর্কের কথা স্বীকার করে বলেন, অধ্যক্ষের সাথে তার অনেক সম্পর্ক ছিলো আমি এই বিষয়ে বিস্তারিত বলতে চাই না। অনেক কালারিং হইছি। অনেক সাংবাদিক আসছিলো কিন্তু এলাকার লোকত আমাকে কিছু বলতে দেয় নাই। তখন যদি আমি বলতাম তখনই তার ব্যবস্থা হইতো।

ফাঁস হওয়া অডিওর বিষয়ে জানতে কুড়িগ্রাম কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের (টিটিসি) অধ্যক্ষ প্রকৌশলী মো. আইনুল হকের ফোন নাম্বারে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেনি। পরে তার নাম্বারে হোয়াটসঅ্যাপে ক্ষুদে বার্তা দিলেও কোনো উত্তর মেলেনি।