শিক্ষা

কুয়েটের স্বৈরাচারী ভিসির পদত্যাগসহ কর্তৃত্ববাদী প্রশাসনকে ৩ দফা দাবি ছুড়ে দিলো রুয়েট শিক্ষার্থীরা

  রুয়েট প্রতিনিধি ১৫ এপ্রিল ২০২৫ , ১০:০০ অপরাহ্ণ প্রিন্ট সংস্করণ

খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) শিক্ষার্থীদের ওপর প্রশাসনিক নিপীড়ন, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মিথ্যা মামলা এবং শিক্ষার্থী বহিষ্কারের প্রতিবাদে রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদী কর্মসূচি পালন করেছেন।

আজ সোমবার (১৫ এপ্রিল) বিকেল ৫টায় রুয়েট শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে এই কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। কর্মসূচির অংশ হিসেবে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সম্মিলিত অংশগ্রহণে এক মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়।

আয়োজকদের ভাষ্যমতে, “আমাদের আজকের এই প্রতিবাদী সমাবেশ কুয়েটের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে। আপনারা জানেন, কিছুদিন আগে কুয়েটের নিরীহ শিক্ষার্থীদের ওপর সন্ত্রাসী হামলা চালানো হয়, কিন্তু প্রশাসন নীরব দর্শকের ভূমিকা নেয়। রাজনৈতিক কারণে সংঘটিত এ ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে ২২ জন নিরপরাধ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করা হয়। পরবর্তীতে শিক্ষার্থীদের হল ছাড়তে বাধ্য করা হয়, হলের বিদ্যুৎ-পানি-ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ করে দিয়ে। কিছুদিন পর এর প্রতিবাদ স্বরুপ শিক্ষার্থী হলে উঠার ঘোষণা দিলেও প্রশাসন হল খুলতে অস্বীকৃতি জানায়। খোলা আকাশের নিচে রাত কাটাতে বাধ্য করা হয়, যা স্পষ্ট প্রশাসনিক নিপীড়ন।”

তারা আরো জানান, “সর্বশেষ কুয়েটের ১০১তম সিন্ডিকেট সভায় যে ৩৭ জন শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়েছে, এর মধ্যে ২৫-২৭ জন সাধারণ শিক্ষার্থী, যাদের কেউ কোনো রাজনৈতিক দলের সাথে জড়িত নয়। এমনকি এই তালিকায় ২-৩ জন মেয়েও থাকতে পারে! অথচ ছাত্রদলের সদস্য বলে অভিযুক্তদের বহিষ্কারের সংখ্যা মাত্র ১০-১২ জন। তাহলে প্রশ্ন জাগে, কারা আসলে টার্গেট হলো? কারণ পরিষ্কার — কুয়েট প্রশাসন একটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, ক্ষমতাকেন্দ্রিক এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে। শেখ হাসিনার সরকার যেভাবে ভিন্নমত দমন করে, কুয়েট প্রশাসনও ঠিক সেই পথে হাঁটছে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের গায়ে ‘অপরাধী’ তকমা লাগিয়ে ক্যাম্পাস থেকে দূরে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। কোনো স্বচ্ছ তদন্ত ছাড়াই, কোনো ন্যায়বিচার ছাড়াই।”

মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারী রুয়েট সিএসই বিভাগের(২০ সিরিজ) শিক্ষার্থী রাকিবুল হাসান নূর বলেন,”গত ১৮ ফেব্রুয়ারি কুয়েট শিক্ষার্থীদের উপর বর্বরোচিত হামলা করা হয়েছে। এরপর যাদের উপরেই হামলা করা হয়েছিল, তাদের নামেই মামলা দেয়া হয়েছে। স্বর্ণ চুরি সহ, চুরির মতো আরো মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছে। আমরা অনতিবিলম্বে দাবি জানাই, যারা নির্দোষ তাদের উপর থেকে মামলা তুলে নিতে হবে।”

আজকের সমাবেশের সঞ্চালক মেহরান আল বান্না ইউশা (রুয়েট যন্ত্রকৌশল বিভাগ: ২০ সিরিজ) বলেন,”দেশব্যাপী যেখানেই স্বৈরাচার জেঁকে বসবে এবং জুলুম হবে,আমরা ইনসাফকারীদের পক্ষে থাকবো। কুয়েট শিক্ষার্থীদের বহিষ্কারাদেশ নিয়ে ধোয়াশা নিয়ে আমরা আশঙ্কা করি,আন্দোলনকারীদের দমানোর জন্য এবং ভীতসন্ত্রস্ত করতে এহেন কাজ করা হচ্ছে। কুয়েট প্রশাসন যদি নতুন একটি হাসিনার জন্ম দিতে চায়,তাহলে তারা বোকার স্বর্গে বাস করছে। কুয়েটের কোনো শিক্ষার্থীর উপর কোনরূপ প্রহসনের দাঁতভাঙ্গা জবাব দিতে ছাত্রসমাজ প্রস্তুত রয়েছে।দলকানা ভিসি মাসুদের পদত্যাগের দাবির সাথে রুয়েট শিক্ষার্থীরা সংহতি প্রকাশ করছি।”

এছাড়াও আলামিন ইসলাম রকি (রুয়েট পুরকৌশল বিভাগ: ২০ সিরিজ) বলেন,”কুয়েট সহ সকল বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন ধরনের গোপন বা প্রকাশ্য ছাত্র রাজনীতি থাকা যাবে না। কারো রাজনীতি করার ইচ্ছা থাকলে সে ক্যাম্পাসের বাহিরে রাজনীতি করতে পারবে। কিন্তু ক্যাম্পাসের ভিতরে ছাত্র রাজনীতির কোন ঠাঁই হবে না।”

এ সময় রুয়েট যন্ত্রকৌশল বিভাগের(২২ সিরিজ) শিক্ষার্থী রিফাত বলেন,”কুয়েটের ভিসি অন্যায় ভাবে ছাত্রদের হল খালি করায় শিক্ষার্থীদের আস্থা হারিয়েছেন । তাই তার নৈতিক দিক বিবেচনায় ক্যাম্পাসের ভিসি থাকার যোগ্যতা নেই। এমতাবস্থায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের অনাস্থার পাত্র হওয়ায় তাকে অনতিবিলম্বে পদত্যাগ করতে হবে। তা না হলে সারা বাংলাদেশে নব্য ফ্যাসিবাদের বিপক্ষে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।”

আরেক শিক্ষার্থী আরিফ হাসান (রুয়েট আইপিই: ২১ সিরিজ) বলেন,”হাসিনার পতনকে যদি কেউ শুধুমাত্র ক্ষমতার হস্তানতর ভাবে এবং তার মতো স্বৈরাচারী আচরণ শুরু করে তাহলে ইতিহাস থেকে তাদের আরো শিক্ষা নেওয়া উচিত।”

এই প্রতিবাদ কর্মসূচির আয়োজন করা রুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীরা কুয়েটের শিক্ষার্থীদের এক দফা দাবি (কুয়েট ভিসির পদত্যাগ) এর সাথে সম্পূর্ণ একমত পোষণ করেছেন। এরই সাথে তারা আরো তিনটি দাবি তুলে ধরেছেন। দাবি গুলো হলো:

• কুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপর থেকে মিথ্যা মামলা ও বহিষ্কার অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে।

• কুয়েট প্রশাসনের স্বৈরাচারী সিন্ডিকেট সিদ্ধান্ত বাতিল করতে হবে।

• শিক্ষার্থীদের মত প্রকাশ ও প্রতিবাদের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।

কুয়েটের এই বাস্তবতায় সত্য বলা বা প্রতিবাদ করাই আজ অপরাধ, যা ভবিষ্যতে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়েও ঘটতে পারে যদি এখনই প্রতিরোধ না গড়ে তোলা হয়, অভিমত উপস্থিত শিক্ষার্থীদের। শিক্ষার্থীদের অধিকার রক্ষায় ভবিষ্যতেও এমন কর্মসূচি অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন রুয়েট শিক্ষার্থীরা।