সারাদেশ

কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সড়কে অনিয়মিত ড্রাম ট্রাক চলাচলে হুমকির মুখে সড়ক

  এস এম রাফি ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৩ , ৫:৪২ অপরাহ্ণ প্রিন্ট সংস্করণ

সরকারের কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সড়কে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে অভিরত বালুভর্তি ড্রাম ট্রাক চলাচলে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে সড়ক ও মহাসড়ক গুলো।

মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার সড়ক ও জনপথের আন্তঃ সড়কসহ এলজিইডি ও গ্রামীন সব কাঁচা রাস্তা দিয়ে অনিয়মিতভাবে অসাধু ব্যবসায়ীদের বালুভর্তি বড় বড় ড্রাম ট্রাক,মিনি ট্রাক ও মাহিন্দ্র চলাচলে সড়কগুলো এপাশ ওপাশ ভেঙ্গে ও ছাত দেবে গিয়ে যাতায়াতের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। অনেক সড়কের এমন বেহাল দশার কারণে সাধারণ পথচারীদের চলাচল একেবারেই দুষ্কর হয়ে পড়েছে। সারাক্ষণ বালুভর্তি ড্রামট্রাক ও মাহিন্দ্র চলাচলের কারণে ধুলোয় অতিষ্ঠ উপজেলার সব অঞ্চলের মানুষ। অসহ্য ধুলার কারণে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন অনেকে। সড়কে ধুলাবালি এতই বেশি যে একটা ট্রাক গেলে সামনে আর কিছুই দেখা যায় না। ট্রাক চলাচলের কারণে ঘন ধুলাবালিতে দিনকে যেন রাত বলে মনে হয়। প্রতিনিয়ত সরু রাস্তায় বালুভর্তি এসব ড্রাম ট্রাক চলাচলে অন্যান্য যানবাহনও চলাচল করতে না পেরে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়ে ভোগান্তিতে পড়ছে অন্যান্য শত শত যানবাহন। এমনকি মাঝে মধ্যে দুর্ঘটনায় শিকার হয়ে অনেককে পঙ্গুত্ব বরণ করতে হচ্ছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়,ড্রেজার দিয়ে পদ্মানদী থেকে বালু তুলে শিমুলিয়া ও মাওয়া ঘাটে ৮-১০টি পয়েন্টে কৃষি জমিতে স্তূপাকারে রেখে বেআইনিভাবে ব্যবসা চালাচ্ছে মাওয়া এলাকার আবু বক্কর, চুন্নু মেম্বার, জহের ফকির, মতি মাদবর ও হাশেমসহ আরো অনেকেই। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের পরিচয় দিয়ে স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা এসব ব্যবসার পরিচালক। দীর্ঘদিন ধরে তারা এ ব্যবসা করে আসছে এবং বালুভর্তি খোলা ড্রাম ট্রাকগুলো মাওয়া ও শিমুলিয়া ঘাট এলাকা থেকে ভর্তি করে বঙ্গবন্ধু এক্সপ্রেসওয়ে হয়ে শ্রীনগর উপজেলা মাশুরগাঁও গোয়ালীমান্দ্রা সড়ক, শ্রীনগর দোহার আন্তঃ সড়ক,শ্রীনগর গাদিঘাট সড়ক,শ্রীনগর আরধীপাড়া সড়ক, বেজঁগাঁও তন্তর সড়ক, কল্লিগাঁও বাড়ৈগাঁও সড়ক, ষোলঘর বীরতার সড়ক, কেয়টখালী ছয়গাঁও সড়ক, হাসাড়া সাতগাঁও সড়ক, হাসাড়া বাড়ৈখালী সড়ক, সমষপুর কোলাপাড়া হয়ে তিনদোকান সড়ক, মাওয়া বালাশুর সড়কসহ আরো অনেক সড়ক দিয়ে দাপিয়ে চলছে বালু ভর্তি এসব ড্রাম ট্রাক। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের এ নিয়ে কোনো ‘মাথাব্যথা’ নেই।
কুশুরীপাড়া এলাকার স্থানীয বাসিন্দা মোকাজ্জল হোসেন জানান, সড়কগুলো এখন বালু ব্যবসায়ীদের দখলে। বালুভর্তি খোলা ট্রাক বেপরোয়া চলাচলে শিক্ষার্থীদের জীবনের ঝুঁকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

স্থানীয় পল্লী চিকিৎসক নুর আলম সিকদার জানান, বালুভর্তি ট্রাকের অবাধ চলাচলে শিক্ষার্থীসহ পথচারীদের নাকে মুখে ধুলা ঢুকে শ্বাস কষ্ট, যক্ষা, হাঁপানী, চোখের সমস্যা, সর্দি ছাড়াও বিভিন্ন রোগের সৃষ্টি হচ্ছে।

পথচারী রায়হান ও তুহিন বলেন, এ সড়কগুলোতে খোলা ট্রাকে বালু বহন করা পরিবেশের জন্য হুমকি এবং মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর। সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের পদক্ষেপ নেয়া জরুরি বলে আমরা মনে করি।

একাধিক ভ্যানচালক ও অটোরিক্সা চালক বলেন, সব সড়ক গুলোতে ড্রাম ট্রাক চলাচলে প্রচণ্ড ধুলায় আমরা অতিষ্ঠ। মাঝে মাঝে ধুলা বালি কমাতে সড়কে পানি দেয় তখন কাদায় পরিণত হয়। এতো কাদা হয় যে তখন আমরা অটোগাড়ি চালাতে পারি না। এসব ড্রাম ট্রাক ও মাহিন্দ্রের কারনে আমরা অটো চালকরা যাত্রী নিয়ে চলাচল করতে পারি না। চলতে গেলে রাস্তায় ড্রাম ট্রাক এসে পড়লে আমরা সাইড দিতে গিয়ে অটোরিক্সা, ভ্যান উল্টে ডোবায় পড়ে গিয়ে আহত হই এবং আমাদের গাড়ি গুলো ক্ষতিগ্রস্থ হয়। তাছাড়া আমাদেরকেই সাইড দিতে হয় কারন তাদের গাড়ি বড় তাই তারা রাস্তার সাইডে নামাতে পারে না। আবার অনেক ড্রাম সাইডে নামাতে গিয়ে রাস্তা ভেঙ্গে ফেলে।

বিভিন্ন রাস্তার পাশের দোকানদাররা বলেন, রাস্তায় ড্রাম ট্রাক চলাচলে ধুলার কারণে দোকানে বসে থাকা কষ্টকর হয়ে পড়েছে। ক্রেতারা দোকানে এসে এক মূহুর্ত দাড়াঁতে চায় না। ফলে ব্যবসায় ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। ভুক্তভোগীরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জরুরি পদক্ষেপ কামনা করেন।

এব্যাপারে জানতে বরাবরের মত উপজেলা প্রকৌশলী মোঃ মহিফুল ইসলাম এর মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। এছাড়াও তাকে কখনও অফিসে কিংবা মোবাইল ফোনে পাওয়া যায় না। তিনি সংবাদকর্মীদের ফোন নাম্বার দেখলেই ফোন রিসিভ না করে কেটে দেন।

সড়ক ও জনপথের প্রকৌশলী মোঃ শহিদুল ইসলাম বলেন,বালু ভর্তি ট্রাক ছত্রতত্র লোড আনলোড করার কারনে রাস্তার ক্ষতি হচ্ছে। এবিষয়ে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহন করা হবে।