এস এম রাফি ১৯ এপ্রিল ২০২৩ , ৯:৪৯ অপরাহ্ণ প্রিন্ট সংস্করণ
সদরুল আইনঃ
আওয়ামী লীগের মধ্যে থেকে যারা ক্ষমতার অপব্যবহার করছে, দুর্বৃত্তায়ন, দুর্নীতিসহ নানারকম অপকর্মের সঙ্গে জড়িত তাদের চিহ্নিত করা হচ্ছে এবং তাদের বিরুদ্ধে একাধিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।
ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগের দুর্বৃত্ত, সুবিধাবাদী, হাইব্রিড অনুপ্রবেশকারী, সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, ধর্ষক সহ বিভিন্ন ধরনের অপকর্মের সঙ্গে যুক্তদের তালিকা তৈরি করা হয়েছে।
এই তালিকায় অন্তত পাঁচ হাজার ব্যক্তির নাম রয়েছে সারা দেশে। এদের বিরুদ্ধে খুব শিগগিরই সাঁড়াশি অভিযান শুরু হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
২০১৮ সালের নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলের ভিতরে একটি শুদ্ধি অভিযান পরিচালনা করেছিলেন। ওই শুদ্ধি অভিযানে ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট সহ একাধিক নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।
অনেক শীর্ষ নেতা দলীয় পদ হারিয়েছেন। অনেক অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের শীর্ষ নেতারাও দলীয় পদ হারান। বেশ কিছু ব্যক্তিকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল।
কিন্তু পরবর্তীতে এই শুদ্ধি অভিযান অভিযান আর বেশিদূর এগোয়নি।
প্রধানমন্ত্রী ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে নিউইর্য়কে বলেছিলেন যে অন্যদের শুদ্ধি অভিযান করতে হবেনা, আমরাই শুদ্ধি অভিযান করব। কিন্তু সেই শুদ্ধি অভিযান মাঝ পথে থমকে গিয়েছিল কেন সেটি অনেকেই জানেন না। এখন নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ তার ইমেজ পুনরুদ্ধারের মিশনে নেমেছে। আর ইমেজ পুনরুদ্ধার করার জন্য নতুন করে শুদ্ধি অভিযান শুরু করছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে যে এমপিদের বিরুদ্ধে অভিযানে পাঁচ রকমের শাস্তির ব্যবস্থা করা হচ্ছেঃ
প্রথমত, যারা অতিরিক্ত অপরাধ প্রবণ, যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে এবং যারা ফৌজদারী অপরাধের সঙ্গে যুক্ত এরকম ব্যক্তিদেরকে আইনের আওতায় আনা হবে এবং সরাসরি দল থেকে বহিষ্কার করা হবে। এদের ব্যাপারে কোনো রকম ছাড় দেওয়া হবে না।
দ্বিতীয়ত, যে সমস্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে কিন্তু অভিযোগগুলো প্রমাণিত নয় তবে তাদের আচার-আচরণ, কর্মকাণ্ড ইত্যাদি সন্দেহজনক।
এদেরকে সতর্ক করা হবে এবং ভবিষ্যতে যেন তাদের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ না ওঠে এবং এ ধরণের কর্মকান্ড থেকে যেন তারা দূরে থাকে এটি তাদেরকে জানিয়ে দেয়া হবে।
তৃতীয়তঃ সরকারের যে সমস্ত মন্ত্রী-এমপির বিরুদ্ধে দুর্নীতি, সন্ত্রাসীদের প্রশ্রয় দেওয়া, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে তাদেরকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মনোনয়ন দেয়া হবে না এবং এই সমস্ত ব্যক্তিরা যেন নির্বাচনে ভূমিকা রাখতে না পারে তা নিশ্চিত করা হবে।
চতুর্থত, যে সমস্ত এমপিরা দলের বিভক্তি সৃষ্টি করছে, দলের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে এবং যাদেরকে কারণে দলের ভেতর নানারকম সংঘাত এবং কোন্দল হচ্ছে তাদেরকে ডেকে সতর্ক করা হবে এবং ভবিষ্যতে যেন তারা এ ধরনের কর্মতৎপরতার সঙ্গে যুক্ত না হয় সে ব্যাপারে নিশ্চিত করা হবে।
পঞ্চমত, যারা কেন্দ্রীয়ভাবে বিভিন্ন রকম অপরাধ প্রবনতার সাথে জড়িত সেই সমস্ত কেন্দ্রীয় নেতাদের নিষ্ক্রিয় করে রাখা হবে। আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো বলছে, নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ একদিকে ক্লিন ইমেজ দিতে চায়।
নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ একটি বার্তা জনগণকে দিতে চায় যে অপরাধী সন্ত্রাসী যেই হোক না কেন তাকে আওয়ামী লীগ আশ্রয় প্রশ্রয় দেয় না।
আওয়ামী লীগের একজন দায়িত্বশীল নেতা বলেছেন যে এবারের সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের মনোনয়নের ক্ষেত্রে শেখ হাসিনা এই বার্তাটি দিয়েছেন। তিনি সাদিক আব্দুল্লাহকে বাদ দিয়ে জানিয়েছেন যে যারা অপরাধ করে, যাদের ইমেজ ভালো না তাদেরকে আওয়ামী লীগ আশ্রয় প্রশ্রয় দেয় না।
আর এই প্রভাব নির্বাচনের ওপর পড়বে। সেক্ষেত্রে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রায় অর্ধেক আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী পরিবর্তন হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
তবে শুধুমাত্র এমপি নয় বরং বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদেরকেও শুদ্ধি অভিযানের আওতায় আনা হবে বলে আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে।