এস এম রাফি ১ এপ্রিল ২০২৩ , ১১:৫৩ পূর্বাহ্ণ প্রিন্ট সংস্করণ
স্তন্যপায়ী প্রায় সকল প্রাণীর জন্ম প্রক্রিয়া একই হলেও কিছু প্রাণীর ক্ষেত্রে জন্মপরবর্তী নিবিড় যত্ন দরকার হয়। আমাদের দেশে ঘাস আর খড়ের উপর নির্ভর করে পালন করা দেশি গরুর বাছুরের জন্ম পরবর্তী জটিলতা হতো না বললেই চলে কারণ একদিকে গর্ভাবস্থায় গরু যেমন পর্যাপ্ত পরিমাণ পুষ্টিকর ঘাস পেতো আবার অন্যদিকে গরু ছিল সব জাতের। কিন্তু বর্তমান বাস্তবতায় বিদেশি ক্রস জাতের গাভী এবং বাছুরের জন্য জন্মপরবর্তী নিবিড় পরিচর্যা জরুরি। যে কোন প্রাণী ভূমিষ্ঠ হওয়ার পরে খুব অসহায় অবস্থায় থাকে এবং পরিচর্যার মাধ্যমে তাকে সুস্থ সবল করে তুলতে হয়। জন্মপরবর্তী পরিচর্যার উপরেই একটা বাছুরের ভবিষ্যৎ অনেকাংশে নির্ভরশীল। একটা বাছুরের যত্ন প্রধান করণীয় পর্যায়ক্রমিক কিছু কাজ রয়েছে। সেগুলো নিম্নরূপে বিস্তারিত আলোচনা করা হল।
প্রাথমিক পরিচর্যা ও যত্ন বাছুরের জন্মের পরপরই পরিষ্কার ব্লেড দিয়ে নাভি কেটে শক্ত করে বেঁধে দিতে হবে। কাটার পর স্থানটিতে টিংচার আয়োডিন বা টিংচার বেনজিন জাতীয় জীবাণুনাশক ওষুধ লাগাতে হবে। এর ফলে রোগজীবাণু প্রবেশ করতে পারবে না। বাচ্চা প্রসবের পরপরই বাচ্চার নাক ও মুখের লালা ও ঝিল্লিই পরিষ্কার করে দিতে হবে নতুবা শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মারা যেতে পারে। যদি বাছুর প্রসব হওয়ার পর শ্বাস-প্রশ্বাস না নেয় তাহলে কৃত্রিম উপায়ে শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যবস্থা করতে হবে। বাছুরের বুকের পাঁজরের হাড়ে আস্তে আস্তে কয়েকবার চাপ দিয়ে শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক করা যায় এছাড়া বাছুরের নাকে-মুখে ফুঁ দিয়েও শ্বাস-প্রশ্বাস চালু করা যায়। বাছুরের নাক মুখ পরিষ্কারের পর গাভীর সামনে শুকনো খড় বিছিয়ে রাখলে গাভী চেটে বাচ্চার গা পরিষ্কার করে দেয়। এরপর শুকনো নরম খড়,কাপড় অথবা চট দিয়ে বাছুরের গা ভালো করে পরিষ্কার করে দিতে হবে। শীত বা অতিরিক্ত ঠান্ডা শুকনো কাপড় বা চট দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। অথবা আগুন জ্বালিয়ে বাছুরের শরীর গরম রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। সুস্থ-সবল বাছুর জন্মের ১৫ মিনিট পর থেকেই উঠার চেষ্টা করে এবং দুধ খেতে সক্ষম হয়। অনেক সময় নিজের চেষ্টায় দাঁড়াতে ও দুধ খেতে পারে না। এ অবস্থায় বাছুরকে দাঁড়াতে ও দুধ খাওয়াতে সাহায্য করতে হবে। প্রসবের ১-২ ঘণ্টার মধ্যে তার মায়ের শালদুধ খাওয়াতে হবে। যদি বাছুর দুর্বলতার কারণে দাঁড়াতে বা দুধ খেতে না পারে তবে বোতলে নিপল লাগিয়ে দুধ খাওয়াতে হবে।
সদ্যজাত বাছুরের বাসস্থান ব্যবস্থাপনা বাছুরের জন্য উপযুক্ত বাসস্থান প্রয়োজন। স্বাস্থ্যসম্মত বাসস্থান বাছুরকে রোগমুক্ত রাখার প্রধান সহায়ক। রোগমুক্ত রাখার জন্য তাদেরকে পৃথক করে রাখতে হবে এবং এর ফলে প্রতিটি বাছুরের রক্ষণাবেক্ষণ সহজতর হয়। অনেক বাছুর একসাথে থাকলে দুর্বল বাছুরগুলো সবল বাছুরদের সাথে প্রতিদন্ডীতা করে প্রয়োজনমাফিক খাবার খেতে পারে না এবং আরও দুর্বল হয়ে পড়ে। বাছুরের ঘর ঢালু এবং শুকনো ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হওয়া ভালো। বাসস্থানে আলো-বাতাস সরাসরি প্রবেশের ব্যবস্থা থাকা উচিত। গ্রীষ্মকালে প্রচন্ড গরম এবং শীতকালে প্রচন্ড ঠান্ডা দ্বারা বাছুরগুলো যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। ঘরের মেঝেতে শুকনো খড় বা ছালার চট বিছিয়ে রাখা যেতে পারে। প্রতিটি বাছুরের জন্য ৪ ফুট দ্ধ ২ ফুট মাপের ঘরের প্রয়োজন। গ্রামীণ পর্যায়ে বাঁশ ও কাঠের সাহায্যে অতি সহজে ঘর নির্মাণ করা সম্ভব। ঘরে খাদ্য ও পরিষ্কার পানি সরবরাহ করার জন্য পাত্র রাখতে হবে।
খাদ্য ব্যবস্থাপনা জন্মের পরপরই মায়ের শালদুধ খাওয়াতে হবে। অনেক বাছুরকেই জন্মের পরে পর্যাপ্ত শালদুধ খাওয়ানো হয় না ফলে বছরের মধ্যে সঠিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা জন্মায় না। দুধ খাওয়ানোর নিয়ম হলো দৈনিক প্রতি ১০০ কেজি ওজনের জন্য ১০ কেজি অর্থাৎ ২০ থেকে ২৫ কেজি ওজনের জন্য দৈনিক ১.২ থেকে ১.৫ কেজি দুধ খাওয়াতে হবে। অবশ্যই আধা ঘণ্টা থেকে এক ঘণ্টার মধ্যে খাওয়ানো শুরু করা উচিত। এই দুধ খাওয়ালে বাছুরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। বাছুরকে নিয়মিত গাভীর দুধ খাওয়াতে হবে অন্যথায় মিল্ক রিপ্লেসার এর মাধ্যমে প্রয়োজনীয় পুষ্টিরমান নিশ্চিত করতে হবে।
অন্যান্য সতর্কতা সদ্যজাত বাছুরকে পানি দিয়ে ধৌত করা সমীচীন হবে না কারণ পানির সংস্পর্শে আসলে ঠান্ডা লেগে যেতে পারে এবং নানা ধরনের রোগের উপসর্গ দেখা দিতে পারে। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে সংকর জাতের বাছুরের প্রায় ৪০ ভাগই যথাযথ যত্নের অভাবে মারা যায় ফলে খামারি আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হন। এজন্যই খামারিকে সদ্যজাত বাছুরের যত্ন ও পরিচর্যার প্রতি বিশেষভাবে নজর দেওয়া উচিত।
গবাদি প্রাণীর রোগবালাই যথাযথ হয়ে থাকে। চিকিৎসার ব্যবস্থা করাও জরুরি।
#উপসহকারী প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা সিলেট সদর সিলেট।