সদরুল আইন, স্টাফ রিপোর্টার ২০ ডিসেম্বর ২০২৩ , ৮:৪৯ পূর্বাহ্ণ প্রিন্ট সংস্করণ
আওয়ামী লীগের দূর্গ হিসেবে সুপরিচিত গাজীপুরের ৫ টি আসনেই এবার নৌকার প্রার্থিরা আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থিদের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে নাস্তানাবুদ হচ্ছেন।
নৌকাপ্রাপ্ত কোন প্রার্থিই সুনিশ্চিতভাবে দাবি করার সুযোগ নেই যে সে নিশ্চিতভাবে নির্বাচনী বৈতরণী উৎরে যেতে পারবেন।তবে গাজীপুরের ৫ টি আসনের মধ্যে গাজীপুর-১,২,৩, চরম ঝুঁকিতে এবং অপর ২ আসনটিও রয়েছে তোপের মুখে।
এসব আসনের মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত আসন হচ্ছে গাজীপুর-৩ আসন। মনোনয়ন ঘোষণার পর এ আসনে প্রথমবারের মত নারী প্রার্থি রুমানা আলী টুসিকে নৌকার টিকেট দেওয়ায় বেঁকে বসেছেন বর্তমান এমপি ও জেলা আ,লীগের সাধারন সম্পাদক ইকবাল হোসেন সবুজ’র লাখ লাখ নেতা কর্মি ভক্ত ও অনুসারি।
এ আসনে মনোনয়ন ঘোষণার পরপরই সামাজিক বিশৃঙ্খলা,শঙ্কা,দাম্ভিকতা,দখল,অগ্রীম কমিটি গঠন,কে কোন পদ নেবে তার পরিকল্পনা ফাঁস হওয়া এবং মিল ইন্ডাস্ট্রির ব্যবসা নিয়ে পরিকল্পনার লাগামহীন কথাবার্তা এবং তৃণমূল কর্মিদের সরোব পদচারনায় ভীতিকর পরিস্থিতির তৈরি হয়,যা বর্তমান এমপির ভিত্তিকে অধিকতর গ্রহনযোগ্য করে তোলে।
এসব অনভিপ্রেত অতি উৎসাহীদের বাড়াবাড়ি প্রশ্নববিদ্ধ করে তোলে নৌকার প্রার্থি রুমানা আলী টুসিকে।অবশ্য পরবর্তিতে সে অবস্থা এখন অনেকটাই স্তিমিত হলেও জনমনে অজানা আশঙ্কা এখনো বিদ্যমান।
কালিয়াকৈর উপজেলা ও গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের অংশ নিয়ে গঠিত গাজীপুর-১ আসন।
এখানে নৌকার প্রার্থী মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আ ক ম মোজাম্মেল হক।
প্রবীন এই আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও কালিয়াকৈর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম রাসেল।
গাজীপুর-১ আসনে অন্য প্রার্থীরা হলেন- তৃণমূল বিএনপির চৌধুরী ইরাদ আহমদ সিদ্দিকী ও আব্দুল জব্বার সরকার, জাতীয় পার্টির আল আমিন ও এম এম নিয়াজ উদ্দিন, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের মো. শফিকুল ইসলাম, ইসলামী ঐক্য জোটের ফজলুর রহমান ও জাকের পার্টির মানিক সরকার।
গাজীপুর সিটি বড় অংশ নিয়ে গঠিত গাজীপুর-২ আসনে নৌকার প্রার্থী হয়েছেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল।
গত চার নির্বাচনে জয়ী হওয়া রাসেলের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি কাজী আলিম উদ্দিন বুদ্দিন।
অন্য প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের সৈয়দ আবু দাউদ মছনবী হায়দার, জাতীয় পার্টির মোঃ জয়নাল আবেদীন ও রিনা রহমান, বাংলাদেশ কংগ্রেসের রেহানা আক্তার রিনা, ন্যাশনাল পিপলস পার্টর কাজী হাসিবুর রহমান রাব্বি, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির এস এম জাহাঙ্গীর আলম, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের মোঃ আমির হোসাইন এবং স্বতন্ত্র থেকে মহানগর যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক মোঃ সাইফুল ইসলাম।
শ্রীপুর উপজেলা ও গাজীপুর সদরের ৩টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত গাজীপুর-৩ আসনে আওয়ামী লীগের নৌকার প্রার্থী হয়েছেন রুমানা আলি টুসি।
মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে টুসির বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন সবুজ।
গাজীপুর-৩ আসনে অন্য প্রার্থীরা হলেন- কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের জেলা সভাপতি মো. আব্দুর রহমান, জাকের পার্টির মোহাম্মদ আলাউদ্দিন, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের মো. জয়নাল আবেদীন, জাসদের মো. জহিরুল হক মন্ডল বাচ্চু ও জাতীয় পার্টির এফ এম সাইদুল ইসলাম, স্বতন্ত্র প্রার্থি এ, কে, এম সাখাওয়াত হোসেন খান।
কাপাসিয়া নিয়ে গঠিত গাজীপুর-৪ আসনে নৌকার প্রার্থী আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও বর্তমান এমপি সিমিন হোসেন রিমি।
এখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা আলম আহমেদ।
অন্য প্রার্থীরা হলেন- বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট এর মো. সারওয়ার ই কায়েনাত, জাকের পার্টির জুয়েল কবীর, জাতীয় পার্টের মো. শামসুদ্দীন খান, বাংলাদেশ কংগ্রেসের আব্দুর রউফ খান, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির মাসুদ চৌধুরী ও স্বতন্ত্র শামসুল হক।
কালিগঞ্জ, সদর উপজেলা ও সিটি কর্পোরেশনের অংশ নিয়ে গঠিত গাজীপুর-৫ আসনে নৌকার প্রার্থী মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বর্তমান এমপি মেহের আফরোজ চুমকি।
তার বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন ডাকসুর সাবেক ভিপি ও সাবেক সংসদ সদস্য আখতারুজ্জামান।
এই আসনে অন্য প্রার্থীরা হলেন- জাতীয় পার্টির এম এম নিয়াজ উদ্দিন, জাসদের মো. তারিকুল ইসলাম আকন্দ, জাকের পার্টির এ এন এম মনিরুজ্জামান, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের মো. আল আমিন দেওয়ান, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির উর্মি ও স্বতন্ত্র মোহাম্মদ আমজাদ হোসেন।
এসব প্রার্থিদের মধ্যে ৭ জন মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেওয়ায় এখন ভোটের মাঠে লড়ছেন ৩৭ প্রার্থি।অন্য প্রার্থিরা কাগজে কলমে থাকলেও ৫ টি আসনেই মূল লড়াই হবে নৌকার সাথে বিদ্রোহীদের।
প্রতিটি আসনের বিদ্রোহীদের পেছনে রয়েছে এই জেলার আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট কিছু মুখ।রাজনীতির নিঠুর খেলায় অতীতের খতিয়ানের হিসেব মিটাতে নেপথ্যে থেকে তারা নৌকা ডুবাতে দৃশ্যমান তৎপর।
বিভিন্ন সংস্থার গোপন জরিপ থেকে জানা গেছে, এসব আসনের মধ্যে গাজীপুর-১,২,৩ আসন নৌকার জয়লাভ সহজসাধ্য হবে না।
আসনগুলোতে যারা নৌকার প্রার্থির বিরুদ্ধে প্রার্থি হয়েছেন তারা সুপরিচিত এবং রাজনৈতিকভাবে দক্ষ ও জনপ্রিয়।
বিপুল জনসমর্থন থাকায় ভোটের মাঠে নিরব ভোট বিপ্লবের মাধ্যমে এদের নৌকার জয়কে ছিনিয়ে নেওয়ার সমুহ সম্ভাবনা রয়েছে।