uadmin ৮ নভেম্বর ২০২৩ , ৯:২৭ পূর্বাহ্ণ প্রিন্ট সংস্করণ
কুড়িগ্রামের চিলমারীতে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে দুটি রাস্তার কাজ শেষ না করা সহ নানা অনিয়মের অভিযোগ ওঠেছে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানসহ দায়িত্বরতের বিরুদ্ধে। এদিকে এক বছরেও সড়কে কাজ শেষ না হওয়ায় চলাচলে ভোগান্তিতে পড়েছেন স্থানীয়রা। সংশ্লিষ্ট ওই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে বার বার চিঠি দিলেও বিভিন্ন অযুহাত দেখিয়ে কাজে দেরি করছেন বলে দাবি উপজেলা প্রকৌশলীর। তবে কাজে ১% ছাড় দিতে রাজি নন এই কর্মকর্তা।
এলজিইডি অফিস সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরাধীন অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গুরুত্বপূর্ন পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প (আইআর আইডিপি-৩) এর আওতায় ২০২২-২৩ অর্থ বছরে উপজেলার থানাহাট ফরেষ্ট অফিস হতে রাজারভিটা পর্যন্ত ১ হাজার ১৭০ মিটার সড়ক পাকা করণ সহ ২ ফুট মাপের ৩ টি ইউড্রেন ও ৫ ফুট মাপের ১ টি কালভার্ট নির্মাণের কাজ পায় স্থানীয় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান পলাশ শিমুল ট্রেডার্স। যার চুক্তিমূল্য ছিল ৯৫ লক্ষ ২৫ হাজার ৬৭৯ টাকা এবং দিজেন্দ্রনাথের বাড়ী হতে পুটিমারী কাজলডাঙ্গা মৌজা সড়ক পর্যন্ত ১ হাজার ২৬০ মিটার রাস্তা পাকা করণ সহ ২ ফুট মাপের ৩ টি কালভার্ট নির্মাণের কাজ পায় কুড়িগ্রামস্থ মেসার্স স্বপ্নীল এন্টারপ্রাইজ নামক ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। যার চুক্তিমূল্য ছিল ১ কোটি ৪ লক্ষ ৮৭হাজার ৩০৯টাকা। দুটি কাজই লটারীতে প্রাপ্ত ঠিকাদারের নিকট থেকে কিনে নেন উলিপুর উপজেলার ঠিকাদার মফিজুল হক (জর্দা হাজি)।
কাজ দুটি ২০২২ সালের ২১ সেপ্টেম্বর তারিখে শুরু হয়ে চলতি বছরের ২০ সেপ্টেম্বর তারিখে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও অদ্যাবধি কিছু কিছু স্থানে দায় সাড়াভাবে মাত্র ২০%-৩০% কাজ করা হয়েছে। যেটুকু কাজ করা হয়েছে তাও নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে সিডিউল বহির্ভূতভাবে করা হয়েছে বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ফরেস্ট অফিস হতে রাজারভিটা রাস্তায় ডিপগ্রামের মাসুদ মিয়ার বাড়ী পর্যন্ত মাত্র ৭০০ মিটার এলাকায় নিম্নমানের সামান্য খোয়া ও বালু ফেলা হয়েছে। নয়াবাড়ী গ্রামে রাস্তার ধারে প্যালাসেটিংয়ের পরিবর্তে ড্রামের টিন বাঁশের খুটি দিয়ে লাগানো হয়েছে। রাস্তার প্রস্থ ১০ ফুটের স্থলে ৭ ফুটে খোয়া ফেলানো হয়েছে। রাস্তাটিতে ৩ টি ইউড্রেন ও ১ টি কালভার্ট নির্মাণের কথা থাকলেও এখনও ইউড্রেন ও কালভার্ট নির্মাণ করা হয়নি।
এসময় নয়াবাড়ী গ্রামের মোজাম্মেল হক জানান, তিনি ঠিকাদারের লোকদের ড্রামের টিনে বাঁেশর খুটির পরিবর্তে কংক্রিটের খুটি লাগাতে বললে তার সাথে খারাপ ব্যবহার করা হয়। ওই এলাকার আবু বকর সিদ্দিক, সবুজ মিয়া, সেকেন্দার আলী, ডিপগ্রামের দারোগ আলীসহ অনেকে জানান, যেটুকু কাজ করা হয়েছে তা নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে। কাজ শুরু করার বছর পেরিয়ে গেলেও কাজ না করায় পথচারীদের ভোগান্তি চরমে উঠেছে।
অপরদিকে দিজেন্দ্রনাথের বাড়ী হতে পুটিমারী কাজলডাঙ্গা মৌজা সড়ক পর্যন্ত রাস্তায় দেখা গেছে দিজেন্দ্র নাথের বাড়ী সংলগ্ন এলাকায় সামান্য প্যালাসেটিং দিয়ে কয়েক গাড়ী বালু ফেলে রাখা হয়েছে। অপর প্রান্তে পুটিমারী কাজলডাঙ্গা মৌজা সড়ক এলাকা থেকে মাত্র ৩শ মিটার এলাকায় নিম্নমানের ইটের খোয়া ও বালু ফেলা হয়েছে। দায়সাড়াভাবে একটি কালভার্ট নির্মাণ করা হলেও বাকি দুটি নির্মাণ করা হয়নি। বিভিন্ন পুকুরের পাশ্বে প্যালাসেটিং দেয়ার কথা থাকলেও ধীরেন্দ্র নাথের বাড়ীর পুকুরে সামান্য প্যালাসেটিং দেয়া হয়েছে যা পানির নিচে পড়ে গেছে।
এসময় অধিকারীপাড়া গ্রামের রাশেদুল ইসলাম, বিনয় কৃষ্ণ বর্মন, আতিকুর রহমান, ধিরেন্দ্র নাথ বর্মন, সানোয়ার হোসেন সহ অনেকে জানান, অনেক আগে কাজ শুরু করা হলেও নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে সামান্য কাজ করে ফেলে রাখা হয়েছে। অধিকারীপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে নিম্নমানের খোয়া ও বালু পড়ে থাকতে দেখা গেছে। দিনেশ চন্দ্র রায় বলেন,কাজ ভাল করার কথা বললে ঠিকাদারের লোক বলে সিডিউল দেখে আসেন।
ঠিকাদার মফিজুল হক (জর্দা হাজী)’র সাথে কথা বলতে তার মুঠোফোনে বার বার ফোন দিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি।
থানাহাট ফরেষ্ট অফিস হতে রাজারভিটা পর্যন্ত কাজের দায়িত্বে থাকা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. শের আলী জানান, কাজ ভাল করানোর জন্য খোয়া টেস্টে পাঠিয়েছি। টেস্টের ফলাফল আসলেই কাজ শুরু হবে। কাজের সময় বাড়িয়ে নিয়ে কাজ সম্পন্ন করা হবে।
উপজেলা প্রকৌশলী মো. ফিরোজুর রহমান জানান, কাজ দুটি মফিজুল হক জর্দা সাহেব কিনে নিয়েছেন। আমরা তাকে বার বার চিঠি দেয়া সত্বেও বিভিন্ন অজুহাতে কাজ করতে দেরি করেছেন। বর্তমানে কাজ চলমান রয়েছে, সময় বৃদ্ধি করে কাজ শেষ করা হবে। ওই ঠিকাদার আমাদের খুব হ্যারেজমেন্ট করেছে। নিশ্চিত থাকেন আমাদের পক্ষ থেকে কাজে ১%ও ছাড় পাবে না। কাজ সঠিকভাবে আদায় করে নেয়া হবে।