নূর রাফসান সিদ্দিক সিয়াম ২৪ জানুয়ারি ২০২৪ , ৯:১০ অপরাহ্ণ প্রিন্ট সংস্করণ
গত ৭ জানুয়ারি, ২০২৪ এ অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৮, কুড়িগ্রাম -৪ ( চিলমারী,রৌমারী, রাজিবপুর) আসনে নিরঙ্কুশ বিজয় লাভ করেন এডভোকেট বিপ্লব হাসান পলাশ এমপি। তারুণ্যের শক্তিতে রাতারাতি ক্যারেশম্যাটিক নেতায় পরিনত হয়েছেন তিনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রাজনীতিতে হাতেখড়ি, তারপর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয় নি বিপ্লব হাসান পলাশ এমপিকে। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ও আওয়ামী যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে সফলতার সাথে দায়িত্ব পালনের পর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার হাতে তুলে দেন কুড়িগ্রাম -৪ আসনকে। সফলতার সাথে অন্য সকল প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত করে নৌকার বিজয় নিশ্চিত করে এ আসনকে শেখ হাসিনাকে উপহার দিয়েছেন। যাই হোক নির্বাচনী বাঁধা উতরে গেলেও অগ্নি পরীক্ষা অপেক্ষা করছে এমপি মহোদয়ের জন্য।
এ অঞ্চলে নৌকার জোয়ারের কথা স্মরণ করতে চাইলে চলে আসে ১৯৭০ এর নির্বাচনে সাদাকাত হোসেন ছক্কু মিয়া আর ২০০৮ এর নির্বাচনে সাবেক প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেনের নাম। তবে এই দু’জন নিজেদের নামের সুবিচার করতে না পারায় জন আকাঙ্খা পূরনে ব্যর্থ হয়েছেন। যার ফলশ্রুতিতে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই বলেছেন কুড়িগ্রামের মানুষ চাইতেও জানে না। সকলের উদ্দেশ্য বললেও তা যে কুড়িগ্রামের নেতাদের, বিশেষ করে নৌকার মাঝিদের বলেছেন তা বলার অবকাশ রাখেনা। তাই কুড়িগ্রামের জন্য, এই পিছিয়ে পড়া মঙ্গা অঞ্চলের মানুষের জন্য কথা বলাটা কোনো অংশেই একটা বিপ্লবের চেয়ে কম নয়। কাজেই বিপ্লব হাসান পলাশ এমপির জন্য একটা বিপ্লব অপেক্ষা করছে। আর সেই বিপ্লবে বিপ্লব হাসান পলাশ চিলমারী, রৌমারী ও রাজিবপুরের মানুষকে সাথে নিয়ে আরেকটা মহাকাব্য রচনা করবেন বলে আমরা আশা করি। সংসদে দাঁড়িয়ে আমাদের দাবি গুলো আমাদের বিপ্লব হাসান পলাশ তুলে ধরবেন আর টেলিভিশন সেটের সামনে দাঁড়িয়ে বা ফেসবুকে স্ক্রল করতে করতে তা দেখবো সেই দিনের অপেক্ষায় আছি।
আশার আলো এই যে, বিপ্লব হাসান পলাশ এমপি পরীক্ষিত নেতা। ছাত্র রাজনীতিতে মানুষের জন্য কাজ করার যে শিক্ষা অর্জন করেছেন তা ছড়িয়ে দিতে চান। তিনি মানুষের জন্য কাজ করতে চান, এ অঞ্চলকে এগিয়ে নিতে চান। তবে এ অঞ্চলের মানুষ কি চায় এটা তার সামনে তুলে ধরতে হবে। কর্মজীবী, বুদ্ধিজীবী, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের এগিয়ে আসতে হবে।
শিক্ষা ব্যতিত আমাদের এগিয়ে যাওয়ার কোনো বিকল্প নেই। বিপ্লব হাসান পলাশ এমপি দীর্ঘদিন ধরে ঢাকাস্থ কুড়িগ্রাম ছাত্র কল্যান সমিতির ন্যায়পাল। কাজেই শিক্ষা সম্পর্কিত সকল বিষয়ে তিনি ওয়াকিবহাল। তাই আমি অবকাঠামো ও অন্যান্য দিক গুলোতে নজর দিচ্ছি।
চিলমারীর শিক্ষা ব্যবস্থার বেহাল অবকাঠামো তুলে ধরতে অতসী কাচের দরকার হয় না। ঘোষণা আসলেও একটা সরকারি স্কুল আর একটি সরকারি কলেজ এখনো পুরোদমে সরকারি হয়নি। নেই শিক্ষক নিয়োগ, পুরনো সেই জীর্ণ শীর্ণ ভবন, মাঠ গুলোর বেহাল দশা শিক্ষার্থীর আনাগোনা নেই, চলছে দায়সারা কার্যক্রম। তবুও যা চলছে তা নাহয় মেনে নিলাম, কিন্তু চিলমারী ইউনিয়নে কোনো এমপিও ভুক্ত উচ্চবিদ্যালয় নেই। যেটা আছে সেটা এমপিও ভুক্ত নয়, বোর্ড থেকে স্কুল স্থাপনের অনুমতি মিলেছে এক বছর আগে। নদী বেষ্টিত একটা চরের শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কি তবে প্রাথমিকের গন্ডিতেই সীমাবদ্ধ থাকবে? নাকি মঙ্গা পীড়িত জনপদে মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার দরকার নেই? রাষ্ট্র কি তার প্রতিটি নাগরিকের শিক্ষা নিশ্চিতে প্রতিশ্রুতি বদ্ধ নয়? প্রশ্ন রয়ে গেল এমপি মহোদয়ের নিকট।
চিলমারী ইউনিয়ন, চিলমারী উপজেলার তিনটি চর ইউনিয়নের মধ্যে আর্থসামাজিক দিক থেকে এগিয়ে। সেখানেই যদি শিক্ষার এমন বেহাল দশা হয় তবে বাকি দুই ইউনিয়নের অবস্থা কতটা শোচনীয় কল্পনা করুন। তাই প্রতিটি চর ইউনিয়নে চর ভেদে আলাদা আলাদা উচ্চ বিদ্যালয় নির্মাণ এবং সেই বিদ্যালয়ে স্থানীয় যুবকদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমেই ঘুরে যেতে পারে পিছিয়ে পড়া চরাঞ্চলের শিক্ষা ব্যবস্থা। স্থানীয় যুবক-যুবতীদের কর্মসংস্থান ব্যতিত এ প্রকল্প আলোর মুখ দেখবেনা। যতোই উচ্চ শিক্ষিত শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হোক না কেন তারা চরে নিয়মিত পাঠদানে অংশ নিবে না। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের উপর চালানো নিজস্ব জরিপ থেকে প্রাপ্ত ফলাফলের উপর ভিত্তি করে আবারও বলছি চরের স্থানীয় শিক্ষিত শ্রেণীকে চরে নিয়োগের বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ ছাড়া অত্র অঞ্চলের ভাগ্য ঘুরানো সম্ভব নয়। বিশেষ নিয়োগ আইন আকারে কি করে পাশ করতে হয় তা একজন আইন বিভাগের ছাত্র ও আইনসভার সদস্য আমার থেকে ভালো জানেন।
সেই সাথে হাওরে ও চরাঞলে সরকারি চাকরিজীবিদের যে চরভাতা প্রদান করা হয় সেই চরভাতায় চিলমারী উপজেলাকে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি দীর্ঘদিনের। পাশাপাশি দুটি উপজেলা রৌমারী ও রাজিবপুর এ সুবিধা ভোগ করলেও চিলমারীকে বঞ্চিত করা হয়েছে। কাগজে কলমে তিনটি ইউনিয়ন পুরোপুরি চরে অবস্থান করলেও রমনা ও রানীগঞ্জ ইউনিয়নের উল্লেখযোগ্য অংশ নদীগর্ভে এবং চরাঞ্চলে রয়েছে। কাজেই এমপি মহোদয়ের হস্তক্ষেপ চাকুরীজীবিদের গণদাবিতে পরিনত হয়েছে।