সারাদেশ

চিলমারী-রৌমারী ফেরি চলাচলে বিঘ্নতা, অপেক্ষায় শতাধিক পণ্যবাহী গাড়ি

  চিলমারী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি: ৭ নভেম্বর ২০২৪ , ৬:১২ অপরাহ্ণ প্রিন্ট সংস্করণ

কুড়িগ্রামের চিলমারীর ব্রহ্মপুত্র নদের নাব্যতা সংকটে চিলমারী-রৌমারী নৌপথে ফেরি চলাচলে বিঘ্নতার সৃষ্টি হয়েছে। এতের ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন প্রায় ২ কি. মি. রাস্তার উপরে দাড়িয়ে থাকা পণ্যবাহী পরিবহণের চালক, শ্রমিকসহ সাধারন পথচারীরা।

বিআইডব্লিউটিএ এবং বিআইডব্লিউটিসি সমন্বিতভাবে যথাসময়ে নদীর গতিপথ খনন করলে এ ভোগান্তি লাঘব হতো বলে বলছেন সুবিধাভুগীরা।

জানা গেছে, উপজেলার রমনা ঘাট থেকে চিলমারী-রৌমারী নৌপথে নিয়মিত দুটি ফেরিতে পণ্যবাহীসহ বিভিন্ন প্রকার পরিবহন পারাপার করে আসছে। এতে প্রতি ট্রিপে ফেরী কুঞ্জলতা ৮-৯টি ও ফেরি কদম ৮-৯টি পণ্যবাহী গাড়ি পারাপার করতে পারে। ব্রহ্মপুত্রের পানি হঠাৎ কমে যাওয়ায় নাব্যতা সংকট দেখা দেয়। এতে হকেরচর, দুইশবিঘা ও রৌমারী এলাকায় নাব্যতা কমে পানির স্তর ৫-৬ ফুট হওয়ায় প্রায়ই সেখানে ফেরি আটকে যায়। বিআইডব্লিউটিএ’র ড্রেজিং বিভাগ সঠিক সময়ে খনন না করায় বাধ্য হয়ে ফেরি দুটিকে মাত্র ৬টি করে গাড়ি নিয়ে পারাপার হতে হচ্ছে। ফলে রাস্তার উপরে প্রায় ২ কি. মি. এলাকাজুড়ে সারিবদ্ধভাবে দাড়িয়ে থাকে বিভিন্ন রকমের পরিবহন। ফেরি পার হতে তাদের অপেক্ষা করতে হয় ৪ থেকে ৬ দিন। বৃহস্পতিবার সকাল ৭টায় ফেরি কদম ৬টি গাড়ী, ১১টায় ফেরি কুঞ্জলতা ৬টি ও দুপুর দেড় টায় ফেরি কদম ৬টি পণ্যবাহী গাড়ি নিয়ে রৌমারী যাওয়ার পরও শতাধিক মাল বোঝাই গাড়ী অপেক্ষমান ছিল।

ভূক্তভোগী পরিবহন শ্রমিক এবং সচেতন মহলের দাবী চিলমারী বন্দরে বসে থাকা ড্রেজার “বঙ্গ” ব্যবহার করে নদীর গতিপথ খনন করা হলে ফেরি চলাচলে বিঘ্নতার সৃষ্টি হতো না। অপরদিকে ফেরির সংখ্যা বৃদ্ধি এবং রাতে ফেরি চালু করলে পরিবহন শ্রমিকদের ভোগান্তি দুর হতো।

বৃহস্পতিবার দুপুরে ঘাট এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, দুটি ফেরি ৩ট্রিপে ১৮টি ট্রাক নিয়ে চলে যাওয়ার পরও রাস্তায় প্রায় শতাধিক পণ্যবাহী পরিবহন ফেরি পারাপারের জন্য অপেক্ষা করছে। এসময় লালমনিরহাট বুড়িমারী এলাকা থেকে আসা জামালপুর এলাকার পণ্যবাহী ট্রাকের চালক মো. সাগর আহমেদ, নাইদুর রহমান, জুয়েল মিয়া, নারায়নগঞ্জ এলাকার মুরাদ হাসান, রুবেল মিয়া, ওসমান গনি, সিলেটের ফজলুর রহমান, আলি আকবরসহ অনেকে জানান, তারা গত সোমবার রাতে ঘাটে এসে আজ বৃহস্পতিবারও পার হতে পারছি না।

নরশিংদী এলাকার চালক মো. ফারুক হোসেন জানান,গত সোমবার বিকেলে ঘাটে এসেছি আজও আমার সিরিয়াল হয়নি। দুজন মানুষ থাকতে প্রতিদিন ১হাজার টাকা খরচ। যা কমিশন পাবো তাতো এখানেই শেষ,পরিবার পরিজনকে খাওয়াবো কি?

মালবাহী ট্রাকের মালিক শেরপুর এলাকার সার্জেন্ট অব. এস এম আতাহার আলী বিআইডব্লিউটিএ এবং বিআইডব্লিউটিসি’র মধ্যে সমন্বয়হীনতাকে দায়ী করে জানান, তিনি বুড়িমারী স্থলবন্দর থেকে এক ট্রাক পাথর নিয়ে মঙ্গলবার বিকেলে ঘাটে এসেছেন। প্রায় ৩দিন পেরিয়ে গেলেও তিনি সিরিয়াল পাননি। ভোগান্তির নিরসনে ঘাটে ফেরি বৃদ্ধির জন্য কর্তৃপক্ষের নিকট জোড় সুপারিশ করেন তিনি।

বিআইডব্লিউটিসি’র ম্যানেজার বাণিজ্য প্রফুল্ল চৌহান বলেন, ব্রহ্মপুত্র নদের হকেরচর, দুইশবিঘা ও রৌমারী এলাকায় নাব্যতা সংকটের কারনে ঝুঁকি নিয়ে কম পরিবহনে ফেরি পাঠানো হচ্ছে। আজ সারাদিনে দুটি ফেরি ৩ট্রিপে ১৮টি পরিবহন পার করেছে ফলে কিছু পরিবহন রাস্তায় অপেক্ষা করছে। নাব্যতা সংকট কেটে গেলে আর এরকম জট থাকবে না।

বিআইডব্লিউটিএ’র ড্রেজিং বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সমির পাল জানান, আমরা ১২০ফুট জায়গা খনন করেছি। ওই লাইনে ৮ফুট পানি থাকার কথা সব লাইনে ৮ফুট পানি রয়েছে।

১২০ফুটের বাইরে ফেরি চালালে তাদের ব্যর্থতা। শুস্ক মৌসুমে ব্রহ্মপুত্র নদে ৮ ফুটের বেশী পানি রাখা সম্ভব না।

বিআইডব্লিউটিসির পরিচালক (বানিজ্যিক) এস এম আসিকুজ্জামান বলেন, নাব্যতা সংকটের কারনে ফেরি দুটি ঠিকমতো চলতে পারছে না। চিলমারী থেকে রৌমারী দীর্ঘ পথ হওয়ায় ফেরি চলাচলে সমস্যা হচ্ছে। এলজিইডি’র রাস্তা মেরামত হচ্ছে। আশাকরি আগামি বছর থেকে ফকিরেরহাট ঘাট হয়ে রৌমারী যাতায়াত শুরু হবে,তখন সব সমস্যার সমাধান হবে।