এস এম রাফি ১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ , ৯:৪০ অপরাহ্ণ প্রিন্ট সংস্করণ
কুড়িগ্রামের ব্রহ্মপুত্র নদে চিলমারী-রৌমারী-রাজিবপুর নৌপথে ডাকাতির প্রবণতা অনেকটাই বেড়ে গেছে এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন নৌযাত্রীরা। এখন মাঝে মধ্যে শোনা যায় নৌ ডাকাতির ঘটনা। এতে নিরাপত্তা হীনতায় ও দুশ্চিন্তায় পড়েছেন যাত্রীরা। গত দুই মাসে দুটি নৌ ডাকাতির ঘটনা ঘটলেও এ নিয়ে প্রতিরোধমূলক কিংবা আইনগত কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এ অবস্থায় জনবল সংকটকে দায়ী করে এই নৌপথের নিরাপত্তায় জনবল বাড়ানোর দাবি জানিয়েছে।
সম্প্রতি গত বুধবার (২৯ জানুয়ারি) দুপুরে চিলমারী-রাজিবপুর নৌপথে চিলমারী ইউনিয়নের কড়াইবরিশাল এলাকার পশ্চিমে ব্রহ্মপুত্র নদে একটি যাত্রীবাহী নৌকায় ডাকাতির ঘটনা ঘটে। ওই নৌকার যাত্রীরা জানান, আগ্নেয়াস্ত্র ও দেশিয় অস্ত্র সহ ১১ জনের ডাকাত দল যাত্রীবাহী নৌকা থামিয়ে সবকিছু লুটে নিয়ে কোনও বাধা ছাড়াই চলে যায়।
#নৌপথের নিরাপত্তায় জনবল বাড়ানোর দাবি যাত্রীদের
#একমাসের ব্যবধানে দুটি নৌকায় ডাকাতি
#ডাকাত প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেই প্রশাসনের
#হয়রানির ভয়ে অভিযোগ করেন না যাত্রীরা
এর আগে গত বছরের ২১ ডিসেম্বর রৌমারী-চিলমারী নৌপথে ইজতেমাগামী একটি যাত্রীবাহী নৌকায় ডাকাতির ঘটনা ঘটে। ওই নৌপথের অষ্টমীরচর ইউনিয়নের দুইশ’ বিঘার চরের কাছে ১৬-১৭ জনে একটি সশস্ত্র ডাকাতদল ডাকাতি করে নির্বিঘ্নে চলে যায়। দুটি ঘটনায় কোনও মামলা রুজু কিংবা কাউকে সনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ।
ব্রহ্মপুত্রে একের পর এক ডাকাতির ঘটনায় নিরাপত্তা শঙ্কায় ভুগছেন ওই নৌপথের যাত্রীরা। নৌপথটি চিলমারী নৌ পুলিশ ফাঁড়ির আওতাধীন হলেও যাত্রীদের নিরাপত্তায় ন্যুনতম কোনও উদ্যোগ নেই বহিনীটির। এমনকি একাধিক ডাকাতির ঘটনায় কোনও মামলা কিংবা সাধারণ ডায়রি করেনি। যদিও মামলা না হওয়ার জন্য ভুক্তভোগী যাত্রীদের অনাগ্রহকে দায়ী করেছেন তারা।
এক মাসের ব্যবধানে দুটি ডাকাতির ঘটনায় ওই নৌপথের যাত্রীদের মধ্যে নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ বেড়েছে। নৌপথের বিকল্প না থাকায় তারা অনেকটা জিম্মি হয়ে পড়েছেন। ভয় আর আতঙ্ক নিয়ে তাদের যাতায়াত করতে হচ্ছে।
বুধবার ডাকাতির শিকার নৌকার যাত্রী মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, ‘১১ জনের ডাকাত দলের বেশিরভাগের হাতে বন্দুক ছিল। সকলের মুখ ঢাকা ছিল। কাউকে চেনা যায় নাই। ডিঙ্গি নৌকায় করে আক্রমণ করে তারা সব লুটে নিয়া যায়। অস্ত্রের মুখে নারী-পুরুষ সব যাত্রী অসহায় ছিল।’
‘শুধু যাত্রীরা নন। ডাকাতির ঘটনায় ঘাট ইজারাদারও অসহায় হয়ে পড়েছেন। নৌপথের নিরাপত্তা বাড়ানোর জন্য তারা প্রশাসনের কঠোর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।’
রৌমারী নৌপথে ডাকাতির শিকার নৌকার মাঝি সবুর বলেন, ‘এর আগে ২০০০ সালের দিকে নৌ-ডাকাতির ঘটনার পর পুলিশকে অভিযোগ দিলেও কোনও ফল পাওয়া যায় নাই। শুধু শুধু কোর্টে গিয়া উল্টা আমরা হয়রানি হইছি। এজন্য আর পুলিশে অভিযোগ দেই নাই।’ একই কারণ জানিয়েছেন গত বুধবার রাজিবপুর নৌপথে ডাকাতির শিকার নৌকার যাত্রী মঞ্জুরুল।’
মজিবুর রহমান নামে এক যাত্রী জানান, ‘জেলার বিভিন্ন কাজে মাঝেমধ্যে কুড়িগ্রামে আসতে হয় কিন্তু বেশ কয়েকদিন থেকে আমরা খুব আতঙ্কে যাতায়াত করি কারণ সেদিন শুনলাম যে নৌপথে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে আমাদের নিরাপত্তা কে দেবে? প্রশ্ন রাখেন এই যাত্রী।
আকলিমা বেগম নামে অপর এক যাত্রী জানান, ‘আমার বাপের বাড়ি রাজিবপুর আমাকে নৌ পথে যাইতে হয় বাপের বাড়ি থেকে মাঝেমধ্যে ছেলে সন্তান নিয়ে আসা-যাওয়া করতে হয়। এজন্য খুব চিন্তিত আমি, টাকা পয়সা তো সমস্যা না কিন্তু আমাদের জীবনে তো মূল্য আছে।’
কলেজ শিক্ষার্থী পলাশ আহমেদ বলেন, ‘আমি কুড়িগ্রামে পড়াশুনা করি আমাকে বাড়ি আসতে হয়। বাড়ি থেকে যখন যাই তখন আমার কাছে মেসের খরচ সহ বই হাবিজাবি কেনার টাকা থাকে যদি ডাকাতেরা আমাকে ধরে তাহলে তো সব নিয়ে যাবে নৌ পুলিশ আমাদেরকে নিরাপত্তা দিচ্ছে না কেন? তাদের তো এই কাজের জন্যই নিয়োগ করা হয়েছে।’
চিলমারী নৌ পুলিশ ফাঁড়ির সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) সেলিম সরকার জানান, ‘সম্প্রতি যে ডাকাতির ঘটনাটি ঘটেছে, খবর পাওয়া মাত্রই আমরা গিয়েছি। কিন্তু নৌপথে যেতে অনেকটা সময় লাগে আমাদের তারপরও আমরা যত দ্রুত সম্ভব সেখানে পৌঁছে গেছি। আমরা আমাদের দিক থেকে বিভিন্নভাবে খোঁজখবর নিচ্ছি কারা এই নৌ ডাকাতির সঙ্গে জড়িত বা সংশ্লিষ্ট আছে কিনা সে বিষয়গুলো তদন্ত করছি।’
তিনি আরো বলেন, ‘সম্প্রতি যে দুটি ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে এ নিয়ে থানায় কোন ধরনের সাধারণ ডায়েরি বা মামলা হয়নি। আর আমাদের থানায় লোকবল কম, তারপরেও চেষ্টা করছি কাজ করার। ‘
চিলমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সবুজ কুমার বসাক জানান, ‘সংশ্লিষ্ট যে থানা গুলো রয়েছে আমরা কথা বলছি তাদের সঙ্গে যাতে আইনশৃঙ্খলার কোনভাবেই অবনতি না ঘটে এবং ডাকাতির ঘটনা যাতে ভবিষ্যতে আর না ঘটে।’