রাজনীতি

জাহাঙ্গীরকে নিয়ে আওয়ামী লীগে মতদ্বৈধতা

  এস এম রাফি ১২ মে ২০২৩ , ৮:৩৬ অপরাহ্ণ প্রিন্ট সংস্করণ

সদরুল আইনঃ

গাজীপুরের সাবেক মেয়র এবং গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলমকে নিয়ে আওয়ামী লীগে মতদ্বৈধতা দেখা দিয়েছে।

জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে কি ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে এই নিয়ে শীর্ষ পর্যায়ের আওয়ামী লীগের নেতৃত্বের মধ্যে ভিন্ন মত প্রকাশ্য রূপ গ্রহণ করেছে।

আর এর ফলে জাহাঙ্গীরের ভবিষ্যত কি হবে তা নির্ধারণ অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে। তবে আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, আগামীকাল বিকেলে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিকেল ৪ টায় গণভবনে সম্পাদকমণ্ডলীর সভা ডেকেছেন।

এই সভায় জাহাঙ্গীরের ব্যাপারে আলোচনা হবে এবং তখন আওয়ামী লীগ সভাপতির মনোভাব বোঝা যাবে।

উল্লেখ্য যে, গাজীপুর সিটি করপোরেশনে ২০১৮ সালে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছিলেন জাহাঙ্গীর আলম। মেয়র হয়ে নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে তিনি নিজেকে জড়িয়ে ফেলেন।

বিভিন্ন আপত্তিকর বক্তব্য সরকারের নীতিনির্ধারকদের কাছে পৌঁছলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। প্রথমে তাকে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। পরবর্তীতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সিটি করপোরেশন থেকেও তাকে বরখাস্ত করেন।

এরপর জাহাঙ্গীর ব্যাপক দেন-দরবার করে আওয়ামী লীগে ফিরে আসার চেষ্টা করেন এবং তিনি ভবিষ্যতে কোনোদিন দলের শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকাণ্ডে যোগ হবেন না- এই শর্তে বহিষ্কারাদেশ থেকে মুক্তি পান। আওয়ামী লীগ সভাপতি তার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করেন।

কিন্তু বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের পরপরই তিনি গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে প্রার্থী হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেন। এ লক্ষ্যে তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম কিনে সেটি জমাও দেন।

কিন্তু আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ডের সভায় বরং জাহাঙ্গীর নয় পুরোনো ত্যাগী, পরীক্ষিত নেতা আজমত উল্লাহকে প্রার্থী হিসেবে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়। এই বিষয়টি স্বাভাবিকভাবে নেননি জাহাঙ্গীর আলম।

তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন এবং তিনি নিজে ও মা জায়েদা খাতুনকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করান। যদিও ঋণ খেলাপির অভিযোগে জাহাঙ্গীর আলমের মনোনয়ন রিটার্নিং অফিসার বাতিল করে দেন এবং সেই মনোনয়ন বাতিলের সিদ্ধান্ত হাইকোর্টের আপিল বিভাগ পর্যন্ত বহাল ছিল।

ফলে জাহাঙ্গীরের এখন আর নির্বাচন করার সম্ভাবনা নেই। কিন্তু জাহাঙ্গীরের মা নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দাঁড়িয়েছে। নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার পর থেকেই জাহাঙ্গীর একের পর এক আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে আপত্তিকর, মানহানিকর এবং বিভ্রান্তিকর বক্তব্য দিচ্ছেন বলে আওয়ামী লীগের অনেক নেতা মনে করেন।

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম প্রকাশ্যে বলেছিলেন যে, জাহাঙ্গীরকে আজীবন বহিষ্কার করা হবে। তিনি বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছিলেন, এটি বড় কথা নয়। তিনি যে সমস্ত কথা-বার্তা বক্তব্য দিয়েছেন, সেটি খুবই আপত্তিকর এবং দলের স্বার্থ পরিপন্থী।

কিন্তু মির্জা আজম যেভাবে জাহাঙ্গীরের সমালোচনা করেছেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সেরকম সোচ্চার নন বলেই লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদেরকে বলেছেন, জাহাঙ্গীর যেহেতু প্রার্থী নন, সেহেতু তার প্রসঙ্গটি নিয়ে আর আলোচনার কিছু নেই। আর তার মায়ের বিষয়টি নিয়ে তিনি জানিয়েছেন, তিনি আওয়ামী লীগের কেউ নন। এর ফলেই আওয়ামী লীগের মধ্যে একটি ধুম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে।

অনেকেই মনে করেন, জাহাঙ্গীর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের স্নেহধন্য, তার পৃষ্ঠপোষকতায় তিনি রাজনীতিতে বেড়ে ওঠেছেন এবং গাজীপুর মহানগরের সাধারণ সম্পাদক হওয়া মেয়র পদে মনোনয়ন পাওয়ার পেছনে ওবায়দুল কাদেরের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল।

যদিও সর্বশেষ মনোনয়ন বোর্ডের সভায় ওবায়দুল কাদের থেকেও জাহাঙ্গীরের পক্ষে কোনো বক্তব্য রাখেননি। কোনো অবস্থানও গ্রহণ করেননি। কিন্তু তারপরও জাহাঙ্গীরের প্রতি তার এক ধরনের প্রচ্ছন্ন সমর্থন আছে বলে কেউ কেউ মনে করেন।

শুধু ওবায়দুল কাদের নয়, আওয়ামী লীগের অনেক নেতাই জাহাঙ্গীর যেহেতু প্রার্থী হন নাই, সেজন্য তার বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার পক্ষে মতামত দিয়েছেন।

কিন্তু আওয়ামী লীগের একটি অংশ তারা মনে করছেন যে, জাহাঙ্গীর যে ধরনের কথা-বার্তা বলেছেন, সে ব্যাপারে যদি ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, সেটি দলের জন্য একটি ভুল বার্তা দিবে।

আগামীকাল সম্পাদকমণ্ডলীর সভায় এই নিয়ে আলোচনা করা হবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।