সারাদেশ

জুনে খুলে দেওয়া হবে চিলমারী-হরিপুর তিস্তা সেতু

  ডেস্ক নিউজ ২৩ নভেম্বর ২০২৪ , ১:৫৮ অপরাহ্ণ প্রিন্ট সংস্করণ

ওপারে কুড়িগ্রামের চিলমারী, এপারে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ। মাঝপথ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে দেড় কিলোমিটার প্রশস্ত তিস্তা নদী। বর্ষা এলেই ভয়ংকর হয়ে ওঠে এ নদী। ভেঙে তছনছ করে একের পর এক বসতভিটা ও ফসলি মাঠ। নিঃস্ব হয়ে পড়ে এ জনপদের মানুষ। দুই উপজেলার লাখ লাখ মানুষের পারাপারের একমাত্র উপায় ছিল খেয়ানৌকা। দিনে খেয়াতে নদী পাড়ি দিতে পারলেও সন্ধ্যা নেমে এলেই বন্ধ হয়ে যেত খেয়া। দূরত্ব মাত্র দেড় কিলোমিটার হলেও দেরি কিংবা যে কোনো কারণে খেয়া ধরতে না পারলে উপোস করে রাত কাটাতে হতো নদী পাড়ি দিতে না পারা অপেক্ষারত মানুষদের। রাত পোহালে তবেই হতো বাড়ি ফেরা। দীর্ঘদিনের আন্দোলনের ফলে এখন বাস্তব রূপ নিতে যাচ্ছে সেই স্বপ্নের তিস্তা সেতু।

সেতুটির অবকাঠামোর কাজ এখন সিংহভাগই শেষ। কুড়িগ্রাম অংশের সংযোগ সড়ক, সেতুর লাইটিং, কাপেটিংসহ শেষ পর্যায়ের কাজ যতই শেষ হচ্ছে, ততই আশায় বুক বাঁধছে তিস্তার দুই পারের মানুষ। আগামী ২০২৫ সালের জুনে সেতুটি যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে বলে জানান সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

স্থানীয়রা জানান, এ সেতু চালু হলে যেমন তারা অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হবেন, তেমনি নদী ভাঙন থেকেও রক্ষা করবে তিস্তা পারের মানুষদের। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন শেষ হলে কুড়িগ্রাম, উলিপুর, নাগেশ্বরী, ভুরাঙ্গামারী, চিলমারী থেকে সড়কপথে ঢাকার দূরত্ব কমে আসবে প্রায় ১৩৫ কিলোমিটার। দূরত্ব কমবে বিভাগীয় শহর রংপুরের সঙ্গেও। পাল্টে যাবে এ অঞ্চলের মানুষের জীবনমানের ধারা, ঘটবে অর্থনৈতিক উন্নয়ন।

জেলা এলজিইডির তথ্যে জানা যায়, গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ অংশের হরিপুর থেকে কুড়িগ্রামের চিলমারী পর্যন্ত তিস্তা নদীর ওপর নির্মিত হচ্ছে সেতু। এলজিইডির মাধ্যমে বাস্তবায়িত দেশের প্রথম দীর্ঘতম সেতু হতে যাচ্ছে তিস্তা সেতু। সেতুটির দৈর্ঘ্য ১ হাজার ৪৯০ মিটার। সেতুটিতে বসানো হয়েছে ৩১টি স্প্যান। দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাচ্ছে দুই পারের মানুষের স্বপ্নের সেতুর বাকি কাজ।

রুহুল কবির মুকুল নামের এক মাদ্রাসা শিক্ষক বলেন, কুড়িগ্রাম যেতে বা ওপার থেকে এপারে আসতে নৌকায় ২ ঘণ্টার বেশি সময় লাগে। আবার সিরিয়ালের জন্য বসে থাকতে হয় ঘণ্টার পর ঘণ্টা। কিন্তু সেতু চালু হলে ১০ মিনিটে ওপার থেকে এপারে আসা যাওয়া করা যাবে। এতে টাকা ও সময় কমবে কয়েক গুণ।

গাইবান্ধা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সাবিউল ইসলাম জানান, সেতুর পাশাপাশি এর উভয়পাশে স্থায়ীভাবে নদী শাসন করা হচ্ছে প্রায় সাড়ে ৩ কিলোমিটার। সেতুর উভয় পাশে সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে ৮৬ কিলোমিটার। সেতুটি চালু হলে দুই পারের মানুষের যোগাযোগ বৃদ্ধির মাধ্যমে সৃষ্টি হবে অনেক কর্মস্থান। আগামী ২০২৫ সালের জুনে সেতুটি যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হবে।

উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের ২৬ জানুয়ারি সেতুটির নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করা হলেও নানা জটিলতা কাটিয়ে ২০২১ সালে এর নির্মাণ কাজ শুরু হয়। সেতুটি নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৭৩০ কোটি ৮৫ লাখ টাকা।