মো.শাহাদাত হোসেন মনু,ঝালকাঠি ১৪ নভেম্বর ২০২৩ , ৫:০০ অপরাহ্ণ প্রিন্ট সংস্করণ
বর্তমান ঝালকাঠি সদর উপজেলাধীন ও মুক্তিযুদ্ধকালীন নলছিটি থানাধীন চাচৈর রণাঙ্গনে ১৯৭১ সালের ১৩ নভেম্বর সম্মুখযুদ্ধে অংশগ্রণকারী যুদ্ধালীন নলছিটি থানা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার এবং স্বাধীনতা পরবর্তিতে দু’বার নির্বাচিত নলছিটি উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মো.সিকান্দার আলী মিয়া (৭৯) ইন্তেকাল করেছেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাই হিরাজিউন)।
১৯৭১ সালের ১৩ নভেম্বর সম্মুখযুদ্ধে বিজয়ী হয়ে ফিওে আসা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ২০২৩ সালের ১৩ই নভেম্বও মঙ্গলবার বিকেলে উপজেলার বিহঙ্গল গ্রামের নিজ বাড়িতে বার্ধক্যজনিত কারণে ১৯৭১ সালের ১৩ মৃত্যু হয়।
তিনি স্ত্রী, দুই ছেলে ও তিন মেয়ে রেখে গেছেন। বুধবার সকাল ১০টায় গ্রামের বাড়ির উঠানে তাঁর জানাজা নামাজ শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।
তিনি টানা দুইবার নলছিটি উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার ছিলেন। তাঁর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন ঝালকাঠী-২ অসনের সংসদ সদস্য, আওয়ামীলীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও ১৪দলের মুখপাত্র ও সমন্বয়ক আমির হোসেন আমু, নলছিটি উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা তছলিম উদ্দিন চৌধুরী, পৌর মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল ওয়াহেদ খান ও উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা তাজুল ইসলাম দুলাল চৌধুরী।
ঝালকাঠি সদর উপজেলার চাচৈর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের সাব-ক্যাম্প। নলছিটি উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোঃ সেকান্দার মিয়ার নেতৃত্বে ২৮ জন সশস্ত্র মুক্তিযোদ্ধাদের এ চাচৈরসাব-ক্যাম্পে পাকহানাদার বাহিনী আক্রমণ করবে বলে ১২ নভেম্বর রাতে খবর পাই। সাব সেক্টও কমান্ডার ক্যাপ্টেন শাহজাহান ওমরকে জানালে তিনি ১২০ জন মুক্তিযোদ্ধা, সদও উপজেলা কমান্ডার সুলতান হোসেন মাস্টার ১৫০ জন মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে আমাদের সাথে ১৩ নভেম্বর সকালে যোগ হয়। ক্যাপ্টেন শাহজাহান ওমর আমাদের রণ কৌশল জানিয়ে দেয়। পাকহানাদার বাহিনী ধীরেধীরে আমাদের ক্যাম্পের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। তাদের বিরুদ্ধে অপারেশন চালাবার জন্য পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি নেই আমরা (মুক্তিযোদ্ধারা)।
সকাল ১০ টায় এক প্লাটুন পাকহানাদার বাহিনী ঢুকে পড়ে চাচৈর গ্রামে। আমরা উত্তর, পূর্ব ও পশ্চিম ৩ দিক থেকে পাকহানাদার বাহিনীর উপর আক্রমণ শুরু করি। দক্ষিন দিক খোলা পেয়ে তারা সেদিকে পিছু হটতে থাকে। ইতিমধ্যে অনেক রাজাকার ও পাকহানাদার সদস্য নিহত হয়। একই এলাকার খান বাড়ির ভিতরে চতুর্দিক থেকে ঘর ঘিরে থাকায় মাঝখানের আঙিনায় ঢুকে রাজাকার ও হানাদারবাহিনী আশ্রয় নেয়। ইতিমধ্যে তাদের অনেকের শরীরে গুলি লেগে আহত হয়েছে। খালি রাখা দক্ষিন দিকের ছনবনে কৌশলে মুক্তিযোদ্ধারা গোপনে হামলার প্রস্তুতি নেয়। বাকি ৩ দিক থেকে আমরা গুলি ও বোমানিক্ষেপ করে আতঙ্কিত করতে থাকি। তারাও পাল্টা গুলি ছুঁড়লে শুরু হয় সম্মুখযুদ্ধ। এ সময় কাঠিপাড়ার আঃআউয়াল, খান বাড়ির বাসিন্দা আদুখান, হামেদ আলী, সেকান্দার মাঝি, আলেয়া ও তার ছোট ভাই শহীদ হন। দুপুর পেরিয়ে বিকেল হয়ে গেলে হানাদার বাহিনী দক্ষিন দিক খোলা দেখে সেখান থেকে পালিয়ে যেতে চেষ্টা করে হানাদারবাহিনী । সেখানে ওঁৎ পেতে থাকা মুক্তিযোদ্ধারা সুযোগ বুঝে ব্রাশফায়ার করলে ঘটনাস্থলেই ১৮জন পাকহানাদার নিহত হয়। সকাল ১০ টা থেকে শুরু হয়ে সন্ধ্যা পর্যন্তচলে সম্মুখযুদ্ধ। এ সম্মুখযুদ্ধে রাজাকার ও পাকহানাদার কমান্ডারসহ প্রায় ৬০ জন নিহত এবং যুক্তিযোদ্ধাসহ ৬ জন বাঙ্গালী শহীদ হন। আলোচিত এই যুদ্ধে লজ্জাজনক পরাজয় ঘটে পাকবাহিনীর। বিজয়ী হন মুক্তিযোদ্ধারা। সম্মুখযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী কণিষ্ঠ মুক্তিযোদ্ধা মতিয়ার রহমান এভাবেই পাকহানাদারবাহিনীর সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মুখযুদ্ধের বর্ণনা দেন। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ কওে জানান, ১৯৯১ সালে একবার স্মৃতি সৌধের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হলেও তা ওই পর্যন্তই সীমাবদ্ধ রয়েছে।
১৯৭১ সালের ১৩ নভেম্বর ঝালকাঠি সদর উপজেলার চাচৈর রণাঙ্গনে ক্যাপটেন শাহজাহান ওমরের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধা ও পাকহানাদার বাহিনীর মধ্যে সম্মুখযুদ্ধ হয়। এতে মুক্তিযোদ্ধা আউয়াল শহীদ, এবং এলাকার বাসিন্দা আদুখান, হামেদ আলী, সেকান্দার মাঝি, আলেয়া ও তার ছোট ভাই শহীদ হন এবং পাকহানাদার ও রাজাকারসহ ৬০ জনমারাযায়। সম্মুখযুদ্ধস্থানে স্বাধীনতার ৫২ বছরঅতিবাহিত হলেও এ পর্যন্ত নির্মাণ করা হয়নি কোন স্মৃতিস্তম্ভ, সহায়ত াপায়নি কোন শহীদ পরিবার।
মুক্তিযোদ্ধারা ক্ষোভ প্রকাশ কওে জানান, আমরা দেশকে স্বাধীন করার জন্য মুক্তিযুদ্ধ করেছি। যেখানে আমাদের সম্মুখযুদ্ধ হয়েছে সেখানে কোন স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ তো দূরের কথা কোন পরিকল্পনাও সরকার গ্রহণ করেনি।
মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ঝালকাঠি জেলার ডেপুটিকমান্ডার দুলাল সাহা বলেন, চাচৈর রণাঙ্গনে স্মৃতিসৌধ নির্মাণের জন্য একটি প্রস্তাব ঝালকাঠি মুক্তিযোদ্ধা সংসদের পক্ষ হতে ঢাকায় পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু তার কোন ফলাফল এখনও দেখতে পাচ্ছিনা।