বিবিধ

ডাঃ এজাজুল ইসলামঃ যাকে নিয়ে গর্ব করতে পারে বাংলাদেশ

  এস এম রাফি ৩১ মার্চ ২০২৩ , ৮:২৩ অপরাহ্ণ প্রিন্ট সংস্করণ

এজাজুল ইসলাম একজন বাংলাদেশী নাট্য ও চলচ্চিত্র অভিনেতা।

তিনি মূখ্যত একজন জনপ্রিয় ডাক্তার। জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের মাধ্যমে তার নাটকে জগতে আগমন। পরবর্তীতে তিনি চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেন।

তার অভিনীত প্রথম চলচ্চিত্র শ্রাবণ মেঘের দিন। এর পর তিনি দুই দুয়ারী (২০০১), চন্দ্রকথা (২০০৩), শ্যামল ছায়া (২০০৪) চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন।

তিনি তারকাঁটা চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য ৩৯তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে শ্রেষ্ঠ পার্শ্বচরিত্রে অভিনেতার পুরস্কারে লাভ করেন।

তিনি গাজীপুর চৌরাস্তায় এজাজ সেন্টারে তিনি নিয়মিত রোগী দেখেন। সরকার নির্ধারিত ৩০০ টাকা ফিতে রোগী দেখেন। তার ভিজিট ফি কম হওয়ায় তাকে গরীবের ডাক্তার নামে ডাকা হয়।

২০১৭ সালের অক্টোবর মাসে এজাজুল ইসলাম ঢাকা মেডিকেল কলেজে নিউক্লিয়ার মেডিসিনের প্রধান হিসেবে যোগদান করেন।

তার সমমনা চিকিৎসকরা ফি নেন হাজার টাকা বা তারও অনেক বেশি। অথচ ঢাকা মেডিকেলের নিউক্লিয়ার মেডিসিন বিভাগের প্রধানের পদ অলঙ্কৃত করা ডাক্তার এজাজুল ইসলাম ফি নেন দু’শ, তিন’শ টাকা।

গরিব রোগীদের অনেক ক্ষেত্রে বিনা ফি’তেই চিকিৎসা করেন। তার চেম্বারের নেমপ্লেটের পাশে লিখা আছে ‘গরিব রোগীর ফিস শিথিলযোগ্য’। এই একটি বাক্য তাকে পৃথক করেছে অনেক ডাক্তার থেকে!

আজ বিকেলে এ প্রতিবেদক সময়ের প্রয়োজনে ৫’শ টাকা ফি নির্ধারনের জন্য প্রস্তাব দিলে সবিনয়ে তিনি তা অস্বীকার করেন।তিনি বলেন দুনিয়ার এই ছোট্ট জীবনে অধিক অর্থের কোন প্রয়োজন নেই।সৎ উপায়ে দুবেলা খেয়ে পরে বেঁচে থাকতে পারলেই যথেষ্ট।

ইট-সুড়কির ব্যাংকে টাকার ব্যালেন্স না বাড়িয়ে এজাজুল ইসলাম মানুষের হৃদয়ব্যাংকে ভালোবাসা জমা রেখে চলেছেন প্রতিনিয়ত।মহৎ ও অনন্য কর্মগুণের কারণে দিনে দিনে সাধারণ মানুষের কাছে হয়ে উঠেছেন ‘গরিবের ডাক্তার’। ভালবাসার পরম নির্ভরতার প্রতিক।

অনেক রোগী তাকে দেখিয়ে এসে চোখ-মুখে চকচকে আনন্দ মেখে বলেন, ‘ডাক্তার এজাজের কথা শুনলেই তো রোগ পঞ্চাশ পারসেন্ট ভালো হয়ে যায়।’

শুদ্ধতম আনন্দগুলো আর তার অমায়িক আচরনে রুগীরা বেঁচে থাকার প্রেরণা পায়।সৃষ্টির সেবার মহতী উদ্যোগের পাশে ডা: এজাজ এক মহৎ প্রাণের প্রস্ফুটিত গোলাপ।

ডা: এজাজ হৃদয় সমুদ্রের বেলাভূমিতে প্রথিত করে রেখেছেন সৃষ্টির জন্য সেবার এক ফল্গুধারা, যেখানে অবগাহন করলে খুঁজে পাওয়া যায় নির্লোভ সৎ হৃদয়ের পরশ।

স্বার্থের মহাসমুদ্রে অধিকাংশ চিকিৎসক যখন কষাই সদৃশ,লাগামহীন ফি, টেস্ট ও পরিক্ষার মাধ্যমে টাকার পাহাড় স্পর্শ করতে ব্যাপৃত,তারই পাশে ডা: এজাজ মহতী প্রাণের মানবতার সমুজ্জ্বোল নক্ষত্র।

আর্তের জীবনে চিকিৎসা সেখানে বিলাসিতা, ডাক্তার এজাজ তখন মানবতার সুরভিত গোলাপ।লোভের ছায়ায় মলিন হতে দেয়নি তার চিকিৎসা সত্ত্বা।কলঙ্কিত করেননি ছোট্ট এ মানব জীবন। তার সান্নিধ্যে গেলেই অনুভে আসে তিনি জীবন্ত এক পরশ পাথর।

হয়ত এ কারনেই কথা সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ এই চমৎকার মানুষটার ভেতর খুঁজে পেয়েছিলেন সততা ও আদর্শের এক ‘মহাকাব্যিক পরশপাথর’। খুঁজে পেয়েছিলেন অনুপম এক অভিনেতাকে।

ধারাবাহিক নাটক ‘সবুজ সাথী’ দিয়ে শুরু হয়েছিল এক অনবদ্য অভিনয় যাত্রা। ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’, ‘দুই দুয়ারী’, ‘চন্দ্রকথা’, ‘শ্যামল ছায়া’, ‘নয় নাম্বার বিপদ সংকেত’, ‘আমার আছে জল’ দিয়ে ১৭ কোটি মানুষের চোখে ডা: এজাজ হয়ে উঠেছিল আরও বর্ণিল ও বাগ্ময়।

জরপ্রিয়তা ও সাফল্য হয়ত তার কদম ছুঁয়ে বলেছিল তুমি মহৎ,তুমি অদম্য,তুমি মানবিক,তুমি সৃষ্টির সেবায় নিয়োজিত প্রস্ফুটিত গোলাপ।তোমার কীর্তির পাশে তুমি যে মহান, জীবন্ত ইতিহাস।

ডা: এজাজ পার্শ্বচরিত্রে অভিনয়ে অর্জন করেছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। আর এ রকম হবেই না বা কেন? তিনি তো এর যোগ্য দাবিদারও বটে। নাটক সিনেমায় তিনি থাকা মানেই দর্শকদের বাড়তি আনন্দ উপভোগ করা। যাপিত জীবনের সব যন্ত্রণা ভুলে একটু খানি আনন্দে ভাসা।

ডা: এজাজুল ইসলাম গণমাধ্যমে একবার বলেছিলেন- “আমি ডাক্তার হিসেবেও ১০০ ভাগ হ্যাপি, অভিনেতা হিসেবেও শতভাগ হ্যাপি। আমাকে যদি বলেন, আমি পরের জনমে কী হতে চাই, তাহলে বলবো আমি পরের জনমেও এই এজাজই হতে চাই।

অভিনেতা এজাজ হতে চাই, ডাক্তার এজাজ হতে চাই। আমার এই স্ত্রী বাচ্চা ও মাকেও পরের জীবনে পেতে চাই। কারণ এই জীবনে আমার অনেক সুখের। আমি অনেক হ্যাপি।

ডা: এজাজের মত মহত প্রাণের মানুষ সব সময় জন্মগ্রহন করে না।এজাজরা পৃথিবীতে আসতে পৃথিবীকে হাজার বছর অপেক্ষা করতে হয়। মানবপ্রেমের হৃদয় ক্যানভাসে আঁকা হৃদয় গ্রন্থিতে প্রবাহমান যে মহতী ঝরনাধারা তা নিখাদ অকৃত্রিম।বাংলাদেশ তাকে নিয়ে গর্ব করতেই পারে।

বাংলাদেশের নাটকের সাথে যাদের পরিচয় আছে তারা অনেকেই নামে না চিনলেও মুখচ্ছবি দেখার সাথে সাথেই এজাজুল ইসলামকে চিনতে বাধ্য।এমনটা হরহামেশাই হয় যে- একজন ব্যক্তিকে আমরা যে পরিচয়ে চিনি, এর অন্তরালে তার এক বা একাধিক ভিন্ন পরিচয় থাকে।হয়ত সবারই থাকেনা, তবে অনেকেরই থাকে।

তিনি অভিনেতা হিসেবে সুপরিচিত হলেও পেশাগত জীবনে একজন ডক্তার। হুমায়ূন আহমেদের নাটকের মধ্য দিয়ে ছোট পর্দায় তার আগমন ঘটে।

১৯৮৪ সালে রংপুর মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাশ করেন তিনি। পরবর্তিতে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ থেকে নিউক্লিয়ার মেডিসিনে স্নাতকোত্তর পাশ করেন। পেশা হিসেবে বেছে নেন ডাক্তারিকে।

গাজীপুর চৌরাস্তায় একটি চেম্বারে নিয়মিত রোগি দেখেন।সরকার নির্ধারিত ৩০০ টাকা ফি দিয়ে রোগী দেখেন তিনি। ভিজিট ফী কম হওয়ার কারনে তাকে গরীবের ডাক্তার বলে অভিহিত করা হয়।

অভিনয়ের পাশাপাশি ডাক্তারি জগতে কৃতিত্ব দেখানো এজাজুল ইসলামের জন্ম ময়মনসিংহে। তিনি ডাঃ এজাজ নামেও পরিচিত। তার একমাত্র সন্তানের নাম আবু বকর সিদ্দিক।

তার অভিনয়ের কৃতিত্ব সরুপ জিতে নেন ৩৯ তম জাতিয় চলচ্চিত্র পুরসস্ককার। চলচ্চিত্রে অভিনয়ের পাশাপাশি নিজের ডাক্তারি পেশাটাকেও চালিয়ে নেন এজাজুল ইসলাম।এর ফলসরুপ ২০১৭ সালে তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজে নিউক্লিয়ার মেডিসিনের প্রধান হিসেবে যোগ দেন।