সদরুল আইন, স্টাফ রিপোর্টার ১ জানুয়ারি ২০২৪ , ৩:২৭ অপরাহ্ণ প্রিন্ট সংস্করণ
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে ৭ জানুয়ারি। এই নির্বাচনে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি অংশগ্রহণ করছে না।
বিএনপির অংশগ্রহণ ছাড়াই একটি উৎসবমুখর অংশগ্রহণমূলক, অবাধ এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেছে আওয়ামী লীগ এবং নির্বাচন কমিশন।
এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সবচেয়ে বড় অস্ত্র প্রয়োগ করা হচ্ছে স্বতন্ত্র প্রার্থী। সারা দেশের বিভিন্ন স্থানে স্বতন্ত্র প্রার্থীরাই নির্বাচনী আমেজ তৈরি করেছেন বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
তবে ভোটের আগে সারা দেশের ৩০০ আসনের পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে যে, ৩০০টি আসনে এই একই উত্তেজনা তৈরি হয়নি। বরং ১০৮ টি আসনে নির্বাচনে তুমুল উত্তেজনা দৃশ্যমান, যে আসনগুলোতে আওয়ামী লীগের সঙ্গে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে বা জাতীয় পার্টির সঙ্গে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা ওই নির্বাচনী এলাকার ভোটকে জমিয়ে তুলেছে।
কিন্তু বাকি ১৯২ টি আসনে ভোটারদের নির্বাচন নিয়ে তেমন আগ্রহ নেই এবং এখন পর্যন্ত ভোটে এই সমস্ত নির্বাচনী এলাকাগুলোতে সাধারণ মানুষের মধ্যে তেমন কোন উত্তেজনা সৃষ্টি হয়নি।
আর আগামী ৬ দিন অর্থাৎ ভোটের আগের দিন পর্যন্ত যারা প্রার্থী হয়েছেন তাদের প্রধান চ্যালেঞ্জ হল এই সমস্ত নিরুত্তাপ আসনগুলোতে ভোটার উপস্থিতি বাড়ানো।
আওয়ামী লীগ ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ ভোটার উপস্থিতি নিশ্চিত করার একটা চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেছে। তাহলে এই নির্বাচন আন্তর্জাতিক মহলে গ্রহণযোগ্যতা পাবে, স্বীকৃতি পাবে।
তার চেয়ে কম ভোটার উপস্থিতি যদি হয় সে ক্ষেত্রে এই নির্বাচন গ্রহণযোগ্যতা সঙ্কটে পড়বে। তবে আওয়ামী লীগ নেতারা মনে করছেন কোথাও কোথাও ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত ভোট পড়বে। তবে স্পর্শকাতর আসনগুলোতে ভোটার উপস্থিতি কম হওয়ার শঙ্কা আওয়ামী লীগ করছে।
যে ১৯২ টি আসনে আওয়ামী লীগ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে এবং সেই সমস্ত আসনে তাদের বিজয় মোটামুটি নিশ্চিত। কিন্তু প্রশ্ন হল, এখানে যে সমস্ত প্রার্থীরা রয়েছেন বিরোধী দলের বা স্বতন্ত্র, তারা অত্যন্ত দুর্বল নামকাওয়াস্তে প্রার্থী।
ফলে ভোটের মাঠে কারও তেমন কোন কার্যক্রম দেখা যাচ্ছে না। তবে কিছু কিছু আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরাই ভোট উৎসব জমিয়ে দেওয়ার জন্য বিরামহীন নির্বাচনী প্রচারণা করছেন। যেমন ঢাকা-৮ এবং ঢাকা-১৩ আসনের কথাই ধরা যাক। এই দুটি আসনে আওয়ামী লীগের দুজন জনপ্রিয় প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
এদের মধ্যে একজন বাহাউদ্দিন নাসিম। তিনি আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং ঢাকা-৮ থেকে অর্থাৎ রাশেদ খান মেননের আসন থেকে নির্বাচন করছেন। এই আসনে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে একটা উৎসবের আমেজ লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
বিরামহীন ভাবে তারা প্রচারণা করছেন। কিন্তু শেষপর্যন্ত ভোটের দিন কত ভোটার উপস্থিত হবেন সেটা নিয়ে তাদের মধ্যে অনিশ্চয়তা রয়েছে।
একই অবস্থা জাহাঙ্গীর কবির নানকের মোহাম্মদপুর আসনে। তিনি ২০০৮ এবং ২০১৪ তে এই আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। কিন্তু গতবার তিনি মনোনয়ন পাননি। এবার তাকে ঘিরে কর্মীদের মধ্যে এক ধরনের উৎসবের জোয়ার বইছে।
তবে প্রশ্ন হল যে শুধু আওয়ামী লীগের ভোট নাকি সাধারণ ভোট এবং সাধারণ ভোটার আনার ক্ষেত্রে তিনি কতটুকু সফল হবেন, সেটাই দেখার বিষয়।
আওয়ামী লীগ মনে করে যে, এই নির্বাচনে যে চ্যালেঞ্জগুলো ছিল সেই চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে একে একে সব চ্যালেঞ্জ তারা মোকাবেলা করতে পেরেছে। বিনা ভোটে নির্বাচন হয়নি। স্বতন্ত্র প্রার্থীরা সমান সুযোগ সুবিধা পাচ্ছেন।
নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ অবস্থানে থেকে নির্বাচন পরিচালনা করছে। এখন পর্যন্ত নির্বাচনে বড় ধরনের পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ ওঠেনি। এখন হল নির্বাচনে আসন পরীক্ষা এবং সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ তা হল ভোটার উপস্থিতি।
ভোটার উপস্থিতি বাড়ানোটাই আওয়ামী লীগের জয়ের পরাজয়ের মাপকাঠি বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
সেক্ষেত্রে এই ১৯২ টি আসনে আওয়ামী লীগ কীভাবে ভোটার আনবে সেটি হল বিষয়। যেমনটি ঢাকার দুটি আসনের কথা বলা হচ্ছিল যে দুটি আসনে জনপ্রিয় প্রার্থী থাকার কারণে নেতাকর্মীদের মধ্যে উৎসাহ উদ্দীপনা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
আবার তেমনই ধানমন্ডি, গুলশানের আসনে প্রচার প্রচারণা অনেকটাই ম্যাড়মেড়ে আকর্ষণহীন। এখন দেখার বিষয় যে ঢাকার আসনগুলোর মতো অন্যান্য আসনগুলোতে এক আসনের প্রার্থী অন্য আসনের প্রার্থীদের সহায়তা করে সামগ্রিকভাবে ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে পারেন কিনা।