অনলাইন ডেস্ক ২২ নভেম্বর ২০২৩ , ৭:০১ অপরাহ্ণ প্রিন্ট সংস্করণ
বিভিন্ন দল থেকে নেতা কিনতে গরুর হাটের মতো দরদাম চলছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব এ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, আওয়ামী সরকারের কিংস পার্টিতে যোগ দিতে দেশপ্রেমিক বহু নেতাকে চাপ-প্রলোভন-ভয়ভীতি প্রদর্শন করা হচ্ছে। ছলে বলে কৌশলে, টোপ দিয়ে কাউকে কাউকে বাগানো হচ্ছে।
আবার কেউ কেউ জনগণের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে না গিয়ে বিরোধী দলের লেবাসে ফ্যাসিবাদের দোসর হয়ে তথাকথিত এইসব কিংস পার্টি, ভূইঁফোড়, ছিন্নমূল পার্টি হালুয়া-রুটির ভাগ প্রাপ্তির লালসায় ফ্যাসিস্টদের বর্তমান আস্তানা গণভবন-বঙ্গভবনে ছুটোছুটি করছেন।
বুধবার (২২ নভেম্বর) বিকেলে ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। রিজভী বলেন, দেশের কৃষক-শ্রমিক, দিনমজুর, স্বল্প আয়ের মানুষ, শ্রমজীবী-কৃষিজীবী, পেশাজীবী, সম্মানিত আলেম ওলামাসহ সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ তথা গার্মেন্টস শ্রমিকসহ দেশের সকল নাগরিক বর্তমানে মানবিক মর্যাদা হারিয়ে, রাজনৈতিক অধিকার হারিয়ে, ভোট প্রয়োগের অধিকার হারিয়ে নিজ দেশেই যখন শেখ হাসিনার মাফিয়া চক্রের শৃংখলে বন্দী তখন আত্মা বিক্রি করা কিছু লোক সামান্য খুদ-কুড়োর লোভে তারা বিবেক বিবেচনাহীনভাবে তামাশার নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন।
‘এসব রদ্দি মার্কা বেইমান দলছুটরা ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হবেন। কিন্তু এই সমস্ত রং বদলানো পরজীবী রাজনীতিবিদরা জনগণের সংকেতবার্তা টের পাচ্ছেন না, জনগণ খুব দ্রুতগতিতে ধেয়ে যাচ্ছে সরকারের সিংহাসন ধুলোয় লুটিয়ে দিতে, জনগণের সেই পদচিহ্ন লক্ষ্য করতে পারছে না এই নব্য রাজাকারেরা।’
আগের দুই ইসির মতো ভাঁওতাবাজীর নির্বাচনের পথেই হাঁটছেন কাজী আউয়ালগং মন্তব্য করে বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, গণতন্ত্রকামী কোটি কোটি মানুষকে মাফিয়া চক্রের নিপীড়নের মুখে ঠেলে দিয়ে শেখ হাসিনার গৃহপালিত প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালের তফসিল নাটক স্রেফ ভাগ বাটোয়ারার নির্বাচনকে বৈধতার সিলমোহর দেয়ারই কারসাজি মাত্র। কাজী রকিব আর নুরুল হুদার দেখানো ভাঁওতাবাজীর নির্বাচনের পথেই হাঁটছেন কাজী আউয়ালগং।তিনি বলেন, দেশের জনগণ মাফিয়া চক্রের এই ভুয়া তফসিল প্রত্যাখ্যান করায় ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা এখন মঈন-ফখরুদ্দিনের মতো তথাকথিত কিংস পার্টি, ভূইঁফোড় পার্টি, ড্রিঙ্কস পার্টি, ছিন্নমূল পার্টি তৈরি করে তাদেরকে দিয়েই তামাশার নির্বাচন মঞ্চস্থ করতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন।
রিজভী বলেন, গণবিচ্ছিন্ন এ সরকার সুষ্ঠু নির্বাচনের বদলে অতীতের মতো প্রহসন করে ক্ষমতায় টিকে থাকার উগ্র বাসনা থেকেই চরম নির্লজ্জভাবে জুলুম-নির্যাতন, চক্রান্ত, নাশকতা ও মিথ্যাচারের পথ বেছে নিয়েছে। চলছে জুলুম, উৎপীড়নের বহুমাত্রিক তৎপরতা। মাফিয়া চক্র গণতন্ত্রকামী জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। গণতন্ত্রের শেষ চিহ্ন মুছে দিতে গেষ্টাপো বাহিনীর কায়দায় গড়ে তোলা গোয়েন্দা পুলিশ, র্যাব বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের বাড়িঘরে সাঁড়াশি অভিযান চালাচ্ছে। গ্রেফতার করে তুমুল ভাঙচুর করা হচ্ছে বাড়িঘরে। বিএনপি নেতাকর্মীদের তুলে নিয়ে যাওয়ার পর থেকে ‘নিখোঁজ’ ব্যক্তিদের কারাগারে খুঁজে বেড়াচ্ছেন স্বজনেরা।
তিনি বলেন, দেশের প্রতিটি জনপদ-গ্রাম-গঞ্জ-শহর-বন্দরে গ্রেফতার আতঙ্কে ভয়ার্ত পরিবেশ বিরাজ করছে। একাত্তরের যুদ্ধকালীন সময়ের মতো। সরকার পুলিশ-র্যাবের পাশাপাশি হেলমেট বাহিনী নামিয়েছে। সরকারবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় নেতাকর্মীদের বেছে বেছে তাদের বাড়িতে হেলমেট বাহিনী হামলা ভাঙচুর ও লুটপাট চালাচ্ছে। গুপ্ত হামলা, বোমা হামলা চালাচ্ছে। গণতন্ত্রপন্থিদের ধরে নির্যাতন করে পুলিশে দিচ্ছে। আবার আটক বাণিজ্য করছে।
রিজভী অভিযোগ করে বলেন, গত ২৮ অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত সারাদেশে বিএনপি এবং গণতন্ত্রের পক্ষের রাজনৈতিক দলগুলোর ১৩ হাজারের বেশি নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আওয়ামী হানাদার বাহিনীর আক্রমণে সারাদেশে বিএনপির প্রায় দুই কোটি নেতাকর্মী দিনের পর দিন ঘরছাড়া। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, প্রশাসন, আদালত, বিচারক সবাইকে প্রধানমন্ত্রীর তল্পিবাহকে পরিণত করা হয়েছে। এই তল্পিবাহকরা মনে করছেন শেখ হাসিনাই হলো আইন। র্যাবের মতো গোয়েন্দা পুলিশও এখন মূর্তিমান আতঙ্কে পরিণত হয়েছে। এদের নেতৃত্ব দিচ্ছে আওয়ামী লীগের দলীয় অনুগত উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা। গণভবন-বঙ্গভবনে খোলা হয়েছে কমান্ড সেন্টার।তিনি বলেন, একতরফা নির্বাচনের জন্য অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে দেশে একটি অস্বাভাবিক পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়েছে। ‘জয়বাংলা বলে আগে বাড়ো’ শ্লোগান দিয়ে আমলা ও পুলিশের মতো দেশের বিচারকগণও দুর্বার গতিতে অন্ধ-অবিচারে কাজ করে যাচ্ছে। আমলা, পুলিশ ও বিচারকগণ সকলে একত্রে দ্রুত ও দর্পিত পদক্ষেপে কাজ করে যাচ্ছে। সরকারের নির্দেশে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের মিথ্যা ও গায়েবি মামলায় সাজা দেয়া হচ্ছে। বিচারের নামে ক্যামেরা ট্রায়াল ও রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের আদালতে সাজানো সাক্ষীর মুখে শেখানো বুলি শিখিয়ে এবং দীর্ঘক্ষণ আটকিয়ে রেখে কক্ষে কক্ষে কন্সেন্ট্রেশন ক্যাম্পের আদলে নির্দয় ব্যবহার করা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, গত ৪০ দিনে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় করা ২৬টি মিথ্যা মামলায় কথিত বিচার কার্যক্রমের নামে বিএনপির ৪১৫ নেতাকর্মীকে সাজা দিয়েছেন ঢাকার আদালত। এখন গায়েবি মামলার মতো গায়েবি সাজা দেয়া হচ্ছে। আগে মৃত ব্যক্তি কবর থেকে উঠে ভোট দিতো আর এখন মৃত ব্যক্তিকে সাজা দেয়া হচ্ছে। বিরোধীদল করলে মরেও শান্তি নাই।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, পৃথিবীর ইতিহাসে নজিরবিহীন ঘটনা ঘটেছে গত পরশু বাংলাদেশে, যেখানে মৃত ও গুম হওয়া ব্যক্তিকে সাজা দিয়ে নির্বাচনে অযোগ্য করেছে আওয়ামী জাহেলিয়াতের আদালত। প্রায় চার বছর আগে মারা যাওয়া নিউমার্কেট থানার ১৮ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আবু তাহের দাইয়াকে আড়াই বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
‘১০ বছর আগে র্যাবের হাতে গুম হওয়া বিএনপি নেতা সাজেদুল ইসলাম সুমন এবং ৮ বছর আগে গুম হওয়া বিএনপি নেতা আমিনুল ইসলাম জাকিরকে আড়াই বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।’
তিনি বলেন, শেখ হাসিনার ভয়ে দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়া সাবেক প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা বলেছিলেন, ‘রায় সব আসে গণভবন থেকে। এগুলা তদন্তের দরকার নাই, বিচার হয় না, খালি রায় বের হয়ে যায়।’ সুতরাং যারা বিচারকের আসনকে মজলুমদের জুলুমের মঞ্চ বানিয়েছেন এবং সেখানে বসে এই ধরনের তামাশা করছেন তাদেরও বিচার জনগণ একদিন করবে। ইতিহাসের পাতা থেকে এগুলো মুছে ফেলা যাবে না। বিচারকের নাম এবং তার রায় ইতিহাসে থাকবে।বিএনপির এই নেতা বলেন, অবৈধ আওয়ামী সরকারের পদত্যাগসহ নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের এক দফা দাবিতে জনগণের আন্দোলন সাফল্যের দ্বারপ্রান্তে এখন। ফ্যাসিবাদী সরকার এই শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে বানচাল করার জন্য নিজেরা আগুন সন্ত্রাস, জ্বালাও পোড়াওয়ের তান্ডব চালাচ্ছে। আর বিএনপির ওপর দায় চাপিয়ে অপবাদ দিয়ে যাচ্ছে। অথচ আপনারা দেখেছেন যারা ধরা পড়ছে তারা ক্ষমতাসীনদের লোক।
‘সোমবার দিবাগত রাত ১২টায় ভোলার লালমোহনে ধলীগৌরনগর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম জয়ের বাড়িতে বোমা বানাতে গিয়ে ভয়াবহ বিস্ফোরণে বোমার কারিগর নিহত হয়েছে। জনগণের সরকার বিরোধী আন্দোলন প্রশ্নবিদ্ধ করতে সারাদেশে সরকারী দলের নেতাকর্মীরা এরকম বোমা বানিয়ে বোমা হামলা করছে এবং অগ্নিসন্ত্রাস চালাচ্ছে।’
প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে রিজভী আরও বলেন, আমি প্রধানমন্ত্রীকে বলবো ক্ষমতায় থাকার এইসব পরিকল্পনা বন্ধ করে পদত্যাগ করুন। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন। অন্যথায় পতনের জন্য প্রস্তুত থাকুন। যে পতন হবে আপনার দলের জন্য খুবই দুঃখজনক।