এস এম রাফি ২ অক্টোবর ২০২৩ , ৪:৫৯ অপরাহ্ণ প্রিন্ট সংস্করণ
কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরীতে পূর্ব শত্রুতার জের ধরে বর্তমান সময়ের পল্লীকবি খ্যাত স্বভাব কবি রাধাপদ রায়ের উপর সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটেছে।
হামলার শিকার কবি রাধাপদ রায় (৮০) গুরুতর আহত অবস্য়হায় বর্তমানে নাগেশ্বরী উপজেলা স্বাস্হ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এ ঘটনায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে নাগেশ্বরী থানায় মামলা দায়ের করেছেন রাধাপদ রায়ের ছেলে জুগল রায়।
রোববার (১ সেপ্টেম্বর) রাতে মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নাগেশ্বরী থানার অফিসার ইনচার্জ আশিকুর রহমান। পল্লীকবি রাধাপদ সরকার নাগেশ্বরী উপজেলার ভিতরবন্দ ইউনিয়নের মাধাইখাল, গোড্ডারাপাড় বটতলা এলাকার বাসিন্দা।
এজাহার ও স্হানীয় সুত্রে জানা যায়, পার্শ্ববর্তী কচুয়াপাড় এলাকার মৃত মোহাম্মদ আলীর ছেলে রফিকুল ইসলাম (৩৫) ও কদুর রহমান (৪৫) এর সাথে প্রায় ৭ বছর আগে কথা কাটাকাটির জের ছিলো। সেই পূর্ব বিরোধের জেরে মাঝে মাঝেই তারা কবি রাধাপদ রায়কে মারধর, ভয়ভীতিসহ নানাভাবে হুমকী দিয়ে আসছিলো। পরে এক পর্যায়ে গেলো ৩০ সেপ্টেম্বর সকালে রাধাপদ রায় বাড়ির পাশের ডুবুরির ব্রিজের কাছে মাছ ধরতে গেলে সেখানে অস্ত্রশস্ত্র ও লাঠিশোঠা নিয়ে রফিকুল ইসলাম ও কদুর রহমান মিলে তার উপর অতির্কিত হামলা চালিয়ে মারপিট করে আহত করে। এ সময় তার চিৎকার শুনে আশেপাশের লোকজন তাকে গুরুতর আহত অবস্হায় উদ্ধার করে নাগেশ্বরী উপজেলা স্বাস্হ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করায়। বর্তমানে তিনি ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।
পল্লীকবি রাধাপদ রায়ের ছেলে জুগল রায় বলেন, প্রায় ৭ বছর আগে আমার বড় ভাইয়ের সাথে অন্য একজন লোকের লেনদেন ছিলো। সে সময় ওই ব্যাক্তির পক্ষ নিয়ে কদুর রহমান আমাদের বাড়িতে বাড়ির লোকজনকে অকথ্যভাষায় গালিগালাজ করে। সেদিন বাবা এসব শুনে প্রতিবাদ করলে আমার বাবাকে দেখে নেয়ার হুমকী দিয়ে বাড়ি থেকে চলে যায়। পরে তখন থেকে তারা আমার বৃদ্ধ বাবাকে প্রাণে মারার জন্য বিভিন্নভাবে হুমকী দেয়াসহ আক্রমণের সুযোগ খুজছিলো। পরে বাবা সেদিন মাছ ধরতে গেলে সুযোগ বুঝে বাবার উপর হামলা করে প্রাণ নাশের চেষ্টা চালায়। আমার বৃদ্ধ বাবাকে তারা যেভাবে মেরেছে, তা বলে শেষ করতে পারবো না। আসামীদের দ্রুত গ্রেফতার করে ন্যায় বিচারের দাবি জানাচ্ছি।
রাধাপদ রায়ের স্ত্রী মিনতি রানী বলেন, আমরা সংখ্যালঘু আর গরিব বলে কি আমাদের সমাজে কোনো দাম নাই? আমার স্বামী বিভিন্ন জায়গায় কবিতা বলে, গান গেয়ে যে কয় টাকা আয় করে তা দিয়ে আমাদের সংসার চলে। আর তার উপর এভাবে অত্যাচার করেছে। আমি ওই সন্ত্রাসীদের বিচার চাই।
এবিষয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ আশিকুর রহমান বলেন, খবর পেয়ে তাকে দেখার জন্য হাসপাতালে গিয়েছি। তিনি এখনও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। আসামীদের গ্রেফতারের জন্য গতকাল (১ অক্টোবর) এবং আজ (২অক্টোবর) দুইদিনই যাওয়া হয়েছে। তারা পলাতক আছে। তবে সর্বো”চ প্রায়োরিটি দিয়ে আসামীদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
উল্লেখ্য কবি রাধাপদ রায় ব্যাক্তিগত জীবনে বেশিদুর পড়ালেখা করতে পারেননি। পড়েছেন মাত্র পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত। নিজের লেখা গান, কবিতা মানুষকে শুনিয়ে সামান্য উপার্জনে চলে তার সংসার। আঞ্চলিক ভাষায় তার লেখা গান ও কবিতাগুলো বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। ইতোমধ্যে তার লেখা কবিতা “কেয়ামতের নমুনা, জানি কিন্তু মানি না” “বউয়ের কান্ড” শিরোনামে কবিতা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। এখন পর্যন্ত রাধাপদ রায়ের নিজের লেখা আঞ্চলিক ভাষায় শতাধিক গান ও কবিতা রয়েছে।