এস এম রাফি ১ আগস্ট ২০২৩ , ১০:৫৬ পূর্বাহ্ণ প্রিন্ট সংস্করণ
চীন বিদেশে বসবাসরত উইঘুরদের, দেশে থাকা পরিবারকে জিম্মি করে গুপ্তচরবৃত্তি করার জন্য চাপ দিয়ে আসছে। শরণার্থী এবং অ্যাক্টিভিস্টরা বলেছেন, ভয় দেখানোর এই কৌশল সম্প্রদায়গুলোকে বিচ্ছিন্ন করে দিচ্ছে। আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানা গেছে। উত্তর-পশ্চিম চীন থেকে আসা বেশিরভাগ মুসলিম সংখ্যালঘুরা বিদেশে কঠোর নজরদারি এবং নিয়ন্ত্রণে থাকেন। তারা একে অপরকে সরাসরি ফোনও করতে পারেন না।
উইঘুর সম্প্রদায়ের একজন আলিম (ছদ্মনাম) বলেন, একজন অফিসার লন্ডনে তাকে উইঘুর মানবাধিকার কর্মীদের মিটিংয়ে যোগ দিতে এবং গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করতে বলেছে। তিনি বলেন, যখনই লন্ডনে চীন বিরোধী কোনো প্রতিবাদ হতো, তারা আমাকে ফোন করত এবং জিজ্ঞাসা করত কে সেখানে উপস্থিত থাকবে! আলিম বিবিসিকে গুপ্তচর হিসেবে কাজ করার অনুরোধ জানিয়ে করা ফোন কলের একটি রেকর্ডিং শেয়ার করেছিলেন।
আলিমকে অর্থের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল, যাতে তিনি প্রচারাভিযান গোষ্ঠীর নেতাদের সাথে বন্ধুত্ব করার চেষ্টা করতে পারেন, যাদের মধ্যে অনেকেই যুক্তরাজ্যের নাগরিক। গুপ্তচর হিসেবে কাজ করতে রাজি না হলে, তার পরিবারের ক্ষতি হতে পারে বলে তাকে হুমকিও দেয়া হয় বলে জানান আলিম। তিনি বলেন, তারা আমার পরিবারকে জিম্মি হিসেবে ব্যবহার করছে। আমি একটি অন্ধকার মুহূর্তে বাস করছি।
গবেষণায় দেখা যায়, সাধারণত চীনা পুলিশ ব্যবহার করে এই ধরণের কাজ করে চীন।
শেফিল্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ডা. ডেভিড টোবিন তার সহকর্মী নাইরোলা এলিমার সাথে আজ পর্যন্ত এই বিষয়ে সবচেয়ে ব্যাপক গবেষণা পরিচালনা করেছেন। তারা বিভিন্ন দেশে বসবাস করা উইঘুর প্রবাসীদের সাথে সাক্ষাৎ করেছেন। তিনি বলেন, চীনের বাইরে বসবাসকারী উইঘুররা আন্তর্জাতিক দমন-পীড়নের শিকার। পারিবারিক বিচ্ছেদ হলো কেন্দ্রীয় কৌশল। এমনকি যেখানে ফোন করা প্রযুক্তিগতভাবে খুবই সহজ কাজ সেখানে এখনও চীনে বসবাসকারী আত্মীয়রা ফোন কল করবে না। কারণ তারা জানে যে কলগুলো পর্যবেক্ষণ করা হবে।
টোবিন যুক্তরাজ্যে বসবাসরত ৪৮ জনের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন। এর মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশের সাথেই চীনা পুলিশ সরাসরি যোগাযোগ করেছে। গুপ্তচরবৃত্তির জন্য চাপ দেওয়া, অ্যাডভোকেসি কাজ থেকে বিরত থাকা এবং মিডিয়ার সাথে কথা বলা বন্ধ করার জন্য চাপ দেওয়া হয়েছে তাদের।
তুরস্ক উইঘুরদের জন্য একটি নিরাপদ আশ্রয়স্থল যেখানে ৫০ হাজারের বেশি উইঘুর বসবাস করে। সেখানে সাক্ষাৎ নেওয়া ১৪৮ জনের মধ্য ৮০ শতাংশই চীনা কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে হুমকির কথা জানিয়েছেন। তবে চীন শুধুমাত্র সেইসব দেশের মানুষকেই টার্গেট করছে না যেখানে তার অর্থনৈতিক আধিপত্য রয়েছে। ওয়াশিংটন ডিসিতে উইঘুর মানবাধিকার প্রকল্পের সাথে কাজ করা মার্কিন বংশোদ্ভূত কর্মী জুলি মিলসাপ বলেছেন, চীন তার শ্বশুরবাড়ির মাধ্যমে তাকে চাপ দেওয়ার চেষ্টা করেছে।
তিনি বলেন, তার স্বামী হান চীনা নাগরিক। তিনি এবং তার স্বামী তার ভগ্নিপতির ফোন থেকে হুমকিমূলক বার্তা পেয়েছিলেন। তাদের মৃত্যু হুমকি দেওয়া হয়েছিল। তিনি মনে করেন, এটি উদ্বেগজনক যে চীনা কর্তৃপক্ষ বিদেশি নাগরিকদের লক্ষ্যবস্তু করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে এবং তাদের কাজের আদেশ দেওয়ার চেষ্টা করে।
চীনা সরকার এক মিলিয়নেরও বেশি উইঘুরকে আটক করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। যদিও এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে তারা। এদিকে আন্তর্জাতিক দমন-পীড়নের এই অভিযোগকে ‘সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন’ বলে অভিহিত করেছে চীন। চীন সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, আইন অনুসারেই উইঘুরদের এবং বিদেশি আত্মীয়দের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করা হয়।