সারাদেশ

ফুলবাড়ীতে গরুর গোবরের তৈরি লাকড়িতেই পুরণ হচ্ছে জ্বালানি চাহিদা 

  উত্তম কুমার মোহন্ত ফুলবাড়ী (কুড়িগ্রাম) ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪ , ৪:৩৭ অপরাহ্ণ প্রিন্ট সংস্করণ

দেশে কিছুদিন পর পরেই লাগামহীন ভাবে বাড়ছে গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম। সেই সুযোগে  কিছু অসাধু ডিলার চক্র বাজারে এলপিজি গ্যাসের কৃত্রিম সংকট তৈরি করছেন।এদিকে প্রতিটি গ্যাস সিলিন্ডারের মুল্যে সরকারি ভাবে নির্ধারিত থাকলেও সরকারের যথাযথ পদক্ষেপ না থাকায় স্থানীয় ডিলাররা যত্রতত্র ভাবে বেশি দামে বিক্রি করছেন। অব্যাহত মুদ্রাস্ফীতির বাজারে খরচ মেটাতে নিম্ন ও নিম্নমধ্যবিত্ত মানুষের নাভিশ্বাস উঠার উপক্রম হয়েছে। যার কারণে গ্রামাঞ্চলের মানুষজন গ্যাসের পরিবর্তে বিকল্প কোন সমাধান খুঁজছেন।

কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে সাম্প্রতিক সময়ে গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধিতে, গ্রামাঞ্চলের নিম্ন ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত মানুষজন বর্তমানে জ্বালানি খরচ যোগাতে হিমশিম খাচ্ছেন। এদিকে দিন দিন কাঠ ও খড়ির দামও বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই সবকিছু থেকে উত্তরণের জন্য জ্বালানি সাশ্রয়ীতে বর্তমানে উপজেলা জুড়ে মানুষ গরুর গোবরের তৈরি শুকনো লাকড়ি ও লাড়ু দিয়ে জ্বালানি চাহিদা পূরণ করেছেন। একসময় প্রতিটি গ্রামাঞ্চলে এই সনাতন পদ্ধতির জ্বালানি খুব জনপ্রিয় ছিল। সময় ও যুগের পরিবর্তনে আধুনিকতার উন্নয়নের ছোঁয়া প্রতিটি গ্রামাঞ্চলে পৌঁছে যাওয়ায় গ্যাস বিদ্যুতের প্রাদুর্ভাবে এইসব সনাতন পদ্ধতির অবসান ঘটে। সম্প্রতি কালে গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধিতে নিম্ন ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত মানুষজন এই উদ্বুদ্ধ পরিস্থিতিতে আবারও সনাতন পদ্ধতির জ্বালানিতে ভিরতে বসেছে।

উপজেলার বিভিন্ন গ্রামাঞ্চলে ঘুরে দেখা গেছে জ্বালানির খরচ সাশ্রয়ীতে গ্রামের গৃহবধূরা  বাড়ির উঠানে বা ফাঁকা জায়গায় পিরিতে বসে মাথায় ঘোমটা দিয়ে গৃহপালিত পশু গরুর গোবর বালতিতে কিছু পানি কাঠের গুঁড়া বা ধান ভাঙ্গানো তুষ এক সাথে মিশিয়ে হাত দিয়ে চেপে খোশ গল্পে মেতে লাড়ু,ও পাটকাঠির শলাকায় গোবর চিপে দিয়ে লাকড়ি তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।এব্যাপারে নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের কুরুষা ফেরুষা গ্রামের গৃহবধূ প্রতিমা রানী বয়বৃদ্ধ মিনতি বেওয়া কাশিপুর ইউনিয়নের অনন্তপুর গ্রামের রুজিনা বেগম,জয়গুন বেগম সহ বেশ কয়েকজন গৃহবধূর সাথে কথা বলে জানাগেছে,বর্তমানে গ্যাসের দাম যে হারে বাড়ছে সেই জন্য আমরা আর গ্যাস ব্যবহার করিনা। সকালে ঘুম থেকে উঠে গোয়ালঘরে ঢুকে ডালি ভরা গরুর গোবর বাহির করে সাথে পানি,কাঠের গুঁড়া বা ধানের তুষ নিয়ে সকালের হালকা সূর্যের আলোর রশ্মিতে বসে গোবর চিবিয়ে লাড়ু ও দুই -তিন হাতের পাটকাঠি দিয়ে শলাকা তৈরিতে ব্যস্ত থাকি। তারপর কাঁচা লাড়ু ও শলাকা গুলোকে বাঁশের আড় বেঁধে লম্বালম্বি করে দার করিয়ে ও লাড়ু গুলোকে মাটিতে শুকাতে দেই ৫ থেকে ৬ দিনের মধ্যে শুকিয়ে গেলে ঘরে তুলে জমিয়ে রেখে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করবো। বর্ষা বাদলের দিনেও লাকড়ি দিয়ে রান্নাবান্নার কোন সমস্যা হয় না।

এদিকে গরুর গোবর সাধারণত কৃষি জমিতে উৎকৃষ্ট জৈব সার হিসেবে ব্যবহৃত হয়, এবং জমির উর্বরা শক্তি বাড়ায়।কিন্তূ সম্প্রতি কালে গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধিতে গ্রামাঞ্চলের নিম্ন ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত মানুষ জ্বালানি সাশ্রয়ের জন্য গরুর গোবর দিয়ে তৈরি লাড়ু,লাকড়ির দিকে যেভাবে ঝুঁকে পড়ছেন তাতে করে ভবিষ্যতে একসময় গোবরের অভাবে কৃষি জমির উর্বরা শক্তি কমে যাবে এবং কৃষকদের কৃষি উৎপাদনের প্রধান জৈব সারের সংকট দেখা দিবে বলে অনেকে আশঙ্কা করছেন।

এব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নিলুফা ইয়াসমিন জানান,বর্তমানে গোবরের তৈরি লাকড়ি জ্বালানি হিসেবে খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।তিনি আরও বলেন, গোবরের তৈরি লাকড়ি জ্বালানি হিসেবে ব্যবহারে কৃষি কাজে জৈব সারের সংকট প্রশ্নেই উঠে না। কারণ জৈব সার যে শুধু গরুর গোবর থেকে হয় তা নয় অনন্যা উপাদান দিয়ে ও জৈব সার তৈরি হয়। এক্ষেত্রে কৃষি উৎপাদনে এর  কোনরকম প্রভাব পড়বে না।