উত্তম কুমার মোহন্ত ফুলবাড়ী (কুড়িগ্রাম)প্রতিনিধি: ২৫ জুন ২০২৫ , ২:৩৯ অপরাহ্ণ প্রিন্ট সংস্করণ
কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার ভাঙ্গামোড় ইউনিয়নের খড়ি বাড়ি জিসি-খোচাবাড়ি তালের তল জোলের (ছড়ার) উপর নির্মিতব্য সিতুটি চার বছরেও নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়নি। ফলে বর্ষা মৌসুমে জনদুর্ভোগে পরেছে ১০ গ্রামের অন্তত ২০ হাজার মানুষ। স্থানীয়রা বলছেন সেতুর দুই পার্শ্বে দেয়াল নির্মাণ করতে যদি চার বছর লাগে তাহলে পুরো সেতু নির্মাণ করতে কত বছর যে লাগবে আল্লাহ যানে। বর্তমানে ছড়াটি পারাপারের জন্য একমাত্র উপায় হচ্ছে ড্রামের ভেলা। প্রতিদিনে শতশত নারী, পুরুষ, বৃদ্ধ শিশু জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ড্রামের ভেলায় পারাপার হতে প্রায়ই সময় ঘটছে দুর্ঘটনাও।
উপজেলা প্রোকৌশলী অফিস সূত্রে জানা গেছে, ভাঙ্গামোড় ইউনিয়নের খড়ি বাড়ি জিসি-খোচাবাড়ি ভায়া ভাঙ্গামোড় ইউনিয়ন পরিষদের সড়কের ৬৭০০মিটার চেইনেজে ৪২মিটার দীর্ঘ আরসিসি গার্ডার ব্রীজ নির্মাণের জন্য প্রাক্কালীন ৩কুটি ২৬লাখ ১৪হাজার ৩২০টাকা ব্যয়ে ব্রীজটি নির্মিত হবে মর্মে নিয়মিত দরপত্র অনুযায়ী কুড়িগ্রাম লুফা-জেডএইচডি জেভি নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি এ কাজের দায়িত্ব পান। নিয়মানুযায়ী ২০২১সালের ১৯এপ্রিল ব্রীজটি নির্মাণের কাজ শুরু করে ২০২২সালের ১৮ এপ্রিল কাজ সম্পন্ন করার কথা থাকলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি এপর্যন্ত ব্রীজটির দু’পাড়ে শুধুমাত্র দেয়াল নির্মাণ করে ক্ষ্যান্ত। স্থানীয়দের মতে ঠিকাদার নিজে কাজের গাফিলতি করে কালক্ষেপণ করছে। তা নাহলে এপর্যন্ত ব্রীজের দু’পাড়ে শুধুমাত্র দেয়াল নির্মাণ করতে চার বছর পার হয়ে যায়। তাহলে পুরো ব্রীজের কাজ শেষ করতে আরো কত বছর যে লাগবে। এনিয়ে স্থানীয় জনসাধারণের মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে।
ব্রীজটির নির্মাণের কাজ সঠিক সময়ে শেষ না হওয়ায় খোঁচা বাড়ি, রাঙামাটি ভাঙ্গামোড়, নগরাজপুর ভেরভেরি,সুবারকুটি, চন্দন পাক, আরডিআরএস, তালুকদার পাড়া, সর্দারপাড়া, হলো খানা ও রক্ষীকান্ত আবাসন প্রকল্প এলাকা থেকে প্রায় ২০থেকে ২৫হাজার মানুষজনের যাতায়াতে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।স্থানীয় মনছুর আলী, মতিয়ার রহমান, নজির হোসেন, ফারুক হোসেন ও আমিনুল ইসলাম জানান, ব্রীজের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন না হওয়ায় বর্তমানে ফসল সংগ্রহ করতে অনেক ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। ছোট ছোট কলা গাছের ভুড়া ও ড্রামের ভেলা তৈরি করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বর্তমানে ছড়া টি পারাপার হতে হচ্ছে। তাতে অনেকেই মাঝে মধ্যে পানিতে পরে যাত্তয়ার মতো দুর্ঘটনার শিকারও হচ্ছেন।
স্থানীয় এনজিও কর্মী আমিনুল ইসলাম জানান,অত্র এলাকা গুলোর প্রায় ২০থেকে ২৫হাজার লোকজনের ছড়া টি পারাপারে ভোগান্তিতে পড়েছেন। এই এলাকার স্বাস্থ্য, শিক্ষা,ব্যবসা বিশেষ করে কৃষিকাজে ব্যাপক প্রভাব পরেছে। মিশুক চালক জব্বার আলী জানান,বর্ষা মৌসুমে ব্রীজটি না থাকায় ড্রামের ভেলায় মিশুক পারাপারে বর্তমানে জীবন মরনের সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্কুল ছাত্র মশিউর রহমান, রমজান আলী, সবুজ মিয়া একরামুল হক জানান,আগে তো আমাদের স্কুল বন্ধ ছিলো দুই দিন হলো স্কুল খুলেছে প্রতিদিন বই খাতা ব্যাগ নিয়ে কলার গাছের ভুড়া বা ড্রামের ভেলায় চড়ে পারাপার হয়ে স্কুলে যেতে খুব ভয় লাগে। তাই আমারা কতৃপক্ষের নিকট জোর দাবি জানাচ্ছি ব্রীজটি নির্মাণের কাজ অতিদ্রুত সম্পন্ন করে দেওয়া হোক।যাতে করে আমাদের স্কুলে যাওয়া আসার পথ সুগম হয়।
ভাঙ্গামোড় ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান লুৎফর রহমান বাবু জানান,জোলের ছড়ার উপরে আগে একটি ব্রীজ ছিল সেটি পুরোনো হয়ে যাওয়ায় ভেঙে নতুন করে ব্রীজ নির্মাণের কাজ শুরু হয়।ব্রীজ নির্মাণে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ না করায় বর্তমানে ছড়া টি পারাপারে জনসাধারণের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। ড্রামের ভেলা তৈরি করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ছড়া পারাপার হতে হচ্ছে।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষে কাজের তদারকিতে থাকা মিস্ত্রী আব্দুল হালিম ও মাইদুল ইসলাম জানান, ঠিকাদার আমাদেরকে যেভাবে কাজ করতে বলেন আমরা সেভাবেই কাজ করি। ব্রীজের কাজ করতে সময় লাগার কারণ তারা জানেন না।
উপজেলা প্রকৌশলী মামুনুর রহমান জানান, ব্রীজটি নির্মাণ স্থানে পানির কারণে কাজ করা যাচ্ছে না। তাছাড়া ব্রীজটির প্রাক্কলনের সময় ওই এলাকায় পানি নিস্কাশনের ও প্রতিরোধ বাঁধ দেওয়ার বাজেট না থাকায় ব্রীজটির নির্মাণ কাজ একটু ধীরগতি ও সময় লাগছে।তবে সুস্ক মৌসুমে নির্মাণের কাজ সম্পন্ন করার আশা করা যায়।