উত্তম কুমার মোহন্ত ফুলবাড়ী (কুড়িগ্রাম)প্রতিনিধি:গ্রাম ৭ জানুয়ারি ২০২৫ , ১:৫৪ অপরাহ্ণ প্রিন্ট সংস্করণ
আজ-০৭(জানুয়ারি)সীমান্তে আলোচিত ফেলানী হত্যার-১৪ বছর।২০১১ সালে এইদিনে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়নের উত্তর অনন্তপুর হাজিটারী সীমান্তে ভারতীয় বিএসএফ ফেলানীকে নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করে লাশ কাঁটাতারের বেড়ায় ঝুলিয়ে রাখে।এ হত্যাকাণ্ডের ১৪ বছর পেরিয়ে গেলেও আজ অবধি কাঙ্খিত বিচার পায়নি তার পরিবার।
পাশ্ববর্তী নাগেশ্বরী উপজেলার রামখানা ইউনিয়নের দক্ষিণ রামখানা কলোনিটারী গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে,ফেলানী হত্যার এই দিনটির স্বরণে ফেলানীর কবর পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করতে ব্যস্ত তার পরিবার।ফেলানীর বাবা নুরুল ইসলাম, মা জাহানারা বেগম জানান,আজ ১৪ বছরেও সেই দিনের দুঃসহ স্মৃতির কথা ভুলতে পারিনি, আজ ও সেদিনের তার আত্ম চিৎকারে গভীর রাতে আচমকা ঘুম ভেঙ্গে যায়।আমাদের মেয়ে হত্যার বিচার চেয়ে মানবাধিকার সংস্থা সহ নানান জনের কাছে গিয়েছি কিন্তূ এপর্যন্ত কাঙ্ক্ষিত বিচার পেলাম না।
২০১৩ সালের ১৩ আগষ্ট ভারতের কুচবিহার জেলার বিএসএফের ১৮১ সদর দপ্তরে অবস্থিত জেনারেল সিকিউরিটি ফোর্সেস কোর্টে ফেলানী হত্যার বিচার কার্যক্রম শুরু হলে ০৫ (সেপ্টেম্বর) সেই কোর্টে অভিযুক্ত বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষকে নির্দোষ ঘোষণা করে। পরবর্তীতে ফেলানীর বাবা নুরুল ইসলাম ১১ (সেপ্টেম্বর) ভারতীয় হাইকমিশনের মাধ্যমে ন্যায় বিচার পাবার আশায় ভারত সরকারকে একটি পত্র দিয়ে জ্ঞাত করেন। ২০১৪ সালে ২২(সেপ্টেম্বর) পুনঃবিচার কার্যক্রম শুরু হলেও বিভিন্ন কারণে তা একাধিকবার স্থগিত হয়ে যায়।
পরবর্তীতে ২০১৫ সালের আইন ও সালিশ কেন্দ্র ভারতের মানবাধিকার সুরক্ষা মঞ্চে আরও একটি ক্ষতিপূরণ মামলা দায়ের করেন। ৩১(আগষ্ট) ভারতের জাতীয় মানবাধিকার কমিশন সেদেশের সরকারকে ফেলানীর পরিবারকে ক্ষতিপূরণ বাবদ ৫ লক্ষ্য রুপি প্রদানের অনুরোধ করেন ,এর জবাবে ভারত সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ফেলানীর বাবা নুরুল ইসলাম কে দায়ী করে বক্তব্য দেন। এরপর ২০১৬ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত দফায় দফায় শুনানি দিন তারিখ পিছিয়ে গিয়ে একেবারে ২০২০ সালে ১৮ (মার্চ)শুনানির দিন ধার্য হয়ে আজ অবধি শেষ হয়নি সেই বিচার কাজ।
ফেলানী হত্যা মামলার তৎকালীন বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের সদস্য মানবাধিকার কর্মী, সাবেক পিপি এ্যাডভোকেট আব্রাহাম লিংকন জানান, আমরা এই হত্যাকাণ্ডের ন্যায় বিচার পাইনি,পেলে মানবাধিকার সুরক্ষার পথ আরও সুগম হতো।
এছাড়াও ২০১৩ সালের ২৭(সেপ্টেম্বর)ফেলানী হত্যার ঘটনায় স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ বিচার এবং ক্ষতিপূরণ আদায়ে ফেলানীর বাবা নুরুল ইসলাম ১ম বাদী ও বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এ্যাডভোকেট সালমা আলী ২য় বাদী হয়ে ভারতের আইন ও বিচার বিষয়ক মন্ত্রণালয় (ইউনিয়ন অব ইন্ডিয়ার) সচিব এবং বিএসএফের মহাপরিচালক কে বিবাদী করে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট নয়াদিল্লীতে ভারতীয় সংবিধানের অনুচ্ছেদ -৩২ অনুযায়ী একটি ফৌজদারি মামলা দায়ের করেন।পরবর্তীতে ২০১৫ সালে ২১ (জুলাই) আবারও ফেলানীর বাবার জন্য অন্তবর্তী কালীন ক্ষতিপূরণ চেয়ে একটি আবেদন করেন।
এবিষয়ে বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এ্যাডভোকেট সালমা আলীর সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, মামলাটি ভারতের নয়াদিল্লীর সুপ্রিম কোর্টে দীর্ঘদিন যাবত ঝুঁলে আছে।
এদিকে ফেলানী হত্যার পর থেকে গত কয়েক বছর ধরে ৭ (জানুয়ারি) কে ফেলানী দিবস ঘোষণা,হত্যার বিচার,তার পরিবার কে আর্থিক ক্ষতিপূরণ প্রদান ও ঢাকা শহরের উত্তর সিটি কর্পোরেশন বারিধারা পার্ক রোডের নামকরণ ফেলানী স্বরণী রাখার দাবিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছে ঢাকাস্থ নাগরিক পরিষদ। এতদিন পার হয়ে গেলেও বাস্তবায়ন হয়নি একটিও।
এবিষয়ে ঢাকাস্থ নাগরিক পরিষদের আহ্বায়ক মোহাম্মদ শামসুদ্দিন মুঠোফোনে জানান,এবার তারা ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় শুধু স্টিকার লাগাচ্ছেন। তিনি আরও বলেন,৭ (জানুয়ারি) ফেলানী দিবস পালন সহ সারা বিশ্বে সীমান্ত হত্যা বন্ধের দাবিতে ২০১৫ সালে জাতিসংঘ মহাসচিব বরাবরে আমরা একটি লিখিত স্বারকলিপি প্রদান করেছিলাম। পরবর্তীতে এবিষয়ে যোগাযোগ করা হলে জানানো হয় এটি বাস্তবায়নের জন্য জাতিসংঘের নিকট যে কোন রাষ্ট্রকে এবিষয়ে প্রস্তাব আনতে হবে। সেক্ষেত্রে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। আমরা সে উদ্যোগের অপেক্ষায় আছি।