সদরুল আইন, স্টাফ রিপোর্টার ৪ মার্চ ২০২৪ , ১২:০৪ অপরাহ্ণ প্রিন্ট সংস্করণ
বিএনপিকে উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়ার পরামর্শ দিয়েছে ১২ দলীয় জোটের নেতারা।
একই সাথে জোট নেতারা যেকোনো আন্দোলন কর্মসূচির ক্ষেত্রে প্লান ‘এ’ যেমন থাকবে তেমনি প্লান ‘বি’ ও ‘সি’ রাখা উচিত বলে আন্দোলনের মূল নেতৃত্বে থাকা এ দলটিকে জানিয়েছে।
বিএনপি মহাসচিবের সাথে বৈঠকে ১২ জোটের নেতারা এমন পরামর্শ দিয়েছেন বলে জানা গেছে।
গত শনিবার গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এ বৈঠক হয়। বৈঠকটি সৌজন্য সাক্ষাৎ হলেও আলোচনার বিষয়গুলো তাৎপর্যপূর্ণ ছিল বলে জোটের এক নেতা জানিয়েছেন।
সূত্র মতে, বৈঠকের শুরুতে বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে করণীয় কী হতে পারে, কীভাবে আন্দোলনকে আরো গতিশীল করা যায়- সে ব্যাপারে ১২ দলীয় জোট নেতাদের পরামর্শ চান সদ্য কারামুক্ত বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর । এরপর জোট নেতারা একে একে তাদের অভিমত ও নানা প্রস্তাব তুলে ধরেন।
বৈঠকে ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশ ও পুলিশের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করেন ১২ দলের নেতারা। তাদের কেউ কেউ বলেন, সরকারের ধারাবাহিক দমননীতির আলোকে তফশিলের আগে কয়েক লাখ মানুষের এত বড় সমাবেশ নিয়ে বিএনপির আরো বেশি সতর্ক হওয়া উচিত ছিল।
রাজনীতির নিয়ন্ত্রণ নিতে সরকার যেকোনো মূল্যে সমাবেশ পণ্ড করে দিতে পারে, আগে থেকেই এমন শঙ্কা ছিল। সে বিবেচনায় সমাবেশকে ঘিরে তাদের প্ল্যান-বি, সি রাখা দরকার ছিল। কিন্তু সেটা হয়নি।
তা ছাড়া পুলিশ তাণ্ডব চালিয়ে সমাবেশ পণ্ড করে দিয়ে বিএনপির ওপর তার দায় চাপায়। কিন্তু সরকারের এই অপপ্রচার এবং প্রকৃত ঘটনাটি তারা সঠিকভাবে দেশে-বিদেশে তুলে ধরতে পারেননি। এটাও একধরনের ব্যর্থতা।
আগামীতে আন্দোলনকে আরো বেগবান করতে জোটকে আরো শক্তিশালী করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন ১২ দলীয় জোটের নেতারা। জামায়াতে ইসলামীকে নিয়ে ‘একমঞ্চ’ গঠনের প্রস্তাবও দেন কেউ কেউ।
বৈঠকে আগামী মে থেকে দলীয় প্রতীক ছাড়া অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন জোটের এক নেতা। ওই নেতা বলেন, একের পর এক নির্বাচন বর্জন করলে সংগঠন ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
জাতীয় নির্বাচনের পর আসন্ন উপজেলা নির্বাচনেও না গেলে তৃণমূলে নেতাকর্মীদের ধরে রাখা কঠিন হয়ে যাবে। তা ছাড়া আনুষ্ঠানিকভাবে ভোটে না গেলেও নেতাকর্মীরা স্থানীয় নানাবিধ কারণে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে নির্বাচনের সাথে জড়িত হয়ে পড়েন।
তাই উপজেলার ব্যাপারে ইতিবাচক চিন্তাভাবনা করা যেতে পারে। এ সময় জোটের অন্য নেতারাও তার বক্তব্যকে সমর্থন করেন।
প্রসঙ্গত : যুক্তরাষ্ট্র এবার বাংলাদেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন ইস্যুতে বেশ আগে থেকেই সরকারের ওপর একধরনের চাপ অব্যাহত রাখে।
গত বছরের ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য যুক্তরাষ্ট্র নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে। এ নীতির অধীনে বাংলাদেশের ‘গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী’ ব্যক্তিদের যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা না দেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়। মার্কিন এই পদক্ষেপ তখন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অবাধ, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের দাবিতে চলমান আন্দোলনের জন্য সহায়ক হয়েছিল বলে বিএনপি ও জোটের অনেক নেতার দাবি।
তখন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাসের তৎপরতাও ছিল চোখে পড়ার মতো। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ছাড়াও বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ অনেক রাজনৈতিক দলের সাথে তখন ধারাবাহিক বৈঠক করেন তিনি। এরই একপর্যায়ে ২৮ অক্টোবর ঢাকায় মহাসমাবেশ ঘিরে পুলিশের সাথে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
এতে বিরোধী আন্দোলন দমননীতির মধ্যে পতিত হয়। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ শীর্ষ ও গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের গ্রেফতার করা হয়।
বিএনপি ও জোট নেতাদের আশা ছিল, বিএনপিকে ছাড়া অনুষ্ঠিত ‘একতরফা ও ডামি’ নির্বাচন গণতান্ত্রিক বিশ্ব বিশেষ করে পশ্চিমাদের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না। ফলে নির্বাচনের পর নতুন সরকারের ওপর কোনো পদক্ষেপ আসতে পারে।
কিন্তু তেমন কোনো কিছুই হয়নি। বরং যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের মনোভাবও এখন নমনীয় বলে প্রতীয়মান হচ্ছে।
সূত্র মতে, ১২ দলীয় জোটের বৈঠকে সমাপনী বক্তব্যে শরিকের হতাশ না হওয়ার আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, সব কিছু গুছিয়ে আন্দোলনকে আবারো তুঙ্গে নিয়ে যাওয়া হবে। তবে এ ক্ষেত্রে কিছুটা সময় লাগবে।
বৈঠকে ১২ দলীয় জোট নেতাদের মধ্যে জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, আহসান হাবিব লিংকন, জাতীয় দলের সৈয়দ এহসানুল হুদা, জাগপার রাশেদ প্রধান, জমিয়তের মহিউদ্দিন ইকরাম, ইসলামী ঐক্যজোটের মাওলানা আব্দুল করিম, ন্যাপ ভাসানীর আজহারুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এরপর গণতন্ত্র মঞ্চের নেতাদের সাথেও মতবিনিময় করেন মির্জা ফখরুল।