রাজনীতি

বিএনপি’র নির্বাচনে যাওয়ার প্রশ্নে সব প্রস্তাবে রাজি হয়নি আওয়ামী লীগ

  নিজস্ব প্রতিবেদক ২৪ নভেম্বর ২০২৩ , ৮:৫৯ অপরাহ্ণ প্রিন্ট সংস্করণ

জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি যাবে কি যাবে না, তা নিয়ে এখনও রহস্য রয়ে গেছে। বিএনপি যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে বলছে যে, নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া তারা কোন নির্বাচনে যাবে না এবং এই দাবিতে তারা এখন অবরোধসহ বিভিন্ন আন্দোলন করছে।

কিন্তু, বাস্তবতা হলো- বিএনপির সঙ্গে কূটনৈতিক মহলের আলাপ-আলোচনা এবং সমঝোতা চেষ্টা এখন পর্যন্ত অব্যাহত রয়েছে। বিএনপির দায়িত্বপ্রাপ্ত তিনজন নেতা বিভিন্ন পর্যায়ের কূটনীতিকদের সঙ্গে কথা বলছেন। কূটনীতিকরা আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গেও কথা বলেছেন।

বিএনপির প্রথম দাবি হলো- নির্বাচনের তফসিল পেছাতে হবে। অন্তত দুই সপ্তাহ নির্বাচনের তফসিল পিছিয়ে জানুয়ারির তৃতীয় সপ্তাহে নির্বাচন অনুষ্ঠান করার জন্য প্রস্তাব দিয়েছে বিএনপি। এমন নিশ্চিত তথ্য পাওয়া গেছে।

বিএনপির সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক রুমিন ফারহানা মার্কিন প্রতিনিধিদের কাছে নির্বাচন পেছানোর দাবি জানিয়েছেন বলে জানা গেছে। এই বক্তব্যটি নিয়েই আওয়ামী লীগের একজন নেতার সঙ্গে মার্কিন প্রতিনিধিরা কথা বলেছেন।

তবে, আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে পরিস্কার জানিয়ে দেওয়া হয়েছে যে, নির্বাচনের মনোনয়ন জমা দেওয়ার দিন পেছানো যেতে পারে, অন্যান্য তারিখগুলো সমন্বয় করা যেতে পারে। তবে, ৭ জানুয়ারি ভোটের দিন, এটা পরিবর্তন করা যাবে না।

এর ফলে সাংবিধানিক সংকট দেখা দিতে পারে। আওয়ামী লীগ সেই সুযোগ দেবে না।

বিএনপি চায় নির্বাচনের তফসিল জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে নিয়ে যেতে। ২৩-২৪ জানুয়ারির দিকে নির্বাচন অনুষ্ঠান হলে তারা বিষয়টি ‘ভেবে দেখতে পারে’ বলে জানিয়েছেন।

ড. আব্দুল মঈন খানের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের দূতাবাসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা যোগাযোগ করেছেন। মঈন খান তাদেরকে অন্তত পাঁচটি শর্ত দিয়েছেন। এর মধ্যে প্রথম শর্তই হলো, নির্বাচন পেছাতে হবে। দ্বিতীয় শর্তে বলা হয়েছে যে, বিএনপির যেসব নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাদেরকে অবিলম্বে মুক্ত করতে হবে।

মঈন খান যুক্তরাজ্যের কূটনীতিকদের বলেছেন যে, আমরা কাদেরকে নিয়ে কার সঙ্গে সংলাপ করবো। আমাদের সব নেতাকর্মীই তো জেলে। আর, এ কারণেই মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, আমির খসরু মাহমুদসহ বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ নেতাদেরকে কারামুক্তি না দিলে নির্বাচন নিয়ে আলোচনা সম্ভব নয় বলে ড. মঈন খানের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।

পাশাপাশি, বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে, তার ভাষায়, যে রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলাগুলো করা হচ্ছে এবং ‘নির্বিচারে সাজা’ দেওয়া হচ্ছে তাও অবিলম্বে বন্ধ করার দাবি জানান ড. মঈন খান।

তার মতে, প্রথমে সংলাপের পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে এবং সংলাপের পরিবেশ সৃষ্টি করেই বিএনপিকে নির্বাচনে যাওয়ার জন্য যথাযথ সময় দিতে হবে। তারপর বিএনপি হয়তো নির্বাচনে যাওয়ার বিষয়টি নিয়ে বিবেচনা করবে।

এছাড়াও মঈন খান নির্বাচনের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। সেক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের কিছু পরিবর্তন এবং প্রশাসনের পরিবর্তনের ওপরও গুরুত্বারোপ করেছেন।

তিনি মনে করেন যে, বর্তমান নির্বাচন কমিশনের ওপর জনগণের আস্থা নেই। এই নির্বাচন কমিশনকে পরিবর্তন করে অন্তত আস্থাশীল একটি নির্বাচন কমিশন গঠন করা হলে বিএনপি নির্বাচনের বিষয়টি ভেবে দেখতে পারে।

এছাড়াও তিনি বর্তমান প্রশাসন; বিশেষ করে মাঠ প্রশাসন সম্পূর্ণ আওয়ামী লীগের অনুগত বলে দাবি করেছেন এবং এই প্রশাসনকে যদি রাখা হয় তাহলে অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয় বলেও বিএনপির পক্ষ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।

আর এই সমস্ত দাবি যদি সরকার পূরণ করে তাহলে বিএনপি নির্বাচনে যাওয়ার বিষয়টি ভেবে দেখতে পারে। তখন তারা হয়তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ইস্যুটিকে আর সামনে আনবে না। কিন্তু, আওয়ামী লীগের সঙ্গে পশ্চিমা দেশের কূটনীতিকরা এই সমস্ত প্রস্তাব নিয়ে যোগাযোগ করলে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে পরিস্কার বলে দেওয়া হয়েছে যে, প্রথমে বিএনপিকে আন্দোলনের কর্মসূচি প্রত্যাহার করতে হবে এবং তাদেরকে নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা দিতে হবে।

এরপর কি কি বিষয় নিয়ে সমঝোতা করা যায়, সেটি আলোচনা হতে পারে।