সারাদেশ

মায়ের সঙ্গে কাঁথা সেলাই করা সুমাইয়া পেয়েছে জিপিএ ৫

  uadmin ৩১ জুলাই ২০২৩ , ১১:৫৪ অপরাহ্ণ প্রিন্ট সংস্করণ

সংসারে অভাব-অনটন নিত্যদিনের সঙ্গী। ছোটবেলা থেকে মায়ের সঙ্গে নকশিকাঁথা সেলাইয়ের কাজ করেছে সুমাইয়া আক্তার। টিউশনি করে নিজের পড়াশোনা চালিয়েছে। গত শুক্রবার প্রকাশিত এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলে জিপিএ ৫ পেয়েছে সুমাইয়া।

সুমাইয়া ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর পৌর এলাকার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সুহাতা গ্রামের দিনমজুর মো. জীবন মিয়ার বড় মেয়ে। এবার এসএসসি পরীক্ষায় উপজেলার ভোলাচং উচ্চবিদ্যালয়ের মানবিক বিভাগ থেকে জিপিএ ৫ পেয়েছে। তার চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ুয়া একটি ছোট বোন আছে।

সুমাইয়া চতুর্থ শ্রেণিতে পড়াকালে কাজের সন্ধানে তার ছোট বোনকে নিয়ে চট্টগ্রামের আগ্রাবাদে চলে যান তার বাবা-মা। পরের পাঁচ দাদি রাজিয়া খাতুনের সঙ্গে থাকত সুমাইয়া। করোনার পর গ্রামে ফিরে ইজিবাইক চালানো শুরু করেন জীবন মিয়া। সংসারের খরচ যোগাতে বাড়িতে কাঁথা সেলাই শুরু করেন পারভীন আক্তার। পরে মায়ের সঙ্গে নকশিকাঁথা সেলাইও শুরু করেন সুমাইয়া।

জানা গেছে, সংসার চালাতে মা পারভীন আক্তার কাঁথা ও নকশিকাঁথা সেলাই করতেন। সাধারণ কাঁথা সেলাই করে ২০০ থেকে ৪০০ টাকা, আর নকশিকাঁথা থেকে ১ হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার টাকা পেতেন। মায়ের কাজের চাপ বাড়লে সুমাইয়াও কাঁথা সেলাই করত। পাশাপাশি গ্রামের চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির চার-পাঁচজন ছেলেমেয়েকে পড়াত সে। এই টাকায় সে পড়াশোনা করেছে।

সুমাইয়া বলে, ‘কলেজশিক্ষক চাচা স্বপন মিয়া তাকে পড়াশোনায় উৎসাহ জুগিয়েছেন। চাচার পাঠাগারে নিয়মিত পড়াশোনা করেছে সে। চাচা তিনজন শিক্ষকের কাছে নিয়ে গেছেন। তাঁরা বিনা মূল্যে পড়িয়েছেন।’

সুমাইয়া আরো বলে, ‘বাবা অনেক ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। অটোরিকশা চালিয়ে ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে পারেন না। আগামী দিনের পড়াশোনা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি। তবে আমি পড়াশোনা চালিয়ে যাব। প্রয়োজনে আরো পরিশ্রম করব। তবু পড়াশোনা করব।’

সুমাইয়াকে পড়ায় উৎসাহ দিয়েছেন তার চাচা কসবার বায়েক আলহাজ শাহ আলম কলেজের বাংলা প্রভাষক স্বপন মিয়া। তিনি বলেন, ‘মায়ের সঙ্গে কাঁথা সেলাই ও টিউশনি করে এসএসসিতে জিপিএ ৫ পেয়েছে সুমাইয়া। আমি চাই, ওর পথচলা সহজ ও মসৃণ হোক। স্রষ্টার কাছে একটাই চাওয়া, মেয়েটা যেন পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারে।’