রাজনীতি

যে কোন মুহুর্তে আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড চুড়ান্ত প্রার্থিদের দিতে যাচ্ছে ‘সবুজ সংকেত’

  এস এম রাফি ৪ অক্টোবর ২০২৩ , ১০:০১ অপরাহ্ণ প্রিন্ট সংস্করণ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ দেশে ফিরেছেন। আগামীকাল থেকে তিনি উন্নয়নের উৎসব শুরু করছেন।

অক্টোবর জুড়ে বাংলাদেশে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন করা হবে। এর মধ্য দিয়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আবহাওয়া তৈরি করা হবে বলে আওয়ামী লীগের নেতারা জানিয়েছেন।

শুধু তাই নয়, এই সময়ের মধ্যেই আওয়ামী লীগ তাদের মনোনয়নগুলো চূড়ান্ত করে ফেলবে এবং যে সমস্ত প্রার্থী মনোনয়ন পাবেন তাদেরকে চূড়ান্ত সবুজ সংকেত দেওয়া হবে। তারা যেন নির্বাচনী এলাকায় প্রচারণার কাজ শুরু করে সেই বার্তাটি দেওয়া হবে।

আওয়ামী লীগ এবার নির্বাচন করতে চায় অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ এবং নির্বাচনে তাদের প্রধান লক্ষ্য হলো ভোটার উপস্থিতি নিশ্চিত করা।

তবে কিছুদিন আগে আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ যেভাবে চাইতো যে নির্বাচনে সকল রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করুক, বিশেষ করে বিএনপি অংশগ্রহণ করুক, সেই অবস্থান থেকে আওয়ামী লীগ এখন অনেকটাই সরে এসেছে বলে একাধিক সূত্র বলছে।

আওয়ামী লীগ মনে করছে যে বিএনপি নির্বাচনে না আসাটাই মন্দের ভালো। বিএনপিকে ছাড়াই একটি উৎসবমুখর নির্বাচন করার পরিকল্পনাই আওয়ামী লীগের মধ্যে এখন দৃশ্যমান হচ্ছে।

একাধিক কারণে আওয়ামী লীগ বিএনপিকে নির্বাচনে দেখতে রাজি নয়। তার প্রধান কারণগুলো হলো-

আওয়ামী লীগ মনে করে যে ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করেছিল মূলত নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য। ২০১৮ নির্বাচনকে যে বিতর্কিত করার একটা সম্মিলিত প্রয়াস বিএনপি গ্রহণ করেছিল সেই প্রয়াসের অংশ হিসেবেই এখন জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক ভাবে ২০১৮’র নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ।

বিএনপি যদি এবার নির্বাচনে আসে তাহলে নির্বাচনের শুরু থেকেই তারা এই সব ইস্যু তুলবে এবং শেষ পর্যন্ত নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করবে।

এই প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের একজন নেতা ২০০৭ সালের ২২ জানুয়ারীর নির্বাচন প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেছেন।

তারা বলছেন, ২০০৭ সালের ২২ জানুয়ারী আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার ইচ্ছে জানিয়েছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে গিয়ে মনোনয়ন প্রত্যাহার করেছিল এবং নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেয়।

সেই সময় এরকম পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটেই এক-এগারো এসেছিল। এখন বিএনপি সেই একই কৌশল অবলম্বন করছে। বিএনপি মনে করছে যদি নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে বিভিন্ন ত্রুটি-বিচ্যুতি দেখে সরকার অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় না এমন একটি পরিস্থিতি তৈরি করা যায় তাহলে সেটি হবে অনেক বেশি লাভজনক।

নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা থেকে দূরে থাকার চেয়ে নির্বাচনে যেয়ে নির্বাচনকে প্রভাবিত করা এবং শেষ মুহূর্তে যে নির্বাচন বানচাল করাটাই বেশি তাৎপর্যপূর্ণ হবে এবং ফলদায়ক হবে বলে বিএনপি মনে করছে।

এই তথ্যটা আওয়ামী লীগের কাছে আছে। এই কারণেই আওয়ামী লীগ মনে করছে যে বিএনপি নির্বাচনে না আসাই ভালো।

অপরদিকে, বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলেই সহিংসতা বাড়বে, সন্ত্রাস তৈরি হবে এবং নির্বাচনে উৎসবের আমেজ নষ্ট হয়ে যাবে। এর ফলে আন্তর্জাতিক মহল এই নির্বাচনকে ঘিরে নানা রকম অবস্থান গ্রহণ করবে। যেটা সরকারের জন্য ইতিবাচক নয়।

নির্বাচনে যদি বিএনপি অংশগ্রহণ করে সেক্ষেত্রে পশ্চিমা দেশগুলো বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ অনেক বাড়বে এবং এর ফলে পুরো নির্বাচনটা নিয়েই একটা প্রশ্ন তৈরি হবে।

আওয়ামী লীগ এটি চায় না। আর এ কারণে আওয়ামী লীগ মনে করছে বিএনপি বাদ দিয়ে সকল রাজনৈতিকদল যদি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে সেক্ষেত্রে এটি সরকার এবং দেশের জন্য ইতিবাচক হবে।

আর এর ফলে রাজনৈতিক ভাবেও বিএনপি একটি শোচনীয় অবস্থার দিকে যাবে এবং অস্তিত্ব বিলীন হবে। এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগ এই কৌশলেই এগোচ্ছে।

এমন একটি নির্বাচন আওয়ামী লীগ করবে যে নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করবে না, ৫০ শতাংশের বেশি মানুষ ভোট দেবে এবং একটি উৎসব মুখর নির্বাচন হবে।

সূত্রমতে, আওয়ামীগ ৩ টি জরিপের মাধ্যমে ইতিমধ্যেই জনপ্রিয় প্রার্থি বাছাই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছে।প্রতিটি আসনে ৩ থেকে ৫ জন প্রার্থির তালিকা চুড়ান্ত করা হয়েছে।

কোন আসনে কে মনোনয়ন পাচ্ছেন তা মোটামুটি নির্ধারিত করা হয়েছে।কিছু আনুষ্টানিকতা শেষে কাল থেকেই সবুজ সংকেত প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

এছাড়া সূত্রটি জানায়, এবারের নির্বাচনে সর্বকালের সেরা চমক থাকছে।বর্তমান সংসদের ১০৮ থেকে ১৪৩ জন এমপি মনোনয়ন বঞ্চিত হতে পারেন।