সারাদেশ

রংপুর ও রাজশাহী বিভাগে আওয়ামী লীগে ২২ নতুন প্রার্থী

  অনলাইন ডেস্ক ২৭ নভেম্বর ২০২৩ , ১১:৪২ অপরাহ্ণ প্রিন্ট সংস্করণ

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে লড়তে আওয়ামীলীগ ঘোষিত প্রার্থীর তালিকায় স্থান নতুন ১০৪ মাঝির মধ্যে ২২ জনই উত্তরাঞ্চলের। এদের মধ্যে রংপুর বিভাগে ৯ এবং রাজশাহী বিভাগে ১৩ জন। নতুন প্রার্থীদের এই তালিকায় আছেন ২টি আসনে পিতার বদলে পুত্রকে দে্ওয়ার ঘটনা। একটি আসনে দেওয়া হয়েছে বোনের বদলে ভাইকে। পেয়েছেন প্রয়াত এক নেতার পুত্রও। আছেন ২ জন সাবেক সংসদ সদস্য এবং ২ জন বিগত সময়ে ভোটে অংশ নিয়ে হেরে যাওয়া মুখ। নতুন মুখ দেওয়ার ঘটনাকে দলটির সাহস হিসেবে দেখছে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)।

রোববার (২৬ নভেম্বর) ঢাকায় দলীয় কার্যালয়ে ২৯৮ আসনের চুড়ান্ত মনোনয়নের তালিকা ঘোষনা করেন আওয়ামীলীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। প্রাপ্ত তালিকা বিশ্লেষন করে দেখা গেছে রংপুর বিভাগের ৩৩ টি আসনের মধ্যে ৭টি আসনে এবার নতুন মুখ মনোনয়ন দিয়েছে আওয়ামী লীগ। এরমধ্যে রংপুর-৫ আসনে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির কোষাধ্যক্ষ বর্তমান এমপি এইচ এন আশিকুর রহমানের পুত্র রাশেক রহমানকে। রাশেক রহমান দলটির কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সদস্য। একই ঘটনা ঘটেছে ঠাঁকুরগাঁও ২ আসনে। সেখানে মনোনয়ন পাওয়া মাজহারুল ইসলাম ওই আসনের বর্তমান এমপি দাবিরুল ইসলামের পুত্র। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং একটি কলেজের অধ্যক্ষ।

এবার এই বিভাগে নৌকার নতুন মাঝি পঞ্চগড়-১ আসনে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এটুআই প্রকল্পের সাবেক জনপ্রেক্ষিত কর্মকর্তা নাইমুজ্জামান ভূইয়া মুক্তা; রংপুর-১ আসনে জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. রেজাউল করিম রাজু; রংপুর-৩ আসনে মহানগর সাবেক সাধারণ সম্পাদক তুষার কান্তি মন্ডল; কুড়িগ্রাম-৩ আসনে দলটির কেন্দ্রীয় সদস্য সৌমেন্দ্র প্রসাদ পান্ডে ও কুড়িগ্রাম-৪ আসনে মনোনয়ন দলটির কেন্দ্রীয় তথ্য ও গবেষণা উপ-কমিটির সদস্য মো. বিপ্লব হাসান; এছাড়াও গাইবান্ধা-১ আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন প্রথম নারী হিসেবে আফরোজা বারী। তিনি উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি এবং প্রয়াত এমপি লিটনের বোন। এছাড়া গাইবান্ধা- ৫ আসনে সাবেক এমপি অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদকে দেওয়া হয়েছে মনোনয়ন।

অন্যদিকে রাজশাহী বিভাগের ৩৯ আসনের মধ্যে ১৩ টিতে এসেছে নতুন মুখ। এদের মধ্যে নতুন মুখ সিরাজগঞ্জ-৬ আসনে চয়ন ইসলাম। তিনি বর্তমান এমপি মেরিনা জাহান কবিতার ভাই। পাবনা-৪ আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা শামসুর রহমান শরীফের পুত্র গালিবুর রহমান শরীফ।

এই বিভাগে নৌকার অন্যান্য নতুন মাঝিরা নতুন মুখ বগুড়া-২ আসনে শিবগঞ্জ উপজেলা পৌর মেয়র ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক তৌহিদুর রহমান মানিক, বগুড়া-৩ আসনে আদমদিঘি উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মো. সিরাজুল ইসলাম খান রাজু, বগুড়া-৪ আসনে কাহালু উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি মো. হেলাল উদ্দিন কবিরাজ, বগুড়া-৫ আসনে জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মজিবর রহমান মজনু এবং বগুড়া-৭ আসনে বিএমএ বগুড়ার সভাপতি মো. মোস্তফা আলম নান্নু। এদের মধ্যে মজনু ও নান্নু ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থীর কাছে পরাজিত হয়েছিলেন।

এই বিভাগে নওগাঁ-৩ আসনে সাবেক সিনিয়র সচিব সৌরেন্দ্র নাথ চক্রবর্ত্তী, নওগাঁ-৪ আসনে মান্দা উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আইনজীবি মো. নাহিদ মোর্শেদ। এরা দুজনই নতুন মুখ। তারা এর আগে কখনও কোনো নির্বাচনে অংশ নেননি।
অন্যদিকে রাজশাহী-২ আসনে মহানগর আওয়ামীলীগ সভাপতি মোহাম্মদ আলী কামাল, রাজশাহী-৩ আসনে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোহা. আসাদুজ্জামান আসাদ, রাজশাহী-৪ আসনে তাহেরপুর পৌরসভার মেয়র ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আবুল কালাম আজাদ রাজশাহী-৫ আসনে সাবেক এমপি জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওয়াদুদ দারা মনোনয়ন পেয়েছেন। রাজশাহীর এসব নতুন মুখের মধ্যে মোহাম্মদ আলী কামাল ও আসাদুজ্জামান আসাদ প্রথম ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

আওয়ামী লীগের নতুন মুখ মনোনয়ন দেওয়াতে সাহসি এবং ইতিবাচক দিক উল্লেখ করে সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজন রংপুর মহানগর সভাপতি অধ্যক্ষ ফখরুল আনাম বেঞ্জু জানান, বিতর্কিতদের বাদ দিয়ে নতুন মুখ মনোনয়ন দেওয়া ইতিবাচক। এর মাধ্যমে প্রার্থী মনোনয়নে নতুন ধারা তৈরি করলো দলটি। যা ভবিষ্যত নেতৃত্ব তৈরি এবং দলটির গ্রহনযোগ্যতা তৈরিতে সুবিধা হবে। এছাড়াও তরুণ নেতৃত্ব বেছে নেয়ায় তরুণ ভোটারদের মধ্যে বাড়তি মনোযোগ তৈরি হবে। এই ধারা অব্যাহত রাখার পাশাপাশি সুষ্ঠু ও গ্রহনযোগ্য ভোট নিশ্চিত করার দাবি করেছেন তিনি।

প্রসঙ্গত, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য ৩ হাজার ৩৬২টি মনোনয়ন ফরম বিক্রি করেছে আওয়ামী লীগ। এর মধ্যে রংপুর বিভাগের ৮টি জেলায় ৩৩টি সংসদীয় আসন রয়েছে। রংপুর বিভাগে এবার মোট ৩০২টি এবং রাজশাহী বিভাগে ৪০৯ টি মনোনয়ন ফরম বিক্রি করেছিল দলটি।

ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, দ্বাদশ জাতীয় সংসদের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ৩০ নভেম্বর; বাছাই ১ থেকে ৪ ডিসেম্বর। রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কমিশনে আপিল দায়ের ও নিষ্পত্তি ৬ থেকে ১৫ ডিসেম্বর এবং প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ১৭ ডিসেম্বর। ভোট হবে ৭ জানুয়ারি।