শিক্ষা

রাবিতে আবাসন সংকট: তৃতীয় বর্ষে এসেও হলে সিট পাচ্ছে না অনেক শিক্ষার্থী

  তাজনিন নিশাত ঋতু, রাবি ২৫ মে ২০২৫ , ৩:০৫ অপরাহ্ণ প্রিন্ট সংস্করণ

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) আবাসনের  সংকট পুরনো হলেও দিন দিন এ সমস্যা বেড়েই চলেছে। ক্রমবর্ধমান শিক্ষার্থী সংখ্যা আর সীমিত আবাসনের কারণে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের অন্যতম মৌলিক চাহিদা “আবাসিকতা” আজ প্রশ্নবিদ্ধ। তৃতীয় বর্ষে পড়েও রাবির অনেক শিক্ষার্থী এখনো হলে সিট পাচ্ছে না, যা শিক্ষাজীবনের মান ও মনোবলের জন্য বড় সংকট সৃষ্টি করছে।
রাবিতে বর্তমানে ১৮টি আবাসিক হল রয়েছে। এর মধ্যে ১১টি ছেলেদের জন্য, ৬টি মেয়েদের জন্য এবং একটি আন্তর্জাতিক ডরমিটরি। বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা বর্তমানে প্রায় ৩০ হাজার। অথচ আবাসিক হলগুলোর ধারণক্ষমতা মাত্র ১০ হাজার। প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ শিক্ষার্থীকে থাকতে হচ্ছে হলের বাইরে। আবাসন সংকটের কারণে অনেক শিক্ষার্থী বাধ্য হচ্ছেন গণরুমের অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে থাকতে। আবার অনেককে আশ্রয় নিতে হচ্ছে ভাড়া বাসা বা মেসে—যা অধিকাংশ শিক্ষার্থীর জন্য অর্থনৈতিকভাবে বেশ চাপের।

আবাসন সংকট নিরসনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নতুন হল নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে। একটি ১০ তলা বিশিষ্ট আবাসিক হল নির্মাণের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে, যা ১ হাজার ১০০ শিক্ষার্থীকে আবাসন সুবিধা প্রদান করবে। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর -নভেম্বর মাসের মধ্যেই নির্মাণ কাজ শেষ হবে বলে আশ্বস্ত করেছে প্রশাসন। তবে, এই উদ্যোগ সংকটের তুলনায় অপ্রতুল বলে মনে করছেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীরা স্বচ্ছ সিট বরাদ্দ, নতুন হল নির্মাণ, সকল প্রকার অনিয়ম বন্ধসহ দ্রুত কার্যকর সমাধানের দাবি জানিয়েছেন।

গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ২০২১-২২ সেশনের শিক্ষার্থী রাকিবুল ইসলাম বলেন, আবাসিক হলে সিট না পাওয়ার সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে নিরাপদ বাসস্থানের অভাব। হলে সিট না পাওয়ায় শিক্ষার্থীদেরকে বাইরে থাকতে হয়। কিন্তু বাইরে থাকাটা সবসময় নিরাপদ না। এখানে শিক্ষার পরিবেশও যথাযথ নয়। এছাড়া বাইরে মেস বা বাসা নিয়ে থাকাটাও যথেষ্ট খরচসাপেক্ষ। মেসের পরিবেশও পড়াশোনার জন্য উপযুক্ত না। মেস থেকে নিয়মিত ক্লাস করা বেশ কষ্টসাধ্য ব্যাপার। বাইরে থেকে প্রতিদিন ক্যাম্পাসে যাওয়া-আসা করতে অনেক সময় ও অর্থের প্রয়োজন পড়ে।

তিনি আরও বলেন, আমি সিটের জন্য একাধিকবার আবেদন করেছি। কিন্তু আসন সংকটের কারণে সিট পাইনি। এটা প্রশাসনের জন্য চরম ব্যর্থতা। প্রতিবছর হাজার হাজার শিক্ষার্থী ভর্তি হয়, কিন্তু হলের আসন সংখ্যা বাড়ে না। প্রশাসন যদি চায়, তাহলে সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে নতুন হল নির্মাণ বা আসন ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন সম্ভব। কিন্তু সমস্যার সমাধান না করে বছরের পর বছর শুধু আশ্বাস দেওয়া হয়। এটা শিক্ষার্থীদের প্রতি একধরনের অবহেলা।

ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০২১-২২ সেশনের শিক্ষার্থী মাহমুদুল হাসান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় হলে স্থান না পাওয়ায় আমার আর্থিক এবং একাডেমিক জীবন দুটোই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বাসা ভাড়া এবং অতিরিক্ত খরচ সামলাতে গিয়ে পারিবারিক সংকট আরো বেড়েছে। এছাড়া হলে না থাকায় প্রতিদিন দূরত্বের কারণে নিয়মিত ক্লাসে উপস্থিত থাকতে পারছি না, যা সরাসরি আমার পড়াশোনার উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। আমি যথাসময়ে হলে সিটের জন্য আবেদন করলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো ইতিবাচক সাড়া পায়নি। আমার মনে হয়, সিট বন্টনের বর্তমান নীতিমালা সুষ্ঠু ও যৌক্তিক নয়, ফলে যাদের আসলেই প্রয়োজন এরকম অনেক শিক্ষার্থী বঞ্চিত হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মাহবুবর রহমান বলেন , সেশন জটের কারণে একই সেশনের কিছু শিক্ষার্থী পড়ছে সেকেন্ড ইয়ারে আবার কেউ বা পড়ছে থার্ড ইয়ারে। আবার দেখা যাচ্ছে, কেউ হয়তো থার্ড ইয়ারে পড়ছে কিন্তু তাদের রেজাল্ট হয়নি। আমরা মাঝখানে সি.জি.পি এর উপর ভিত্তি করে সিট বণ্টনের চেষ্টা করেছিলাম কিন্তু শিক্ষার্থীদের দাবির ভিত্তিতে তা আপাতত বন্ধ আছে। আবার,অনেক শিক্ষার্থীর পড়াশোনা শেষ হলেও হল ছাড়তে চায় না। এরকম শিক্ষার্থীর সংখ্যা কম নয়। এরকম নানা সমস্যার কারণে বিষয়টা এখনও সম্পূর্ণ ভাবে সমন্বয় করা যায়নি।

তিনি আরও বলেন, আমরা চেষ্টা করছি বিষয়টা যৌক্তিকতার সঙ্গে সমাধান করার।আমরা জানি, এ বিষয়ে প্রশাসনের উপর শিক্ষার্থীদের রাগ ক্ষোভ আছে। কিন্তু সরকার থেকে বাজেট না দিলেতো আর নতুন হল তৈরি করা সম্ভব না। বর্তমানে ১০ তলা বিশিষ্ট আবাসিক হল নির্মাণের কাজ চলছে। এটি শেষ হলে প্রায় ১১০০ শিক্ষার্থীর আবাসন ব্যবস্থা করা যাবে।