শিক্ষা

রাবিতে শিক্ষককে লাঞ্ছনা ও হত্যাচেষ্টার প্রতিবাদে মানববন্ধন

  রাবি প্রতিনিধি ২৭ জানুয়ারি ২০২৪ , ৫:২৯ অপরাহ্ণ প্রিন্ট সংস্করণ

রাজশাহী নগরীর তালাইমারি এলাকায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. সৈয়দ মুহাম্মদ আলী রেজার উপর দূর্বৃত্তদের হামলা ও লাঞ্চনায় প্রতিবাদ এবং হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন করা হয়েছে।

শনিবার (২৭ জানুয়ারি) দুপুর আড়াইটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবন সংলগ্ন প্যারিস রোডে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে আয়োজিত এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

মানববন্ধনে এসময় ‘শিক্ষককে লাঞ্চনা আর না, আর না’, ‘শিক্ষক তোমার ভয় নাই, ছাত্রসমাজ ঘুমায় নাই’, ‘ছাত্র সমাজ জেগে উঠো, শিক্ষক কেন নির্যাতিত’, ‘শিক্ষকের প্রাণনাশ জাতির হবে সর্বনাশ’, ‘শিক্ষক শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা কোথায়?’, ‘শিক্ষকদের হুমকি প্রশাসনের ভূমিকা কি?’, ‘আমার শিক্ষক লাঞ্চিত কেন জবাব চাই, দিতে হবে’ সহ বিভিন্ন প্লাকার্ড হাতে নিয়ে অবস্থান করতে দেখা যায় শিক্ষার্থীদের।

শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে সাতটি দাবি জানানো হয়। দাবিগুলো হলো- জড়িতদের অবিলম্বে শাস্তির আওতায় আনা, অভিযুক্ত আরেক আসামিকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে গ্রেফতার করা, দল মত নির্বিশেষে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের দাবি, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, প্রশাসনের জবাবদিহিতার নিশ্চিত করা, শিক্ষক সমাজের ভূমিকা নিশ্চিত করা এবং যথাযথ শাস্তির মাধ্যমে দৃষ্টান্ত স্থাপন করা।

বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মো. তুষারের সঞ্চালনায় বক্তারা বলেন, বিভাগের শিক্ষক আলী রেজা স্যারের উপর অতর্কিত হামলা চালানো হয়েছে এবং তাকে গলা টিপে শ্বাসরোধ করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। অনাকাঙ্ক্ষিত এই ঘটনায় দূর্বৃত্তরা ব্যক্তি ড. আলী রেজা স্যারের গলা টিপে ধরে নি বরং এর মধ্য দিয়ে পুরো বিশ্ববিদ্যালয় তথা দেশের গলা টিপে ধরা হয়েছে।

বক্তারা আরো বলেন, ড. আলী রেজা স্যারকে লাঞ্ছনার মাধ্যমে পুরো রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারকে লাঞ্ছনা করা হয়েছে এবং প্রত্যেকের আত্মসম্মান আঘাত করা হয়েছে। প্রায় সময়ই এ ধরনের ঘটনা দেখতে পাওয়া যায়। অনেক সময় দুই-তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়৷ কিন্তু পরবর্তীতে কমিটির তদন্তের আর কোনো অগ্রগতি হয় না৷ দ্রুত অভিযুক্তদের আইনের আওতায় এনে শাস্তির ব্যবস্থা করা হোক।

বিশ্ববিদ্যালয় এবং এর বাইরে শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং সাধারন জনগনের নিরাপত্তায় নিয়োজিতদের কাছে নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবি করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি, পুলিশ প্রশাসন সকলের সদয় দৃষ্টি আকর্ষণ করেন বক্তারা। পাশাপাশি এজাতীয় ঘটনা পুনরাবৃত্তি যেন না হয় তার প্রতি আহ্বান জানান বক্তারা৷

বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘সমাজে শিক্ষকের চেয়ে সম্মানিত আর কেও নেই। যদি আপনি শিক্ষককে সম্মান করতে নাই পারেন তাহলে আপনি শিক্ষার্থীই না। শিক্ষার্থীরা একজন শিক্ষককে তার বাবার মতো সম্মান করে। পাশাপাশি দেশের যারা সাধারণ জনগণ তারাও শিক্ষককে সম্মান করে কারন শিক্ষকরাই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যায়। কিন্তু কিছু কুলাঙ্গার কিছু অভদ্র কিছু বাজে মানুষ তারা শিক্ষককে সম্মান করতে জানেনা। তারা ভাবে পুলিশ, বিডিআর, ডাক্তার, ইন্জিনিয়ার এরাই দেশের বড় মানুষ। কিন্তু না!’

এই শিক্ষার্থী আরো বলেন, ‘সবার উপরে শিক্ষক৷ তারা শিক্ষকের শিক্ষার মাধ্যমেই যোগ্যতা অর্জন করে। গতকাল আমাদের শিক্ষকের উপরে কিছু দুষ্কৃতিকারী অতর্কিত হামলা করেছে। এমনকি তারা একবার হামলা করে ক্ষান্ত হয়নি কয়েকবার হামলা করেছে। ঐসকল দুর্বৃত্তদের কালো হাত আমরা ভেঙে দিতে চাই। প্রশাসনকে আমরা বলতে চাই তাদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনা হোক৷ যেন পরবর্তীতে এ ধরনের ঘটনা আর না ঘটে।’

বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ফারদিয়া ইসলাম জোহা বলেন, ‘জাতির মেরুদন্ড গড়ার কারিগর হলেন আমাদের শিক্ষক। এই শিক্ষকের মর্যাদা যখন ক্ষুন্ন হচ্ছে তখন আমরা এখানে দাঁড়াতে বাধ্য হয়েছি। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক যখন হামলাকারীদের দ্বারা হামলার শিকার হয়েছে, দুষ্কৃতকারীদের দ্বারা লাঞ্ছনার শিকার হয়েছে তাদের শাস্তির দাবিতে আমরা এখানে দাঁড়িয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক হিসেবে তার নিরাপত্তা যেখানে নিশ্চিত না সেখানে সাধারন শিক্ষার্থী হিসেবে আমাদের নিরাপত্তাও নিশ্চিত নয়। অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা যখন শিক্ষকের সাথে ঘটছে তখন শিক্ষার্থী হিসেবে আমাদের সাথেও ঘটবে না এর নিশ্চয়তা কোথায়?’

বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সোলাইমান চৌধুরী বলেন, ‘অধ্যাপক ড. সৈয়দ মুহাম্মদ আলী রেজা স্যার তার সাথে যে ঘটনাটি ঘটেছে সেটি খুবই নিন্দনীয় এটা অনভিপ্রেয় আমরা প্রত্যাশা করিনা একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের উপরে সেটা যেই হোক না কেন রাস্তার উপরে এ ধরনের হামলার ঘটনা ঘটুক। আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি, একজন শিক্ষক মানে শুধু একজন শিক্ষকই না পুরো রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। আমরা প্রত্যাশা করি এ ঘটনার সাথে জড়িত সকলেই আইনের আওতায় আসুক। তাকে সুষ্ঠু বিচারের আওতায় আনা হোক।’

নিরাপত্তা নিশ্চিতের বিষয় উল্লেখ করে এই অধ্যাপক আরো বলেন, ‘একইসাথে আমাদের শিক্ষক শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হোক। আমাদের পুরো শিক্ষক শিক্ষার্থী যেন এই ধরনের পরিস্থিতির সম্মুখীন না হয় আমরা সেটিই প্রত্যাশা করি। আমরা চাই একটি সুন্দর সুষ্ঠু পরিবেশ। আমাদের উপর আক্রমণ করবে আমাদের ভয় ভীতি দেখাবে এরকম পরিস্থিতি আমরা চাই না। আমরা চাই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট যারা আছে তারা এববিষয়টিকে গুরুত্বের সাথে দেখবে এবং দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিচার নিশ্চিত করবে যেন আমরা নিশ্চিত হতে পারি আমরা আইনের শাসনের মধ্যেই আছি, আমরা আইনের শাসন ভোগ করছি এবং নিরাপদে বাস করছি৷’

প্রসঙ্গত, গতকাল শুক্রবার রাতে রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের বিপরীতে মিষ্টিবাড়ি দোকানের সামনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ মুহাম্মদ আলী রেজাকে (৫৩) পথরোধ করে গাড়ি থেকে নামিয়ে মারধর ও হত্যাচেষ্টা করে দূর্বত্তরা।

এঘটনা পরে রাতেই নগরীর মতিহার থানায় মামলা করেছেন ভুক্তভোগী শিক্ষক। এ ঘটনায় রাতেই অভিযান চালিয়ে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এঘটনায় অভিযুক্তরা হলেন, মৃত তসলিম উদ্দিনের ছেলে মো. মিনহাজ আবেদীন (৩৯) এবং মো. মোশাররফ হোসেনের ছেলে মো. মোসাদ্দেক হোসেন রাতুল (২৭)। তাদের উভয়ের বাড়ি রাজশাহী নগরীর তালাইমারী শহীদ মিনার এলাকায়।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, কর্মস্থল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নিজ গাড়িতে করে বাড়ি ফিরছিলেন অধ্যাপক সৈয়দ মুহাম্মদ আলী রেজা। অধ্যাপক রেজা রুয়েটের মূল ফটকের বিপরীতে মিষ্টিবাড়ি হোটেলের সামনে পৌঁছালে দুই যুবক গাড়ির সামনে মোটরসাইকেল থামিয়ে গালিগালাজ শুরু করে। একপর্যায়ে তাকে গাড়ি থেকে বের হতে বাধ্য করেন। গাড়ি থেকে নামার পর এই শিক্ষকের মুখে ও বুকে এলোপাথাড়ি কিল-ঘুষি মেরে মোটরসাইকেল যোগে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে।

এ সময় অধ্যাপক রেজা তাদের পিছু নিলে মোটরসাইকেল থামিয়ে ফের গালিগালাজ করে ওই দুই যুবক। তাদের মোটরসাইকেলের নম্বর দেখতে গেলে একজন পালিয়ে যান এবং অপরজন ফের এই শিক্ষককে মারধর শুরু করে। এ পরিস্থিতিতে উপস্থিত জনতার সহায়তায় সেখান থেকে রক্ষা পান তিনি। চলে যাওয়ার সময় ওই যুবক শিক্ষককে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে যান।

এ বিষয়ে ভুক্তভোগী শিক্ষক বলেন, ‘আমার সঙ্গে কেন এমন করেছে আমি জানি না। আমি প্রতিবাদ করতে তাদের গাড়ির পিছু নিয়েছিলাম। কিন্তু তারা ফের আমাকে মারধর করে। এ ঘটনার পেছনে আসলে কারা আছে, কোনো মৌলবাদী দল যুক্ত আছে কি না, সেটা পুলিশ তদন্ত করে বের করবে। এখানে যারাই জড়িত থাকুক দেশের আইন অনুযায়ী তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি হবে এটাই আমার চাওয়া।’