রাবি প্রতিনিধি: ৬ জুন ২০২৪ , ৫:৪৯ অপরাহ্ণ প্রিন্ট সংস্করণ
সরকারি চাকরিতে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা ব্যবস্থা পুনর্বহাল করা নিয়ে হাইকোর্টের রায় প্রত্যাখ্যান করে কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে মানববন্ধন করেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের(রাবি) শিক্ষার্থীরা।
সরকারি নিয়োগের প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা ব্যবস্থা বাতিল করে ২০১৮ সালের প্রজ্ঞাপনকে অবৈধ ঘোষণা করে উচ্চ আদালত রায়ের প্রতিবাদে আজ বৃহস্পতিবার(৬জুন) সকালে রাবি কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে মানববন্ধন করেন তারা।
এসময় মানববন্ধনে রাকসু আন্দোলন মঞ্চের সদস্য সচিব আমানুল্লাহ আমান বলেন,আমাদের আজকে লাইব্রেরীর রিডিং রুমে থাকার কথা ছিল কিন্তু আমরা সেখানে থাকতে পারিনি, রাজপথে নেমে আসতে বাধ্য হয়েছি। আজকে আমরা দাড়িয়েছি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেবির সামনে। যদি আমাদের দাবি মেনে নেয়া না হয় পরবর্তীতে আমরা দাঁড়াবো বিশ্ববিদ্যালয়ের মেইনগেটে। তারপরেও যদি কোটা বাতিল না হয় আমরা মেইনগেইট এর সেই রাস্তায় নেমে যাব। কোটা পুনর্বহাল রায় যতদিন না পর্যন্ত বাতিল করা হবে ততদিন পর্যন্ত আমরা আমাদের আন্দোলন চালিয়ে যাব। আন্দোলনের স্রোতধারা পরিবর্তন হতে পারে কিন্তু আমরা আমাদের দাবিদাওয়া থেকে পিছপা হবো না।
ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি মেহেদী সজীব বলেন, মুক্তিযুদ্ধ সংগঠিত হয়েছিল সাম্য, নাগরিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচারের ভিত্তিতে।কিন্তু দুঃখের সাথে বলতে হয়, আজ ৫৩ বছর স্বাধীনতার পরেও আমরা সাম্যের দেখা পাইনি। এখনো অব্দি চাকরিতে শিক্ষার্থীদের সাথে কোটা নামক বৈষম্য মূলক আচরণ করা হচ্ছে। ২০১৮ সালে আমরা কোটার আন্দোলন করলে সেখানে প্রধানমন্ত্রী বিলুপ্ত ঘোষণা করেন।কিন্তু বর্তমানে কিছু মুষ্টিমেয় লোক আবারও কোটা পদ্ধতি বহাল রাখার জন্য হাইকোর্টে আপিল করে। কোটা পুনর্বহাল রেখে হাইকোর্ট যে দায় ঘোষণা করেছে আমরা তার তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
ইনফরমেশন সাইন্স অ্যান্ড লাইব্রেরি ম্যানেজমেন্ট এর শিক্ষার্থী নাইম বলেন,আমি বিশ্বাস করি কোটা পুনর্বহাল রায় বাতিল করা না হলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৯ হাজার শিক্ষার্থী কেউ ঘরে বসে থাকবেনা। ২০১৮ সালের ন্যায় জেগেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় জেগেছে, জেগেছে ২০১৮ সালের সেই বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা আবারও জেগেছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনার সম্মানার্থে বলছি এমন কোনো সিদ্ধান্ত নিবেন না যা সারা বাংলাদেশের কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা মেনে নেবেনা। যদি মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানিত করতে হয় তাহলে তাদেরকে স্বর্ণকষিত আবাসনের ব্যবস্থা করে দেন নয়তো মাসে লক্ষ টাকার সম্মানি প্রদান করেন এ নিয়ে ছাত্র সমাজ কোন কথা বলবে না, প্রতিবাদ জানাবে না।
আইন বিভাগে শিক্ষার্থী সানজিদা বলেন,আমি একজন নারী। প্রথম শ্রেনির চাকরিতে আমার কোটা বরাদ্দ থাকা সত্ত্বেও আমি এই বৈষম্যমূলক কোটার দৃঢ়ভাবে প্রতিবাদ জানাচ্ছি।।
আমি বিশ্বাস করি যদি আমার যোগ্যতা ও মেধা থাকে, তাহলে আমার যোগ্যতা ও মেধা দিয়ে আমি প্রথম শ্রেণীর চাকরি অর্জন করতে পারব।
এবং আমি মনে করি বাংলাদেশের প্রতিটি মেয়েরই এই সক্ষমতা আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার জন্য কোন কোটার দরকার ছিল না তিনি তার মেধা ও যোগ্যতা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। চাকরিতে সকল কোটা মিলিয়ে সর্বমোট ৫৬% রয়েছে আর বাকি ৪৪% মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য রাখা হয়েছে যা পশ্চিম পাকিস্তানি সরকার কর্তৃক পূর্ব পাকিস্তানের উপর বৈষম্যমূলক নীতির ন্যায়।
স্মৃতি নামক আরেক শিক্ষার্থী বলেন,কোটা পুনর্বহাল রেখে হাইকোর্ট যে রায় দিয়েছে তা সম্পূর্ণ স্বৈরাচারী। আগে যেমন দেখা যেত রাজার ছেলে রাজা হবে এবং কৃষকের ছেলে কৃষকই হবে বর্তমানে এই কোটা বহাল রেখে যে রায় ঘোষণা করেছে তা সেই স্বৈরাচারী প্রথার ন্যায়।আমরা আমাদের ন্যায্য দাবি এবং ন্যায্য অধিকার চাই। আমরা উচ্চশিক্ষা লাভ করে মাঠে কাজ করতে চাই না। নিজ মেধা দিয়ে চাকরি পেতে চাই। কোটা নামক বৈষম্যকে আমরা কোনভাবেই মেনে নিব না আমরা এই হাইকোর্টের রায়কে তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।
এসময় মানববন্ধন কর্মসূচিতে প্রায় পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে।