শিক্ষা

রাবি আইইআর’র ৬ মাসের সেমিস্টারে লাগছে ১২ মাস,শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ

  রাবি প্রতিনিধি: ৮ মে ২০২৫ , ৭:০৬ অপরাহ্ণ প্রিন্ট সংস্করণ

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইআর)–এর সান্ধ্যকালীন কোর্সের ক্লাস ও পরীক্ষা নিয়মমাফিক চললেও নিয়মিত শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে করা হচ্ছে অনিয়ম। দীর্ঘদিন থেকে শিক্ষার্থীরা সমাধানের কথা বলে আসলেও মিলছে না সমাধান। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অধিকাংশ নিয়মিত শিক্ষার্থী।

অনিয়মগুলোর মধ্যে রয়েছে, সান্ধ্যকোর্সে যারা টিউশন ফি দিয়ে ভর্তি হন, তাদের শিক্ষা কার্যক্রম স্বাভাবিকভাবে চলে। কিন্তু নিয়মিত কোর্সের শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে পোহাতে হচ্ছে দীর্ঘ সেশনজট। যেখানে ৬ মাসের সেমিস্টার কোর্স শেষ হতে সময় লাগছে প্রায় ১২ মাসের মতো। পরিক্ষার ফলাফল প্রকাশেও রয়েছে শিক্ষকদের ধীরগতি। ৪ বছরের অনার্স কোর্স শেষ হতে সময় লাগছে ৬ বছর। এসব দাবি তুললেই হুমকির সম্মুখীন হতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আইইআর এখন রাবি ক্যাম্পাসের সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া প্রতিষ্ঠান। যেখানে ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা মাস্টার্স শেষ করতে পারেনি এখনো। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের মাস্টার্স প্রায় শেষ পর্যায়ে। কিছু বিভাগে ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরাও মাস্টার্সে অধ্যায়নরত আছেন। কিন্তু আইইআর-এর ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা কেবল চতুর্থ বর্ষের প্রথম সেমিস্টারে অধ্যয়নরত আছেন। এছাড়া প্রতিটি ব্যাচই বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য বিভাগের তুলনায় সাত-আট মাস পিছিয়ে আছে এবং পরিক্ষার ফলাফল প্রকাশেও রয়েছে শিক্ষকদের ধীরগতি।

শিক্ষার্থীরা বলছেন, পরিক্ষা শেষ হওয়ার ৬-৭ মাস পেরিয়ে গেলেও ফলাফলের দেখা মিলে না। এমনকি কোনো কোনো সেমিস্টারের পরিক্ষা চলাকালীন সময়ে পূর্ববর্তী সেমিস্টারের ফলাফল প্রকাশ করা হয়। ২৪ পরবর্তী সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্যেক বিভাগে ইতিবাচক পরির্বতন আসলেও আইইআর এ কোনো ধরনের ইতিবাচক পরিবর্তন আসেনি বরং দিন দিন আইইআর-এর সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করছে। এতে প্রায় প্রতি ব্যাচের শিক্ষার্থীদের মধ্যে হতাশা ও মানসিক চাপ বৃদ্ধি পাচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী বলেন, আমাদের আইইআরের নিয়মিত শিক্ষার্থীদের ৬ মাসের একটি কোর্স শেষ করতে সময় লাগতেছে ১২ মাস। আমরা আমাদের শিক্ষকদের সাথে এ বিষয়ে কথা বললেও তারা আমাদের কোনো সমাধান দিতে সক্ষম হননি। কেবল আশ্বাস দিয়ে যাচ্ছেন। ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষ থেকে ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষ পর্যন্ত পরিক্ষার খাতা মূল্যায়নে সিঙ্গেল এক্সামিনার থাকায় এতোদিন আমরা আমাদের যৌক্তিক দাবিগুলো প্রকাশ করতে পারি নাই। যদি আমাদের কোনো বন্ধু কোনো ধরনের দাবি প্রকাশ করেছে, তাহলে তাকে হুমকীর সম্মুখীন হতে হয়েছে। সব মিলিয়ে আমরা মানসিক চাপে রয়েছি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক শিক্ষার্থী বলেন, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, আইন ও ভূমি প্রশাসন বিভাগসহ বিভিন্ন বিভাগেই শিক্ষক সংকট রয়েছে। কিন্তু তারা নিয়মিত পরীক্ষা ও ক্লাস নিয়ে কোর্স শেষ করছে। তাহলে আমরা কেন পিছিয়ে থাকব? আমাদের শিক্ষকরা যখন ‘কোয়ালিটি এডুকেশন’-এর কথা বলেন, তখন তাদের উচিত পর্যাপ্ত ক্লাস নেয়া এবং নির্ধারিত সময়ে সেমিস্টার শেষ করা। আমাদের দাবি আইইআর-এর সার্বিক সমস্যা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যেন দ্রুত সমাধান করে আমাদের একাডেমিক জীবনে স্বস্তি ফিরে দেয়।

এ বিষয়ে রাবি আইইআরের পরিচালক অধ্যাপক ড. আকতার বানু বলেন, আমি অন্তত কাউকে কোন ধরনের হুমকি দেইনি এবং কেউ হুমকি দিয়েছে কিনা তা আমার জানা নেই। আর রেজাল্ট দেরি হওয়ার অনেকগুলো কারণ রয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে করোনার দু’বছরের গ্যাপ। আমরা এখন কমিয়ে (সেশনজট) সাত মাসে আনতে সক্ষম হয়েছি। চেষ্টা করছি আরো কমিয়ে আনার। এখানে একসাথে অনেকগুলো প্রোগ্রাম চলে, যেমন অনার্স, মাস্টার্স, সান্ধ্যকোর্স ইত্যাদি। আমাদের শিক্ষক স্বল্পতাও রয়েছে। তাই এতগুলো প্রোগ্রাম রান করা একটু কষ্টকর। আমি দায়িত্বে আসার পর থেকে আমার অফিসিয়াল কিছু কাজ বেড়েছে। আমি নিজে একাই সাত-আটটি কোর্স পড়াই। সব মিলিয়ে সবার উপরই চাপ পড়ছে।

তিনি আরও বলেন, আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাঁচজন শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছিলাম। কিন্তু তারা পাঁচজনই চলে গিয়েছে। তাই আমরা যাকে-তাকে শিক্ষক নিয়োগ দিতেও পারছি না। চিন্তাভাবনা করেই নিয়োগ দিতে হবে। ভিন্ন বিভাগ থেকে যারা ক্লাস নিতে আসে, তারা নিয়মমাফিক ক্লাস নেয় না। তারা যে আমাদের ক্লাস নিচ্ছে, এটাই আমাদের জন্য সৌভাগ্যের। তারা চাইলে নাও নিতে পারতো।

উল্লেখ্য, ২০০১ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট। শুরু থেকেই সান্ধ্যকোর্সের ওপর নির্ভর করে চলছিল এই প্রতিষ্ঠানটি। তবে ২০১৬ সাল থেকে অনার্স কোর্স চালু হয়। যেখানে বর্তমানে নয়টি অনার্স ব্যাচ আছে।