Editor ২৩ ডিসেম্বর ২০২২ , ১২:১৪ অপরাহ্ণ প্রিন্ট সংস্করণ
সদরুল আইনঃ
বিএনপি সম্প্রতি রাষ্ট্র মেরামতের ২৭ দফার রূপরেখা প্রকাশ করেছে।
এই রূপরেখার একটি ধারায় বলা হয়েছে, কোনো রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রী দু’বারের বেশি পদে বহাল থাকতে পারবে না।
এটি সংসদীয় গণতন্ত্র নীতির সাথে কতটুকু সামঞ্জস্যপূর্ণ তা নিয়ে যেমন আলোচনা হতে পারে, পাশাপাশি রাষ্ট্র মেরামতের রূপরেখায় এই বিশেষ ধারাটি সংযোজন নিয়ে বিএনপির মধ্যে তোলপাড় চলছে।
একাধিক কারণে বিএনপির নেতারা এই রাষ্ট্র মেরামতের রূপরেখার তীব্র সমালোচনা করছেন, তারা এটাকে ১/১১ এর শক্তির পুনরুত্থান বলেও বিবেচনা করছেন।
উল্লেখ্য যে, ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি তীব্র রাজনৈতিক অশান্তির মুখে সেনা সমর্থিত ড. মঈন উদ্দিন আহমেদের তত্ত্বাবধায়ক সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করে। এই তত্ত্বাবধায়ক সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর পরই নানা রাজনৈতিক সংস্কার কর্মসূচি গ্রহণ করে এবং রাজনৈতিক সংস্থার কর্মসূচি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বেশকিছু মৌলিক বিষয় উত্থাপন করেন।
এই সমস্ত বিষয়ের মধ্যে একটি ছিল, একজন রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রী কতবার তাদের দায়িত্বে থাকতে পারবেন। সেই সময় প্রস্তাব করা হয়েছিল, প্রধানমন্ত্রী দুইবারের বেশি দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না। বিএনপি এই সংস্কারের তীব্র সমালোচনা করেছিল।
সেই সময় বিএনপির মহাসচিব প্রয়াত আব্দুল মান্নান ভূইয়া সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে সংস্কার প্রস্তাবে এই দাবি উত্থাপন করলে বিএনপির নেতা-কর্মীরা ক্ষোভে ফেটে পড়েছিল। তখন রুহুল কবির রিজভী এটিকে উচ্ছিষ্টভোগীদের এক ধরনের কুৎসিত প্রস্তাব হিসেবে মন্তব্য করেছিলেন।
এখন আবার বিএনপি এ বিষয়টিকে কিভাবে ফিরিয়ে আনলো, তা নিয়ে বিএনপির মধ্যে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। তাছাড়া শুধু এই পঞ্চম দফা নয়, আরও আনেকগুলো দফা নিয়ে বিএনপির মধ্যে প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
যেমন, এই ২৭ দফার মধ্যে ‘ধর্ম যার যার, রাষ্ট্র সবার’-এরকম একটি বক্তব্য সন্নিবেশিত করা হয়েছে। যেটি বিএনপির ১৯ দফার সাথে সাংঘর্ষিক। বিএনপি তার রাজনৈতিক চিন্তাধারায় বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদকে যেমন অগ্রাধিকার দেয়, তেমনি ইসলামিক মূল্যবোধকে প্রতিষ্ঠার কথাও তাদের রাজনৈতিক কৌশলপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে।
সেখান থেকে ধর্ম নিরপেক্ষতার নীতিতে বিএনপি কিভাবে সরে আসলো তা নিয়েও বিএনপির অনেক নেতা প্রশ্ন তুলেছেন।
বিএনপির কোনা কোনো নেতা বলছেন, ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে বিএনপি যেমন ড. কামাল হোসেনের খপ্পরে পড়েছিলেন এবং ড. কামাল হোসেন নেতা হয়ে বিএনপিকে বঙ্গবন্ধুর বিএনপি বানিয়েছিলেন এবং শেষ পর্যন্ত বিএনপিকে একটি লজ্জাজনক অবস্থার মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছিলেন।
এবার এ রকম কোনো নেপথ্যের গডফাদার আছে কিনা, সে নিয়েও বিএনপির মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে। কারণ এই ২৭ দফার মধ্যে যে সমস্ত দফাগুলো দেওয়া হয়েছে তার অনেকগুলোই বিএনপি কোনোভাবেই গ্রহণ করে না এবং বিএনপির রাজনীতির চিন্তা দর্শনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
বিশেষ করে বেগম খালেদা জিয়া যখন কারান্তরীন এবং অসুস্থ সে সময় দু’বারের বেশি কেউ প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না, সেটি বিএনপির অধিকাংশ নেতার মধ্যে তীব্র ক্ষোভ সৃষ্টি করেছে।
তারা বলছেন যে, বেগম খালেদা জিয়া তিনবারের প্রধানমন্ত্রী। আমরা বিভিন্ন বক্তব্যে বলছি, বিএনপি ক্ষমতায় এলে প্রধানমন্ত্রী হবেন বেগম খালেদা জিয়া। তাহলে, আমরা যে রূপরেখা দিলাম, তাতে বেগম খালেদা জিয়াই তো মাইনাস হয়ে গেলো।
বিএনপির অনেকের কাছেই এই প্রশ্নের উত্তর নেই। এই নিয়ে বিএনপির মধ্যে চলছে তীব্র মতবিরোধ এবং উত্তেজনা। এখন দেখার বিষয় যে, ২৭ দফা শেষ পর্যন্ত বিএনপি সমুন্বত রাখতে পারে কি না।
কারণ ২৭ দফা নিয়ে ইতোমধ্যেই তৃণমূলের মধ্যে বিভক্তি এবং উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। এটি কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব কিভাবে সামাল দেন, সেটিই এখন দেখার বিষয়।