বাসিন্দারা জানান, শুধুমাত্র চলাচলের রাস্তার জন্য বিদ্যালয় পড়–য়া শিক্ষার্থী, কৃষক ও অন্যান্য পেশার মানুষদের জীবনযাপন দূর্বিসহ হয়ে উঠেছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, জমিতে ধান রোপন করেছে স্থানীয় জমির মালিকেরা। প্রায় অর্ধ কিলোমিটার খেতের চিকন আইলের কাদাপানি পেরিয়ে চলাচল করছে সৈয়দপাড়া এলাকার এসব লোকজনেরা। একজনের বেশি চলাচল করার উপায় নাই। পথে বিপরীত দিক হতে একজন অপরজনকে অতিক্রম করতে হলে চাষাবাদের খেতে নেমে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। লোকজনদের চলাচলে খেতের ধান গাছ একটু হেলে গেলে জমির মালিকেরা বাঁশের বেঁড়া, খুঁটি দিয়ে অনেক সময় আইল বন্ধ করে দেয়।
এ পর্যন্ত ১০ বারেরও বেশি বন্ধ করে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। পরবর্তীতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের দারস্থ হয়ে অনুনয় বিনয় করে আইলের একাধিক স্থানে দেওয়া বেঁড়া সরিয়ে নিতে হয় বাসিন্দাদের।
সৈয়দপাড়ার বাসিন্দাদের মত স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও জমির ও খেতের মালিকদের নিকট অসহায়। চলাচলের রাস্তার জমিটুকু ছেড়ে দিতে অনুরোধ করলেও কেউ শোনেনি। বেশি টাকা দিয়ে কিনে নেওয়ার প্রস্তাব দিলেও রাজি হয়নি। ফলে এখানকার বাসিন্দাদেরকে জমির মালিকদের দয়ার মধ্যে থাকতে হয়।
২৫ বছরে এ ইউনিয়নে যথাক্রমে ৫ জন চেয়ারম্যান দায়িত্ব পালন করলেও কেউ এ এলাকার মানুষের কষ্ট লাঘবে রাস্তা করে দিতে পারেন নি। সৈয়দপাড়া এলাকাটি তিস্তা নদীর নিকটবর্তী হওয়ায় নদীর পানি বৃদ্ধি পেলেই এলাকাটি প্লাবিত হয়ে বাসিন্দাদের কষ্ট বেড়ে যায় কয়েকগুণ।
দহগ্রাম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণির শিক্ষার্থী সৈয়দপাড়া এলাকার মোস্তফা হাসান বলেন, ‘রাস্তা না থাকায় বিদ্যালয়ে যেতে খুব কষ্ট হয়। বৃষ্টি, বন্যায় বই, খাতা, বিদ্যালয়ের পোষাক হাতে নিয়ে কাঁদাপানি পার হয়ে পোষাক পরে তারপর বিদ্যালয়ে যাই।’
স্থানীয় বাসিন্দা কুদ্দুস আলী বলেন, ‘২৫ বছর ধরে পরিবার নিয়ে এখানে বসবাস করছি। চলাচলের রাস্তা না থাকায় কত যে কষ্ট তা বলে শেষ করা যাবে না। ইউপি সদস্য, চেয়ারম্যান ভোটের সময় রাস্তা করে দিবে বলে প্রতিশ্রæতি দেয়, নির্বাচিত হওয়ার পর আর খবরই নেয় না।’
ছকিম আলী বলেন, ‘এখানে কেউ অসুস্থ হলে গ্রাম্য চিকিৎকও এখানে আসেন না। কেউ মারা গেলেও সমস্যার শেষ থাকেনা।’
জমির অংশের মালিক সৈয়দ ফাতেহ্ আলী প্রধান বলেন, ‘মানবিক কারনে আমরা তাঁদেরকে চলাচল করতে দেই। অনেক সময় খেত রক্ষায় শরিকেরা বাঁশের বেঁড়া দেয়। চলাচলে বাধা দেওয়া হয়না।’
দহগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান বলেন, ‘যাতায়াতের রাস্তা না থাকায় ওই এলাকার বাসিন্দারা অনেক কষ্টে থাকে। রাস্তার জমি টুকুর জন্য জমির মালিকদের নিয়ে অনেকবার চেষ্টা করা হয়েছে। কেউ জমি দিবে না, বেঁচবেও না। সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ ছাড়া রাস্তা তৈরি করা সম্ভব নয়।’
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে পাটগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নুরুল ইসলাম বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন চেয়ারম্যানসহ ওই এলাকার বাসিন্দারা যোগাযোগ করলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’