শারমিন আক্তার ১৯ জানুয়ারি ২০২৫ , ৯:১৩ অপরাহ্ণ প্রিন্ট সংস্করণ
ষড়ঋতুর এই বাংলাদেশ বিভিন্ন ঋতুতে ভিন্ন ভিন্ন রূপ ধারণ করে। সুজলা-সুফলা শস্য-শ্যামল অপরূপ বাংলাদেশে ঋতুচক্রে হেমন্তকালের পরই প্রকৃতি ঘন কুয়াশার মুখ ঢেকে উত্তরের হিমেল হাওয়া নিয়ে উপস্থিত হয় শীতকাল। মানুষকে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করার সুযোগ তৈরি করে দেয় এবং মানুষকে কে প্রাণবন্তকরে তোলে। শীতকাল জড়তা বা রিক্ততার প্রতীক হলেও এর রয়েছে এক ঐশ্বর্যরূপ। বাংলা বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী পৌষ ও মাঘ মাস শীতকাল। শীতের সকালে অপরূপ সৌন্দর্যে বাংলার প্রকৃতি সজ্জিত হয়। শীতের সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখা যায় সবুজ ঘাসের ডগায় ফোটা ফোটা শিশির বিন্দু সে এক অপরূপ দৃশ্য যখন ঘন কুয়াশা উপেক্ষা করে সূর্যের সোনালী রশ্মি ঘাসের ডগার ওপর জমে থাকা শিশির বিন্দুর উপর পরে শিশির গুলো সোনার টুকরোর মত জ্বলজ্বল করে। একটু বাগানের দিকে চোখ রাখলে দেখা যায় কত রকমের ফুল ফুটে রয়েছে গোলাপ,চন্দ্রমল্লিকা, গাঁদা আরও নানা রকমের ফুলের দিকে ছুটে যায় মৌমাছিরা। সে দৃশ্য চোখ জড়ানো মন ভোলানো। মধু সংগ্রহের উদ্দেশ্যে তারা ছুটে চলে।
এ সময়ে কৃষকেরা ব্যস্ত থাকে সবজি বা শস্য খেতে। একেক জন এক এক কাজে ব্যস্ত থাকে। হয়তো কেউ নাঙ্গল দিয়ে আলু বা তামাক খেতে, অপরদিকে দিকে কেউ হয়তো সরিষা বা গম খেতে পাখি তাড়ানোর কাজে নিয়োজিত থাকে। তবে যখন সরিষা খেতে ফুল আসে আর পোকামাকড় বা মৌমাছিরা মধু সংগ্রহের কাজে ব্যস্ত থাকে মাঠের পর মাঠ সরিষা ক্ষেতের হলুদের সমারোহ। এই দৃশ্য শুধু শীতকালে দেখা যায়।
অন্যদিকে নবান্নের শুরুটা হেমন্তে হলেও শীতকালে এর পরিপূর্ণতা পায়। গ্রামে শীতের সকালে চুলার উপর থেকে ধোঁয়া উঠা গরম গরম পিঠা দিয়েই সকালের আহার সম্পন্ন করা হয়। তাই গ্রামের বধূরা বিভিন্ন ধরনের পিঠা বানাতে ব্যস্ত থাকে। গ্রামের মতো বিচিত্র ধরনের পিঠা তৈরি করা আর আমোদ করে খাওয়ার চিত্র শহরে তেমন দেখা যায় না। তাই গ্রামের বিভিন্ন পিঠা শীতকে আরও উপভোগ্য করে তোলে।
শীতকালের অন্যতম চিত্র হল খেজুর গাছের রস সংগ্রহের জন্য মাটির কলস টাঙানো। একজন মানুষ খেজুর গাছে কলস বেঁধে রাখে এবং সারারাত ধরে ফোটায় ফোটায় খেজুর রস পরে কলসে। পরের দিন সকালে গাছ থেকে রস সংগ্রহ করে বাড়ির সকলে পান করে কেউ আবার রোজ গ্রামে গ্রামে ঘুরে ঘুরে বিক্রি করে তাদের সংসার চালায়।
শীতকালে সাধারণত গাছের পাতাগুলো ঝরে পড়ে। তাছাড়া নদী-নালা খাল-বিল শুকিয়ে যেতে থাকে। শীতকালে ছেলে মেয়ে এবং বৃদ্ধরা খরের মধ্যে আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারনের চেষ্টা করে। হিম শীতল আবহাওয়া থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য বেছে নেয় এই পদ্ধতি। তাছাড়া শীতকালে শহরের তুলনায় গ্রামে শীতের প্রকোপ বেশি। তাছাড়া গ্রামের শীতের মত শহরের শীতের সকাল এতটা মনোরম হয় না। শীত উপভোগ্য আর রুপময় হলেও কারো কারো জন্য এটি অভিশাপ। যাদের গরম কাপড়ের অভাব, বসবাস করার নির্দিষ্ট জায়গায় অভাব, তাদের জন্য শীতকাল একটা অভিশাপ।
কারণ তাদের গায়ে গরম কাপড় থাকে না, মাথার ওপর ছাদ থাকে না, ঘরে থাকে না নতুন ফসল। তবুও তারা প্রতিনিয়ত বেঁচে থাকার অভিনয় করে। শীতের কুয়াশাছন্ন সকাল তাদের জীবনে সৌন্দর্য নয় বরং কান্নার প্রতিরূপ। শহরের বস্তি, ফুটপাতের মানুষের জন্যও শীতকাল অনেক কষ্টকর। যারা দিনমজুর তারা অনেক সময় শীতের তীব্রতার কারণে কাজের সন্ধানে যেতে পারে না এবং পোশাক না থাকার কারণে ভালোভাবে কাজ করতে পারে না। পথ শিশু বা ছিন্নমূল মানুষের জন্য শীত সুখকর নয় বরং কষ্টের।
শীতকাল বৃদ্ধ, শিশু, ফুটপাতে বসবাসকারী মানুষের জন্য কষ্টকর হলেও কৃষকের কাছে আনন্দের। কারণ শীতকালে বিভিন্ন ধরনের শীতকালীন সবজি চাষাবাদ করে তারা আর্থিক ভাবে লাভবান হয়। ঋতুচক্রের পরিবর্তনের ফলে প্রকৃতি আবারএক রূপে সাজে শীতের শেষ ভাগে। আর তাই প্রকৃতিকে অপরূপ রঙ্গে সাজিয়ে কিছুদিনের মধ্যেই হয়তো বিদায় নেবে শীত।
লেখক:
শারমিন আক্তার,
শিক্ষার্থী,বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়,রংপুর।