সারাদেশ

শীতে বিপর্যস্ত চিলমারী, রাতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ইউএনও’র শীতবস্ত্র বিতরণ

  চিলমারী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি ২ জানুয়ারি ২০২৫ , ৭:৩০ অপরাহ্ণ প্রিন্ট সংস্করণ

কুড়িগ্রামের চিলমারীতে তীব্র শীত ও হিমেল হাওয়ায় জনজীবনে বিপর্যয় নেমে এসেছে। এতে নৌ পথে বিপাকে পড়েছেন যাত্রী ও মাঝিরা৷ দুদিন ধরে সকাল সন্ধ্যা ঘন কুয়াশার কারণে নৌপথে নৌকা পারাপার অনেক সময় লাগছে। এছাড়াও এ পথে যাত্রীর সংখ্যাও কমে যাচ্ছে।

নৌকার মাঝি আলম মিয়া জানান, শীতের কারণে নৌকা চালানো টা কঠিন হয়ে গেছে। কুয়াশার কারণে কিছুই দেখা যায় না। সকালে আড়াই ঘন্টায় রৌমারী ঘাট হতে চিলমারী ঘাটে এসেছি। কুয়াশা না থাকলে দেড় ঘন্টায় আসা যায়।

রাজারহাট আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার জানায়, বৃহস্পতিবার (২ জানুয়ারি ) জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১১ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। গত কয়েক দিন ধরে এই অঞ্চলের তাপমাত্রা ১১-১২ ডিগ্রিতে ঘরে ওঠানামা করছে। যা আগামী কয়েকদিনে আরও কমার সম্ভাবনা আছে।

তীব্র শীতে নিম্ন আয় ও হতদরিদ্রদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ চলমান রয়েছে। ইতিমধ্যে প্রায় তিন হাজার কম্বল পর্যায় ক্রমে বিভিন্ন শ্রেনির মানুষদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়াও ইউএনও সবুজ কুমার বসাক সন্ধার পর রাতের আধারে ঘুরে ঘুরে অসহায় দুঃস্থদের বাড়ি বাড়ি গিয়েও বিতরণ করছেন।

গতকাল বুধবার (১ জানুয়ারি) ও বৃহস্পতিবার (২ জানুয়ারি) এ উপজেলার রাতের বেলা বৃষ্টি মত করে ঝড়ছে কুয়াশা। এছাড়াও দিনের বেলাও সূর্য্যের আলোর দেখা মেলেনি। এতে করে শ্রমজীবী মানুষরা বিপাকে পড়েছেন। দিনে কুয়াশা না ঝরলেও হিম বাতাসের কারণে ঘর থেকে বের হওয়াটা অনেক কঠিন হয়ে পড়েছে। এতে করে স্কুলগামী শিক্ষার্থীরা স্কুলে যেতে পারছেন না ঠিক ভাবে।

স্কুল শিক্ষার্থী জানান, প্রচন্ড ঠান্ডার কারণে স্কুল, প্রাইভেট যাওয়াটা কঠিন হয়ে পড়েছে। হাতপা ঠান্ডায় জমে যাচ্ছে।

স্থানীয় বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম (৬৫) জানান, কয়েক দিন থেকে কনকনে ঠান্ডা আর সাথে বাতায় আমরা কাবু হয়া গেইলাম। না যাবার পাই কাজে। পেট তো আর ঠান্ডা বোঝে না তাই কষ্ট হলেও কাজে বের হতে হয়।

পাত্রখাতা এলাকার নয়ন মিয়া জানান, পেটের দায়ে বাড়িতে থাকতে পারছি না। পুরাতন কাপর ও সরকারি কম্বল দিয়ে কোন রকমে শীত নিবারনের চেষ্টা করছি। মাঝে মধ্যে খরখুটো দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে বসে থাকি।

শীতের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় শিশু ও বৃদ্ধরা আক্রান্ত হচ্ছে শীতজনিত নানা রোগে। শীত ও কনকনে ঠান্ডায় হাসপাতালে বাড়ছে ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট, সর্দি-কাশিসহ ঠান্ডাজনিত রোগ।

চিলমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মো. আবু রায়হান জানান, গত দুইদিন থেকে শীতের প্রকোপ বেশি দেখা যাচ্ছে তাই হাসপাতালে ডাইরিয়া, নিউমোনিয়া,শ্বাসকষ্ট রোগী বেড়েছে।তবে এই শীতে শিশু এবং বয়স্ক দের অযথা বাইরে না বাড়ার এবং সব সময় গরম কাপড় পরিধান করার পরামর্শ দেন। কম বয়সী শিশুদের যত্ন নিতে হবে এবং হালকা কুসুম গরম পানি পান করাতে হবে।

চিলমারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার সবুজ কুমার বসাক বলেন, আমরা তিন হাজার কম্বল বরাদ্দ পেয়েছিলাম উপজেলার জন্য যা গত কয়েকদিনে পর্যায়ক্রমে বিতরণ করা হচ্ছে। আমরা রাতে বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দরিদ্রদের খোঁজখবর নিয়ে তাদেরকে শীত বস্ত্র হিসাবে কম্বল দিয়ে আসছি। তাছাড়া জেলায় আরো কম্বলের চাহিদা দেয়া আছে সেগুলা আসলে বিতরণ করা হবে।