এস এম রাফি ১১ জুলাই ২০২৩ , ৯:৫০ অপরাহ্ণ প্রিন্ট সংস্করণ
এস এম রাফি, চিলমারী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধিঃ
কুড়িগ্রামের চিলমারীতে দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে নারী শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিয়ে আসছে গোলাম হাবিব মহিলা ডিগ্রি কলেজ। উপজেলার অন্য কলেজের তুলনায় এ কলেজে শিক্ষার মান অনেক গুণ। এমনকি প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এখন পর্যন্ত উপজেলার শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে সুনাম অক্ষুন্ন রেখে পাঠদান কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে কলেজটি। প্রতিষ্ঠানটিতে প্রশাসনিক ভবন না থাকায় নানা ধরণের সমস্যায় সম্মুখিন হতে হচ্ছে শিক্ষক-কর্মচারীসহ সংশ্লিষ্টদের। বর্তমান সময়ে কলেজটিতে নারীদের উচ্চ শিক্ষার জন্য অনার্স কোর্স চালু ও প্রশাসনিক ভবনের দাবী জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
কলেজটি ১৯৯৫ সালে কুড়িগ্রাম-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও সাবেক বন কর্মকর্তা মো. গোলাম হাবিব প্রতিষ্ঠিত করেন। দারিদ্রতম এই অঞ্চলের গরিব-অসহায় পরিবারের উচ্চ শিক্ষা বঞ্চিত মেয়েরা সহজে লেখা পড়া করার সুযোগ পেয়ে এলাকার নারী শিক্ষার ক্ষেত্রে বিস্ময়কর অগ্রগতি সাধন করেছেন। তাদের অনেকেই আজ সরকারি বেসরকারি পর্যায়ে নিজ নিজ ক্ষেত্রে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত। আর যাঁরা চাকরিতে যোগ দেননি তাঁরাও শিক্ষিত মা হয়ে মানুষের মতো মানুষ করছেন সন্তানকে। ফলে এলাকার নারী শিক্ষা বিস্তারে কলেজটির ভূমিকা সর্বত্র প্রশংসিত।
এই প্রতিষ্ঠানটিতে প্রতিবছর উচ্চ মাধ্যমিক (এইচএসসি) পরীক্ষায় রেকর্ড সংখ্যক বৃত্তি এবং জিপিএ-৫ পেয়ে আশানুরূপ ফলাফল করে আসছে। প্রতিবছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে ভর্তি যুদ্ধে সুনামের সাথে জায়গা করে নিচ্ছে এ কলেজের শিক্ষার্থীরা।
কলেজ সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটিতে নিয়মিত উচ্চমাধ্যমিক, কারিগরি কোর্স, ডিগ্রি কোর্স বিএ, বিএসএস, বিএসসি, বিকম চালু রয়েছে। নিয়মিত শিক্ষার পাশাপাশি বাংলাদেশ উনম্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের এইচএসসি, বিএ, বিএসএস প্রোগ্রামে এ মহিলা কলেজে অধ্যয়ন করছে শিক্ষার্থীরা।
এছাড়াও কলেজটিতে আছে সমৃদ্ধ কম্পিউটার ল্যাব, বিজ্ঞানাগার, মিলনায়তন, ডিজিটাল হোয়াইট বোর্ড, গ্রন্থাগার, বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ কর্ণার, নামাজের স্থান, শিক্ষার্থীদের বিশ্রামাগার। গাছগাছালি ঘেরা ও বিশাল খেলার মাঠসহ মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশে কলেজটি শিক্ষা প্রদান কার্যক্রম চালিয়ে আসছে।
কলেজটিতে রয়েছে বহুমুখী কর্মকান্ড, প্রতিটি জাতীয় দিবস ছাড়াও বছরের বিভিন্ন সময়ে আয়োজন করা হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। রয়েছে বিশুদ্ধ আর্সেনিক মুক্ত পানি পানের ব্যবস্থা, উন্নত স্যানিটেশন ব্যবস্থা।নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যে গত দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে আসা এই কলেজটি ইতোমধ্যে নারী শিক্ষায় মডেল হয়ে ওঠেছে।
তবে চিলমারী উপজেলায় অর্নাস কোর্স চালু না থাকায় উচ্চ শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন অনেকেই। উচ্চ শিক্ষা নিতে চাইলে যেতে হয় জেলা শহরে বা জেলার বাইরে। সদ্য এইচএসসি পরিক্ষায় উর্ত্তীণ হয়েছেন ওই কলেজের নুশরাত জাহান সুরভী। তিনি বলেন, চিলমারীতে অর্নাস পড়ার উপায় নেই। উচ্চ শিক্ষা নিতে গেলে বাইরে যেতে হবে। এখন সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছি। যদি চিলমারীতে অর্নাস চালু করা হতো তাহলে এলাকায় থেকে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করা যেত।
এদিকে অনেকেই বলছেন, চিলমারীতে অর্নাস চালু না হওয়ায় অনেকেই বাইরে গিয়ে পড়াশুনা করছেন। এতে একদিকে পরিবার থেকে বেড়েছে চিন্তা। আর আর্থিক ব্যয় তো আছেই। আবার অনেক শিক্ষার্থীর পরিবার দরিদ্র হওয়ায় এলাকার বাইরে গিয়ে পড়াশুনা করাতে পারেন না। এর ফলে অনেক শিক্ষার্থী উচ্চ শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা দাবী জানিয়েছেন চিলমারীতে অর্নাস র্কোস চালু করার এবং এলাকার সচেতন মহল প্রশাসনিক ভবনের দাবি জানিয়েছেন।
এদিকে প্রশাসনিক ভবণ না থাকায় কলেজটির শ্রেণিকক্ষ গুলোকে দাফতরিক কাজে ব্যবহার করায় পাঠদানেও কিছুটা প্রভাব পড়েছে।
গোলাম হাবিব মহিলা কলেজের ইন্টার ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী মোছা. আরভিনা আক্তার আঁখি বলেন, কলেজে প্রশাসনিক ভবন নেই। শিক্ষকদের বসার জন্য শ্রেণিকক্ষ গুলো ব্যবহার করছেন তাঁরা। এতে আমাদেরও কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। এই কলেজে পড়ালেখার মান ভালো। তাই শিক্ষার্থীর সংখ্যাও তুলনা মূলক অনেক বেশি। স্যারদের জন্য আলাদা একটি ভবন দিলে সুবিধা হবে।
ওই কলেজের গণিত বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. মামুন অর রশিদ বলেন, কলেজটিতে প্রশাসনিক একটি ভবন খুবই প্রয়োজন। এখানে শিক্ষক মিলায়তন নেই, অধ্যক্ষের কক্ষ নেই, উপাধ্যক্ষেরও কক্ষ নেই। আমাদের বাধ্য হয়ে পাঠদানের কক্ষ গুলোয় দাফতরিক কাজকর্ম পরিচালনা করতে হচ্ছে।
কলেজটির বর্তমান অধ্যক্ষ মো. জাকির হোসেন জানান, নারী শিক্ষার ক্ষেত্রে মানুষ গড়ার কারখানা হিসেবে চিলমারী উপজেলার মুখ উজ্জ্বল করেছে এ কলেজটি। নারী শিক্ষায় এই কলেজটির অবদান অনস্বীকার্য। কিন্তু প্রশাসনিক ভবন না থাকায় শিক্ষক কর্মচারীদের বসার স্থান ও শুষ্ঠুভাবে কলেজ কার্যক্রম চালানো কঠিন হয়ে পরেছে। প্রশাসনিক ভবন চেয়ে আবেদন করা হলেও এখন পর্যন্ত ভবন পাইনি। এলাকার নারী শিক্ষার প্রসারে দীর্ঘ ২৮ বছর ধরে অবদান রাখা এই কলেজটিতে বর্তমানে সহশ্রাধীক ছাত্রী অধ্যায়নরত রয়েছেন। তিনি আরও বলেন, প্রশাসনিক ভবণের পাশাপাশি আমাদের কলেজটিতে অর্নাস চালু করা হলে এখানকার শিক্ষার্থীরা উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করতে পারবেন।