এস এম রাফি ৪ আগস্ট ২০২৩ , ১০:৪৯ অপরাহ্ণ প্রিন্ট সংস্করণ
লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলায় সরকারি চাল বস্তা পরিবর্তন করে গুটি স্বর্ণা নামে বাজারে বিক্রি করছেন অসাধু ব্যবসায়ীরা। এসব সরকারি চাল ব্যবসায়ীদের কাছে ক্ষমতাসীন দলের নেতারা দিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
জানা গেছে, সরকার প্রতি বছর খাদ্য মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে মিলারদের কাছ থেকে চাল ক্রয় করে থাকে। প্রয়োজন অনুযায়ী নির্ধারিত ওজনের বস্তায় এসব চাল ক্রয় করা হয়। ক্রয়কৃত এসব চাল পরে নির্ধারিত সুবিধাভোগীদের মাঝে বিতরণ ও বিক্রি করে করা হয়। এর মধ্য খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির সুফলভোগীদের কাছে ১৫ টাকা কেজি দরে প্রতি মাসে কার্ড প্রতি ৩০ কেজি হারে চাল বিক্রি করা হয় নির্ধারিত ডিলারের মাধ্যমে। একইভাবে ভিজিডি কার্ডধারীদের মাঝেও কার্ড প্রতি ৩০ কেজি হারে বিনামূল্যে চাল বিতরণ করা হয়।
তাই ওজন ঠিক রাখতে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক তার উপজেলার চাহিদা অনুযায়ী ৩০ কেজির বস্তায় চাল ক্রয় করেন। একইভাবে ভিজিডি ও খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির জন্য চাল কেনা হয়। এর বাহিরে আর কোনো ৩০ কেজির বস্তা কেনা হয় না। আর এসব চালের বস্তায় খাদ্য অধিদপ্তরের সিলমোহর দেওয়া থাকে। যাতে খুব সহজে তা সরকারি সম্পদ বলে চিহ্নিত করা যায়।
এসব চাল সুবিধাভোগীদের কাছে বিক্রি না করে কৌশলে কালোবাজারে বিক্রি করে রাতারাতি আঙুল ফুলে কলাগাছে পরিণত হচ্ছেন অনেক অসাধু ব্যবসায়ী। এ ক্ষেত্রে তারা খাদ্য অধিদপ্তরের সিলমোহর যুক্ত বস্তা পরিবর্তন করে অন্য চাল আড়তের বস্তায় প্যাকেট করে বাজারে সরবরাহ করছেন।
চাল আড়তগুলোর বাজারে সরবরাহ করা চাল ছোট বস্তায় ২৫ কেজি ও বড় বস্তায় ৫০ কেজি। ৩০ কেজির বস্তা শুধুমাত্র সরকারি চালের জন্য। এ কারণে চক্রটি সরকারি চালের ৩০ কেজির বস্তা পাল্টিয়ে ২৫ কেজি ওজনের নতুন বস্তায় প্যাকেট করে বাজারে দেদারছে বিক্রি করছে। নিম্নমানের চালকে গুটি স্বর্ণাসহ বিভিন্ন নামে ভুয়া সিলমোহর দিয়ে ক্রেতাদের প্রতারিত করছেন অসাধু ব্যবসায়ীরা।
সরেজমিনে কালীগঞ্জ উপজেলার কাশিরাম চৌধুরী মোড় এলাকার মেসার্স অলিয়ার ট্রেডার্সের গুদামে গিয়ে দেখা যায়, শত শত সরকারি চালের বস্তা। তা পরিবর্তন করে ২৫ কেজি ওজনের দিনাজপুরের চিতা বাঘ মার্কা গুটি স্বর্ণা নামে প্যাকেট করা হচ্ছে। প্যাকেট শেষ হলে দ্রুতই তা চলে যাচ্ছে জেলার সকল বাজারে। খুবই নিরাপত্তার সঙ্গে অনেকটা গোপনীয়ভাবেই করা হচ্ছে বস্তা পরিবর্তন ও সরবরাহের কাজ।
স্থানীয় একাধিক চাল ব্যবসায়ীর দাবি, খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি ও ভিজিডির এসব চাল কম দামে ক্রয় করে বস্তা পরিবর্তন করে নিরাপদে অধিক মূল্যে বিক্রি করছে এই চক্রটি। এভাবে তারা দীর্ঘদিন ধরে সরকারি সম্পদ তছরুপ করে জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করছে।
মেসার্স অলিয়ার ট্রেডার্সের মালিক অলিয়ার রহমান প্রথম দিকে ক্রেতার পরিচয়ে মুখ খুললেও পরে সাংবাদিক পরিচয়ে পুরো বিষয় গোপন করেন। প্রথম দিকে অলিয়ার রহমান বলেন, সরকারি এসব চাল কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মনিরুজ্জামান কাঞ্চন ভাইয়ের। আমি শুধু নই, বেশ কিছু গুদামে দেওয়া আছে এসব চাল। প্রায় দুই শ মেট্রিক টন চাল দিয়েছিল। আমরা শুধু বস্তা পরিবর্তন করে ৩০ কেজির স্থলে ২৫ কেজি করে পাঠিয়ে দেই। তিনি কোথায় কীভাবে বিক্রি করেন আমি জানি না।
তবে কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মনিরুল ইসলাম কাঞ্চন বলেন, এসব চাল সম্পর্কে আমি কিছুই জানি না। গুদাম মালিককে আমি কোনোভাবেই চিনি না। আমার নাম বললে হবে? আমার চাল হিসেবে তার কাছে কী ডকুমেন্ট আছে দেখেন। কোনো অডিও বা কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারে কিনা। অলিয়ার কেন আমার নাম বলেছে তা আমি জানি না। এর সঙ্গে তিনি জড়িত নন বলে জোর দাবি করেন এই আওয়ামী লীগ নেতা।
কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জহির ইমাম বলেন, আমরা এসব নিয়ে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছি। অনেকেই গোডাউনে গোপনভাবে এই প্যাকেটগুলো করছে। বিষয়টি আমি অবগত হলাম। অবশ্যই পদক্ষেপ নেব।
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্ল্যাহ বলেন, সরকারি চাল কোনোভাবে কোনো গোডাউনে থাকার কথা নয়। কোন অসাধু ব্যবসায়ী যদি সরকারি চাল স্বর্ণা প্যাকেটজাত করে তাহলে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।