আবু বক্কর সিদ্দিক,উপজেলা প্রতিনিধি সুন্দরগঞ্জ(গাইবান্ধা): ১ মার্চ ২০২৫ , ৭:৪১ অপরাহ্ণ প্রিন্ট সংস্করণ
গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে পক্ষকালেও উদ্ধার হয়নি অপহৃত স্কুলছাত্রী। এ ঘটনায় নানাভাবে জড়িত সংঘবদ্ধ চক্রের সদস্যরাও রয়েছে অধরা।
জানা যায়, গত ১৬ ফেব্রুয়ারী সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টায় উপজেলার শোভাগঞ্জ ডিগ্রী কলেজ মোড় থেকে পূর্ব-পরিকল্পিতভাবে ৯ম শ্রেণীর ঐ ছাত্রীকে অপহরণ করে চক্রটি। অপহৃতা শোভাগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেণীর নিয়মিত ছাত্রী। এসময় একই স্কুলের ছাত্রী ও অপহৃতার প্রতিবেশী রঞ্জিনা আক্তার (আর্জিনা) মোবাইলফোনে মিনিটকার্ড রিচার্জের কথা বলে ছোট ভাই কামরুজ্জামানসহ পড়ার টেবিল থেকে ডেকে নিয়ে যায় ঐ স্কুলছাত্রীকে। রঞ্জিনার সঙ্গে গোপন সখ্যতা ও মোবাইলফোণে যোগসাজশে উক্ত কলেজমোড়স্থ মিনি-বিশ্বরোডে পৌঁছিলে আটোবাইক ও মিশুক গাড়ি নিয়ে আগে থেকেই ওঁৎপেতে থাকা সংঘবদ্ধচক্রের সদস্যরা স্কুলছাত্রীকে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে যায়। ঘটনার পর রঞ্জিনা আক্তার স্থানীয়দের কাছে প্রথমে সবকিছুই আড়াল করার চেষ্টা করে। পরে তার ছোট ভাই কামরুজ্জামান স্থানীয়দের কাছে ঘটনা বলে দেয়। এরপর রঞ্জিনার মোবাইলফোণ থেকে তথ্যচিত্র মিলতে থাকায় সে ঘটনার সত্যতা কিছুটা খুলে বলে। সে প্রথমে মাঠেরহাটে বললেও অপহরণকারীদের অধিকাংশই পার্শ্ববর্তী শ্রীপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ সমস গ্রামের বাসিন্দা। এদের মধ্যে আব্দুল ওরফে আঃ রহিমের ছেলে মমিন মিয়া (১৮), মোস্তফা মিয়ার ছেলে ফারুক মিয়া (১৮), আলমগীর হোসেনের ছেলে মাহিদ ইসলাম (১৭), আঃ মতিনের ছেলে জাহাঙ্গীর আলম (৩৮), আঃ রহিম ওরফে আব্দুলের ছেলে আব্দুল মোত্তালেব (১৭), মোহাম্মদ আলীর ছেলে সফিউল ইসলাম (৪০) ও স্বাধীন মিয়াসহ অজ্ঞাতনামা আরো ৪-৫ জন। রঞ্জিনার কথামতো অপহরণকারী চক্রটি অপহৃতার বাবার পরিবারের সঙ্গে জমিজমা সম্পর্কিত একটি বিরোধীয় পক্ষের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগপূর্বক দীর্ঘ পরিকল্পনা মাফিক এ ঘটনা ঘটিয়েছে বলে জানায়। অপহৃতার পরিবারের সঙ্গে দীর্ঘ শত্রুতা পোষণকারী পক্ষ ও অপহরণকারী চক্রের কথামতো মোবাইলে মিনিটকার্ড রিচার্জের কথা বলে ছোট ভাই কামরুজ্জামানকে সঙ্গে নিয়ে ঘটনার দিনক্ষণে ফাঁকি দিয়ে স্কুলছাত্রী (১৩) কে ডেকে নিয়ে যায় রঞ্জিনা আক্তার। এরপর অপহৃতাকে ফেরৎ দেয়ার কথা বলে ১৮ ফেব্রুয়ারী শ্রীপুর ইউনিয়নের বড়ুয়াবাজারস্থ কাজী আব্দুল মান্নানের অফিসে ইউপি’র সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম রাজা’র সভাপতিত্বে সালিশের নামে অপহৃতার পরিবারের কাছ থেকে বিভিন্ন কাগজে সহি-স্বাক্ষর গ্রহণের পর একটি রহস্যজনক সালিশ ও অঙ্গীকারনামা প্রস্তুত করেন। এরপর অপহৃতাকে সালিশস্থলে আনার জন্য কাজী আব্দুল মান্নান, তার ছেলে সামিউল ইসলাম ওরফে সোহেল, আব্দুল হক ওরফে আঃ রহিম মোটরসাইকেল নিয়ে চলে যান কাজীর ভগ্নিপতি জেলা সদরের মালিবাড়ি ইউনিয়নের কচুয়ার খামার গ্রামের মৃত আঃ রহিমের ছেলে রফিকুল ইসলামের বাড়ি। তারা ৩ জনই অপহৃতাকে জেলা শহরে রেখে গভীর রাতে একাকী ফিরে এসে কাজী আঃ মান্নান অপেক্ষমান অপহৃতার পরিবারবর্গকে মিথ্যা কথা বলে কিছু ব্যক্তির নামে মামলা করার কথা বলেন। সেসব ব্যক্তির মধ্যে একমাত্র তার ভাই আব্দুল ওরফে আব্দুর রহিম ছাড়া অন্যান্যরা সকলেই কাজীর মেয়ে নিয়ে চলমান মামলার প্রতিপক্ষ। এখানেই থেমে যায়নি ছেলে সোহেল, ভাই আব্দুলসহ কাজী আঃ মান্নানের কেরামতি। তারা অপহৃতাকে বিভিন্ন স্থানে লুকিয়ে রাখা, কথিত মানবাধিকারকর্মী ও গণমাধ্যমকর্মীকে ডেকে ১৩ বছর বয়সী অপহৃতাকে নানান ভয়ভীতি দেখিয়ে বাধ্য করে বক্তব্যের ভিডিওসহ স্থিরচিত্র ধারণ, বিভিন্ন কাগজে সহি-স্বাক্ষর গ্রহণ করা অব্যাহত রেখেছেন বলে বিভিন্ন মাধ্যমে অপহৃতার পরিবারকে অবগত করাচ্ছেন। এছাড়া, এ ঘটনায় মামলা হয়েছে ভেবে অপহৃতার বাবাকে কাজী, তার ছেলে ও কাজীর ভাই আব্দুল ওরফে আঃ রহিম বিভিন্ন সময় নানান ব্যক্তিকে দিয়ে মোবাইলফোনে মেয়ে ফিরিয়ে দেয়ার প্রস্তাব দিয়ে মুক্তিপণ দাবী করছেন। এমনকি, হুমকীও অব্যাহত রেখেছেন। অপহৃতা ঐ স্কুলছাত্রী তার বাবা-মায়ের কাছে ফিরে গিয়ে স্কুলে লেখা-পড়া করার কথা বলায় কাজী আঃ মান্নান, তার ছেলে সোহেলসহ অপহরণকারীরা অপহৃতাকে শারিরীক ও মানসিকসহ নানাভাবে নির্যাতনের কথা অপহৃতার পরিবারকে নানান মাধ্যমে অবগত করাচ্ছেন। এরই একপর্যায়ে গত ২০ ফেব্রুয়ারী বেলা ১১টা ২৫ মিনিটে ০১৭১৬৭৫৫৬৯৯ মোবাইল নম্বর থেকে অপহৃতার বাবার ফোনে কল করে ঐ নারী কলার নিজেকে একটি মানবাধিকার সংস্থার গাইবান্ধা জেলার সেক্রেটারী পরিচয় দিয়ে বলেন, ‘আপনার মেয়েকে ফেরৎ চান যদি খরচা-পাতি নিয়ে আমার অফিসে আসেন। তার আগে আপনাকে মামলা তুলে নিতে হবে। না হলে মেয়ে তো পাবেন না বরং আপনিই উল্টো মামলায় জেল খাটবেন। এ ধরণের অনেক কাজ করেছি। আমাকে ডিসি, এসপি, সবগুলো থানার ওসি ভাল করেই চেনে’। ৩ মিনিট ৩৪ সে. ধরে তার শর্তারোপকৃত কথা ও হুমকী চলতে থাকে। এরপর কয়েকদফা কথার মাঝে একবার পরিবহণের খরচের হিসেব দিয়ে তার নিজের জন্য কী…! রাতে মোবাইলফোনে মেয়েকে ফেরৎ চেয়ে অপহৃতার বাবা কল করলে তিনি জানান- ‘ আপনি আর মেয়েকে পাবেননা, যখন বলেছি- তখন আমি মেয়ের সামনে ছিলাম, আপনার মেয়ে তো ছোট, এখন কি করবেন- বিয়ে দিয়ে মেনে নিবেন, আপনার মেয়ে অসুস্থ্য, তার পায়ে কোন জুতাও নেই, মেয়ে আপনার কাছে না যেতে পারলে সে না-কি বিষ খাইবে, তো এখন কি করবেন। মেয়েকে নিবেন তো’! কয়েকদফা কথায় মেয়েকে ফেরৎ দেয়ার এখতিয়ার রাখলেও রাতে তিনি (ঐ নারী কলার) ব্যর্থতা স্বীকার করেছেন বলে জানা গেছে।
থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুল হাকিম আজাদ বলেন, অপহৃতা উদ্ধার ও জড়িতদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।