এস এম রাফি ৩১ আগস্ট ২০২৩ , ১০:৫৫ অপরাহ্ণ প্রিন্ট সংস্করণ
বাংলাদেশে স্যাটেলাইট কারখানা স্থাপন করতে চায় ফ্রান্স। সরকার বিষয়টি ইতিবাচকভাবে দেখছে ও সম্মতিও দিয়েছে। তবে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন।
বৃহস্পতিবার (৩১ আগস্ট) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর ঢাকা সফর নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে এসব কথা জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
ড. মোমেন বলেন, ‘ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট দিল্লিতে অনুষ্ঠেয় জি-২০ শীর্ষ সম্মেলন শেষে ঢাকায় আসতে চান। ১০ সেপ্টেম্বর সম্মেলন শেষ হবে এবং মনে হয়, তারপর তিনি বাংলাদেশে আসবেন। আমরা এটিকে স্বাগত জানাই।’
এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা প্রথম বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট ফ্রান্সের সহায়তায় উৎক্ষেপণ করেছি। আমরা আরও দুটি স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করতে চাই। ফ্রান্সের প্রযুক্তি ভালো। তারা স্যাটেলাইট কারখানা নির্মাণ করার প্রস্তাব করেছে। আমরা এটা বিবেচনা করছি। এখনো আমরা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেইনি। এ ছাড়াও তারা কিছু বিমান বিক্রি করতে চায় এবং আমরা রাজি হয়েছি। এয়ারবাসের ১০টি বিমান। এর মধ্যে দুটি কার্গো বিমান। আমাদের ডলার সংকটের কারণে প্রক্রিয়াটি কিছুটা দেরি হয়েছে। আমরা দুটিই চাই বোয়িং ও এয়ারবাস।’
ইন্দো-প্যাসিফিক একটি গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে ফ্রান্স যথেষ্ঠ বিনিয়োগ করতে চায়। তাদের নতুন কার্যক্রম হচ্ছে তারা বিনিয়োগের পাশাপাশি এ অঞ্চলের সঙ্গে কানেক্টিভিটি বাড়াবে। আমারে এটি ভালো উদ্যোগ বলেছি। স্বাগত জানিয়েছি।’
ফ্রান্সের সঙ্গে আলোচনার এজেন্ডা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তন, খাদ্য নিরাপত্তা, জ্বালানি নিরাপত্তা, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, বৈধ অভিবাসনসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে। এখন সফরসূচি ও আলোচ্য বিষয় নিয়ে কাজ করছে দুই দেশ।’
রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ ঢাকা আসবেন ৭ সেপ্টেম্বর এবং পরের দিন তিনি জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেওয়ার জন্য দিল্লি যাবেন বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে গত নভেম্বরে ইন্ডিয়ান ওশান রিম অ্যাসোসিয়েশনের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল এবং তিনি আসবেনও বলেছিলেন। কিন্তু শেষ মুহূর্তে উনি আসতে পারেননি। এবারে ল্যাভরভ জি-২০ সম্মেলনে দিল্লি আসবেন এবং সেখানে যাওয়ার আগে বাংলাদেশে আসবেন।’
রাশিয়ার সহায়তায় বাংলাদেশ প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প করছে জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘রাশিয়া যখন কিছু ইকুইপমেন্ট পাঠায়, তখন যে জাহাজ দিয়ে পাঠিয়েছিল, সেটি ছিল নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত জাহাজ। কিন্তু এটি রাশিয়ার দোষ নয়। এটি যারা পাঠিয়েছে সেই কন্ট্রাক্টরের দোষ। তারা সস্তা দরের জাহাজ পেয়ে সেটিতে পাঠায়। তখন আমেরিকানরা অবজেকশন দেয়। আমরা তখন সেই জাহাজটি গ্রহণ করিনি। নিষেধাজ্ঞার কারণে রাশিয়াকে অর্থ পাঠানোর যে সমস্যা তৈরি হয়েছিল, সেটির সমাধান হয়েছে বলে জানান মন্ত্রী।’
নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকার চাপে নেই, বরং গণমাধ্যম চাপে রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। নির্বাচন নিয়ে পশ্চিমাদের বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের চাপ রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে নয়া দিল্লিতে অনুষ্ঠেয় জি-২০ সম্মেলনের ফাঁকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। দুই সরকারপ্রধানের বৈঠকে নির্বাচন প্রসঙ্গ আসবে কি না -এমন প্রশ্ন রাখা হয় পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে। জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘সরকারপ্রধানের বৈঠকগুলো শেষ মুহূর্তে ঠিক হয়। দুই প্রধানমন্ত্রীর অবশ্যই বৈঠকের সম্ভাবনা রয়েছে। ভারতে আমরা গেলে সাক্ষাতের অবশ্যই সম্ভবনা রয়েছে এবং তারা (হাসিনা-মোদি) দ্বিপাক্ষিক এবং আন্তর্জাতিক ইস্যু নিয়ে আলোচনা করবেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা খুব চাপটাপের মধ্যে নাই। আসলে এটা ঠিক না। মিডিয়া মনে হয় চাপে রয়েছে। শেখ হাসিনার সরকার বাংলাদেশে নির্বাচন এবং গণতান্ত্রিক ধারাকে টেকসই করেছে। প্রধানমন্ত্রীর অবাধ, স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের অঙ্গীকার করেছেন। আমরা নিজেদের তাগিদেই স্বচ্ছ নির্বাচন করব।’