রাজনীতি

১৫ দিনের মধ্যে জিএম কাদের ও তার স্ত্রীর নামে মামলা প্রত্যাহার না হলে রংপুর অচল করে দেয়ার ঘোষণা

  হারুন উর রশিদ সোহেল, রংপুর ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ , ৮:৩৯ অপরাহ্ণ প্রিন্ট সংস্করণ

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান, সাবেক বিরোধী দলীয় নেতা জিএম কাদের ও তার স্ত্রী শেরিফা কাদেরের নামে ঢাকার যাত্রাবাড়ি থানায় করা মামলা আগামী ১৫ দিনের মধ্যে প্রত্যাহার করার করার দাবি জানিয়েছেন রংপুরের নেতাকর্মীরা। এর আগে সোমবার দুপুর সোয়া ১২টায় নগরীর সেন্ট্রাল রোডস্থ দলীয় কার্যালয় থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিলটি পায়রা চত্বর, কৈলাশ রঞ্জন মোড়, সিটি করপোরেশন, কাচারীবাজার হয়ে ডিসি অফিস ঘেরাও করে। মিছিলে জিএম কাদের ও তার স্ত্রী শেরিফা কাদেরের ওপর মামলা প্রত্যাহারে বিভিন্ন স্লোগান দেন নেতাকর্মীরা। পরে ডিসি অফিস ক্যাম্পাসে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন দলটির কো-চেয়ারম্যান, রংপুর মহানগর সভাপতি ও সাবেক সিটি মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা। তিনি বলেন, আজকে শুধু আমরা একটা মিসকল দিলাম। মিসকলের পরে যখন অরজিনাল কল আসবে তখন আপনারা বুঝতে পারবেন, জাতীয় পার্টি কী জিনিস। আমরা সেদিকে যেতে চাই না। আমরা চাই জি এম কাদের এবং তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে করা মিথ্য মামলা ১৫ দিনের মধ্যে প্রত্যাহার করা হোক। সেটা যদি না করেন, তাহলে আবার ১৫ দিন পরে আপনাদের সাথে আমাদের দেখা হবে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ও প্রধান উপদেষ্টাকে বলবো, অহেতুক কাউকে হয়রানি করবেন না, তাদের নাম মামলা থেকে প্রত্যাহার করেন।‘ নইলে রংপুরকে অচল করে দেয়া হবে।
সরকারকে উদ্দেশ করে মোস্তফা বলেন, ‘বর্তমান জেলা প্রশাসক, এসপি, ডিআইজি, বিভাগীয় কমিশনার, পুলিশ কমিশনার মহোদয় আপনারা আপনাদের পূর্বসুরীদের কাছে জেনে নিবেন রংপুরে জাতীয় পার্টির ইতিহাসটা কী। এখানে জাতীয় পার্টি কী করতে পারে, কী করতে পারে না। আমরা শান্তিপূর্ণ দল, আমরা মারামারি, ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ পছন্দ করি না। হয়তোবা আপনাদের অফিসে আমাদের দেখেন না। কারণ আমরা তদবিরবাজ নই। সেজন্য আমাদের সাথে আপনাদের পরিচিতি কম। কিন্তু এমনও সময় আসবে। হয়তোবা ১৯৯১ সালের ৫ জানুয়ারি তৎকালীন জেলা প্রশাসককে রিকশার ওপরে দাঁড়িয়ে তৎকালীন সময়ে এরশাদের মনোনয়নপত্র বৈধ করতে হয়েছিল। এটা আপনাদের জানা থাকা দরকার। আমরা চাই না সেরকম পরিস্থিতি সৃষ্টি হোক।’
বক্তারা বলেন, ‘এই সরকার এক হাজার মানুষের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত। ৩০ হাজার মানুষ, কেউ পা হারিয়েছে, কেউ হাত, কেউ চোখ। আমরা চাই এই সরকারকে সময় দিতে। প্রয়োজনীয় সংস্কার করে একটা শান্তিপূর্ণ নির্বাচন তারা দিবেন। সেই জন্যই আমরা অপেক্ষা করছি।’
এ সময় জাতীয় পার্টির নেতারা তাদের বক্তব্যে বলেন, সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন শুরু হলে শিক্ষার্থীদের পক্ষে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের বাজেট অধিবেশনে প্রথম বক্তব্য উপস্থাপন করেন। ছাত্রদের যৌক্তিক দাবিসমূহ মেনে নেওয়ার জন্য জাতীয় সংসদে দাবি উপস্থাপন করে তিনি বক্তব্য দেন। পরবর্তীতে জাতীয় পার্টি দলগতভাবে ছাত্রদের আন্দোলনের প্রতি সমর্থন প্রদান করে এবং ছাত্রদেরকে মুক্তিসেনা হিসেবে উল্লেখ করে।
নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, শহীদ আবু সাঈদের কবর জিয়ারত ও শোকাহত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জাতীয় পার্টি জানিয়েছে। জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা বিভিন্ন ভাবে ছাত্রদের আন্দোলনে সহযোগিতা করেছেন। শুধু তাই নয় রংপুরসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় জাতীয় ছাত্র সমাজ, জাতীয় যুব সংহতি ও জাতীয় স্বেচ্ছাসেবক পার্টির নেতাকর্মীরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছে। তাদের অনেকেই আহত হয়েছেন। কিন্তু ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর একটি মহল শুধুমাত্র রাজনৈতিক বিরোধিতার কারণে জাতীয় পার্টিকে মিথ্যা ও মনগড়া অপপ্রচার চালানোর চেষ্টা করছে। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানকে ঘিরে ষড়যন্ত্রমূলক অপরাজনীতিও করছে। মিথ্যা মামলা দিয়ে বিগত সরকার জাতীয় পার্টির বহু নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করেছিল। এখন অন্তবর্তী সরকারের সময়েও জাতীয় পার্টি নিয়ে ষড়যন্ত্র চলছে।
রংপুর মহানগর ও জেলা জাতীয় পার্টি আয়োজিত উক্ত সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন, কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান ও রংপুর মহানগর সাধারণ সম্পাদক এসএম ইয়াসির, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলার সদস্য সচিব হাজি আব্দুর রাজ্জাক, কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতিক সম্পাদক আজমল হোসেন লেবু, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও মহানগর সিনিয়র সহ-সভাপতি লোকমান হোসেন, সহ-সভাপতি পীরগাছা উপজেলা সভাপতি সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মাহবুবার রহমান, সদর উপজেলা সদস্য সচিব ও সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মাসুদার রহমান মিলন, বদরগঞ্জ উপজেলা সদস্য সচিব মাসুদ রানা, পীরগঞ্জ উপজেলা যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাসুদ মিয়া, মিঠাপুকুর উপজেলার আহবায়ক আনিছুর রহমান, জেলা যুব সংহতির সভাপতি হাসানুজ্জামান নাজিম, সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম, মহানগর ছাত্র সমাজের সাবেক সভাপতি ইয়াসিন আরাফাত আসিফ, সভাপতি আমিনুল ইসলামি ছোট, সাধারণ সম্পাদক আলমগীর হোসেন জসিম, জেলা ছাত্রসমাজ আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম প্রমুখ। পরে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে দাবি আদায়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি দেন নেতারা।
এসময় রংপুর মহানগর জাতীয় পার্টিসহ যুবসংহতি, ছাত্রসমাজ, শ্রমিক পার্টি, ওলামা পার্টি, কৃষক পার্টি, স্বেচ্ছাসেবক পার্টি, মহিলা পার্টিসহ বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।