এস এম রাফি ১৯ অক্টোবর ২০২৩ , ৯:৪৫ অপরাহ্ণ প্রিন্ট সংস্করণ
সদরুল আইন নিজস্ব প্রতিবেদকঃ আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চান? ঠিক আছে। কত টাকা খরচ করতে পারবেন? একশো কোটি, দুইশো কোটি, নাকি তিনশো কোটি?
অবাক হবেন না। এটি কোন গল্প কথা নয়, বাস্তবতা। আওয়ামী লীগে এখন এভাবেই ওপেন সিক্রেটভাবে মনোনয়ন বাণিজ্য হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অভিযান চালিয়ে মনোনয়ন বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত এরকম বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করেছে।
এদের একজন হানিফ মিয়া। যাকে গতকাল র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ান (র্যাব) গ্রেফতার করে।
তিনি নিজেকে প্রধানমন্ত্রীর নিকট আত্মীয় পরিচয় দিতেন। নৌকাই মনোনয়ন পাইয়ে দেওয়ার জন্য তিনশো কোটি টাকা চাইতেন বিভিন্ন মানুষের কাছে। তার খদ্দের ছিল বিভিন্ন উঠতি ব্যবসায়ী এবং রাজনীতিতে হঠাৎ করে আসা সাবেক আমলাসহ বিভিন্ন স্তরের মানুষরা।
র্যাবের গোয়েন্দা জালে ধরা পড়ে তিনি গ্রেফতার হয়েছেন বটে, তবে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বাণিজ্যের সিন্ডিকেট বন্ধ হয়নি। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বাণিজ্য এখন ওপেন সিক্রেট হয়ে গেছে।
আওয়ামী লীগের একজন কেন্দ্রীয় নেতা বলেছেন, হানিফ মিয়া বা এই ধরনের ব্যক্তিরা শুধুমাত্র সিন্ডিকেটের একটি ক্ষুদ্র অংশ। যারা আসলে নেতাদের ছত্রছায়ায় এ ধরনের অপতৎপরতা করার সাহস পান।
আওয়ামী লীগের বিভিন্ন নেতারা বলছেন যে, বিভিন্ন স্তরে এখন মনোনয়ন বাণিজ্যের দোকান খোলা হয়েছে। অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি এসবের সঙ্গে জড়িত। কোন এলাকার মনোনয়নের কত টাকা হবে, তা নিয়ে বিভিন্ন মহলে আলাপ আলোচনা চলছে।
মনোনয়ন বাণিজ্যে সবচেয়ে লাভজনক জায়গা হলো ঢাকা। অনেকেই বলছেন যে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকার বেশ কয়েকটি আসনে মনোনয়ন বিক্রি করার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরাই কথাবার্তা বলছেন।
শুধু ঢাকা নয়। চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যেখানে একাধিক প্রাথী রয়েছে, বিশেষ করে যেখানে উঠতি ব্যবসায়ীরা মনোনয়ন পেতে আগ্রহী, সেই সমস্ত স্থানে এখন মনোনয়ন বাণিজ্য ওপেন সিক্রেটে পরিণত হয়েছে।
আওয়ামী লীগের বিভিন্ন নেতারা বলছেন যে, কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব থেকে তৃণমূল পর্যন্ত অনেকেই এই মনোনয়ন বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত এবং তারা দলের অনেক নেতার নাম ব্যবহার করছেন, অনেকে প্রধানমন্ত্রীর নাম পর্যন্ত ব্যবহার করছেন।
তবে কোনটি সত্য কোনটি মিথ্যা সেই সম্পর্কে কোন সঠিক তথ্য কারো কাছে নেই। তবে মনোনয়ন বাণিজ্য এখন যে ভয়াবহ রূপ নিয়েছে এটা অস্বীকার করছেন না কেউই।
আওয়ামী লীগের একজন সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য বলেছেন যে, গত নির্বাচনের পর থেকেই মনোনয়ন বাণিজ্যের প্রকোপ আওয়ামী লীগে বাড়তে থাকে এবং এটি তৃণমূল পর্যন্ত সংক্রমিত হয়েছে।
উপজেলা নির্বাচন এমনকি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনেও ব্যাপক মনোনয়ন বাণিজ্য হয়েছে। বিভিন্ন সময় দেখা গেছে অর্থের বিনিময়ে অযোগ্য প্রার্থীদেরকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।
আরেকটি বিষয় নিয়ে আওয়ামী লীগের অনেক নেতা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তা হল, যে সমস্ত জরিপ গুলো হচ্ছে প্রান্তিক পর্যায় থেকে, সেই সমস্ত জরিপগুলোর মধ্যেও আর্থিক লেনদেন হচ্ছে।
টাকার বিনিময়ে জরিপে অনেককে জনপ্রিয় দেখানো হচ্ছে। আবার অনেককে কম জনপ্রিয় দেখানো হচ্ছে। যারা এখন বর্তমানে এমপি রয়েছেন এবং বিপুল অর্থ সম্পত্তির মালিক হয়েছেন তারা একাধিক জরিপকে প্রভাবিত করেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
তবে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন নেতারা একটি বিষয়ে একমত যে, আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবকিছু জানেন এবং বোঝেন। তিনি এই মনোনয়ন বাণিজ্য সম্পর্কে অবহিত এবং তার কাছে ৩০০ আসনের সঠিক খবর আছে।