এস এম রাফি ১ অক্টোবর ২০২৩ , ১১:১৫ অপরাহ্ণ প্রিন্ট সংস্করণ
দুই দলই ‘পয়েন্ট অফ নো রিটেনে’ চলে গেছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, আগামী কয়েকটা দিন বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এই কয়েকদিনের মধ্যে অনেক কিছুই ঘটতে পারে। বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী ৪ অক্টোবর দেশে ফিরছেন। এরপর রাজনৈতিক পরিস্থিতির গতিপ্রকৃতি চূড়ান্ত হবে এবং এর মধ্য দিয়ে আগামী দিনে বাংলাদেশের রাজনীতি কি রকম হবে তা চূড়ান্ত হবে।
ইতিমধ্যে সরকার খালেদা জিয়ার ব্যাপারে তার কঠোর এবং অনড় অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেছেন। বেগম খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাবার আবেদন নাকচ করে দিয়েছে সরকার।
এই আবেদন নাকচ করার ফলে বিএনপির মধ্যে দুই ধরনের প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। প্রথমত বিএনপি মনে করছে, আন্দোলনের কোনো বিকল্প নেই। তাদের আরও কঠোর অবস্থানে যেতে হবে। সরকারের সাথে আর কোনো সমঝোতা নয় এবং চূড়ান্ত আন্দোলনের জন্য দলের নেতাকর্মীদের সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করতে হবে। তবে বিএনপির মধ্যে এক ধরনের ভিন্ন মতও দেখা গেছে।
বিএনপির অনেক নেতা মনে করছেন, সরকারকে যত দুর্বল মনে করা হচ্ছিল বিশেষ করে ভিসা নিষেধাজ্ঞা এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বারবার বিভিন্ন ধরনের বক্তব্যের পর অনেকেই মনে করছিলো যুক্তরাষ্ট্রের এই ধরনের অবস্থানের পরে সরকার বোধহয় দুর্বল হয়ে গেছে। তাদের এখন ভুল ভেঙেছে।
সরকার যে মোটেও দুর্বল হয়নি বরং আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন করার ব্যাপারে সরকার যে বদ্ধপরিকর এই উপলব্ধিটা বিএনপি নেতাদের হয়েছে। কাজেই বড় ধরনের আন্দোলন করলে তা যে আওয়ামী লীগের বড় প্রতিরোধের মুখে পড়বে এই বোধ তাদের মধ্যে তৈরি হয়েছে।
অন্যদিকে সরকার এখন সিদ্ধান্ত নিয়েছে কোনরকম ভয় ভীতি, হুমকি ইত্যাদিকে সরকার পাত্তা দেবে না। বরং দ্রুত একটি অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচনের দিকে দেশকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করবে। আর এই লক্ষ্যে যারা বাধা থাকবে তাদের ব্যাপারে কঠোর গ্রহণ করবে।
ফলে সরকার এবং বিরোধী দলের মুখোমুখি অবস্থান দেশের রাজনীতিতে একটি উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। এখন দেখার বিষয় যে এরকম পরিস্থিতিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য পশ্চিমা দেশগুলোর ভূমিকা কি হবে এবং রাজনীতিতে ক্রিয়াশীল বিভিন্ন পক্ষ তারা কি ভূমিকা পালন করবে। তাদের ওপর এখন নির্ভর করছে অনেক কিছুই।
বিএনপির পক্ষ থেকে তারা চেষ্টা করবে চলতি মাসের মধ্যেই একটা বড় ধরনের আন্দোলন করে সরকারকে চাপে ফেলতে এবং এই আন্দোলনে জয়ী হওয়ার জন্য তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সহ পশ্চিমা দেশগুলোর সহযোগিতা চাইবে।
অন্যদিকে আওয়ামী লীগ মনে করছে এই মাসে যদি রাজপথে শক্তিশালী ভাবে থাকা যায় এবং বিরোধী দলের আন্দোলনকে মোকাবিলা করা যায়, তাদেরকে যদি ঢাকা দখল করতে না দেওয়া যায় সেক্ষেত্রেই নির্বাচনের পথ সুগম হবে।
আওয়ামী লীগ সংবিধান সম্মতভাবে আগে একটি নির্বাচন করতে চায়। তারপর দেখা যাবে কোন দেশ নিষেধাজ্ঞা দিচ্ছে, কারা কি দিল তখন নির্বাচনের পর নতুন সরকার এই বিষয়গুলো নিয়ে আলাপ আলোচনা করে একটা সমাধানে আসবে।
কিন্তু নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ কোনো রকম ছাড় দেবে না। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, আওয়ামী লীগ-বিএনপির এই পাল্টাপাল্টি অবস্থার দেশে নতুন করে রাজনৈতিক সংকট তৈরি করতে পারে।
বিএনপির নেতারা মনে বলছেন, এখন তাদের দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। আর কিছু করার নেই। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলছেন, সরকার পেশী শক্তির মাধ্যমে সবকিছু করতে চাইছে।
আর অন্যদিকে আওয়ামী লীগ বলছে, সরকার মোটেও দুর্বল হয়ে পড়েনি। গণতন্ত্র এবং সংবিধান সমুন্নত রাখার জন্য যা কিছু দরকার সেটা তারা করবে। এখন দেখার বিষয় বিএনপি এবং আওয়ামী লীগের এই পাল্টাপাল্টি অবস্থানের ক্ষেত্রে অন্যদের ভূমিকা কি হয় এবং তার ওপর নির্ভর করবে বাংলাদেশের রাজনীতির আগামী দিনগুলি।