আবু বক্কর সিদ্দিক,উপজেলা প্রতিনিধি,সুন্দরগঞ্জ(গাইবান্ধা): ৩১ মে ২০২৫ , ৯:২৩ অপরাহ্ণ প্রিন্ট সংস্করণ
গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে পরিকল্পিত অপহরণের শিকার স্কুলছাত্রীর আজও সন্ধান মেলেনি। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার রহস্যজনক ভূমিকায় পরিবার-পরিজন নিয়ে চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বাদী ও স্বাক্ষীরা।
জানা যায়, গত ১৬ ফেব্রুয়ারী সন্ধ্যায় উপজেলার শোভাগঞ্জ কলেজ মোড় থেকে পরিকল্পিত অপহরণের শিকার হয় শোভাগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেণীর ঐ ছাত্রী (১৩)। তাকে ৮ সদস্যের একটি দল সুযোগবুঝে জোড়পূর্বক মিশুক/অটোবাইকে তুলে নিয়ে যায়। এরপর থেকে অপহৃতা তার বাবা-মায়ের কাছে আসতে চাওয়ায় অপহরণকারীরা তার উপর নির্যাতন, হত্যার উদ্যোত হয়ে বিভিন্ন কাগজে সহি/স্বাক্ষর গ্রহণ, ক্যামেরার সামনে অপহরণকারীদের লিখিত বক্তব্য পাঠ করিয়ে তা ইন্টারনেটের মাধ্যমে ছড়াছড়ি করছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে আটকে রেখে অপহৃতাককে তার পিতাসহ পরিবারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহীমূলক কথা বলার চাপসৃষ্টি করছে বলে সংশ্লিষ্ট ও নির্ভশীল একাধিক সূত্র জানায়। পূর্ব-পরিকল্পিতভাবে অপহৃতার প্রতিবেশী ১৮ বছর ৪ মাস বয়সী রনজিনা আক্তারের মাধ্যমে ফাঁকি দিয়ে কলেজ মোড়ে ডেকে নেয়া হয় ঐ স্কুলছাত্রীকে। সেখানে অটোবাইক (মিশুক) গাড়িতে অপহরণকারী ৮ জন আগে থেকেই ওঁৎপেতে ছিল। রনজিনা আক্তারের ইমো, ম্যাসেঞ্জার, মোবাল নম্বর ও হোয়াটসএ্যাপে ম্যাসেজ ও কলে কথাবার্তা চলতেই থাকে। কথামত রনজিনা স্কুলছাত্রীকে ডেকে নিয়ে কলেজমোড়ে পৌঁছিলে জোড়পূর্বক গাড়িতে তুলে নিয়ে পাঁচপীর এলকায় প্রথমে রনজিনার দাদার বাড়ি, পরে আরেক বাড়িতে কিছু সময় অবস্থান নেয়া হয়। রনজিনার পিতা রঞ্জু মিয়া স্কুলছাত্রীর বাড়ির পাশে মৃত খয়বর হোসেনের জামাই হিসেবে শ্বশুড় বাড়ি থাকে। অপহরণকালে স্কুলছাত্রী সংজ্ঞা হারায়। সে সুবাদে ভোরে রোগী মেডিকেলে নেয়ার অপকৌশলে শ্রীপুর ইনিয়নের দক্ষিণ সমস গ্রামে নিজ বাড়িতে নিয়ে গিয়ে আঃ মান্নান কাজীর বাড়ি সংলগ্ন মৃত দুলা মিয়ার ছেলে আঃ রাজ্জাকের ঘরে রেখে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়ায় ২ দিন পর সংজ্ঞা ফিরে পায়। তখনো সে তার বাবার বাড়িতে যাবার জন্য সবারই পা ধরে গড়াগড়ি করলে রাত গভীরে বাড়ির পাশের নালায় নিয়ে আঃ রাজ্জাকসহ অন্যান্যরা কুসুমবালার উদ্ধৃতি দিয়ে প্রাণে মেরে ফেলে গর্তে পুঁতে রাখার উদ্যোত হয়। এদিকে, বড়ুয়াবাজারস্থ আঃ মান্নানের কাজী অফিসে সালিশের নামে অপহৃতার পরিবারের কিছু ব্যক্তির সহি-স্বাক্ষর গ্রহণের মাধ্যমে প্রতারণা করে। ১৯ ফেব্রুয়ারী অপহৃতার পিতা সংশ্লিষ্ট আইনে থানায় মামলা করেন। মামলার পূর্ববর্তী আইও এসআই আবু সাঈদ রনজিনা, আর এক মেয়েসহ তাদের পরিবারের সঙ্গে অপহরণকারীদের মোবাইলফোনে দীর্ঘদিন ধরে যোগাযোগের ব্যাপক কল তালিকা উদ্ধার করতে সক্ষম হন। বর্তমান তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই রুহুল আমীন অপহৃতাকে উদ্ধার না করে একটি রাজনৈতিক সংগঠনের এক নেতার মাধ্যমে চুক্তিতাবদ্ধ হন। মামলার বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে আলামত ধ্বংসের পায়তারা চালাতে থাকেন। আসামীদের গ্রেপ্তারের নামে দ্বৈতভূমিকা পালন করতে থাকেন। অনেক বলার পর রনজিনাকে গ্রেপ্তার দেখানো হলেও প্রকৃত জন্মনিবন্ধন (তাং- ২০ জানুয়ারী ২০০৭) উল্লেখ না করে রনজিনার পিতার দেয়া জালিয়াকিমূলক ও সৃজনকৃত জন্ম তারিখে আসামী ‘শিশু’ বলে চালান ফরমে উল্লেখ করেন। রনজিনাকে কোনরূপ জিজ্ঞাসাবাদ না করাসহ বা তার মোবাইলফোনে কোন তথ্যচিত্র উদ্ধার করেননি। আইও এক্ষেত্রেও চুক্তিতাবদ্ধ হয়েছেন বলে ঐ দিনই জামিনে এসে রনজিনার পিতা রঞ্জু মিয়াসহ অপর মেয়ের পিতা স্থানীয়ভাবে জানাজানি করে। এরপর, আইও’র কথামতো বাদী, স্বাক্ষী ও তাদের পরিবারের প্রতি কঠোর হুমকী-ধামকী, ষড়যন্ত্র করতে থাকার একপর্যায়ে থানায় মিথ্যা অভিযোগ করে। এনিয়ে থানার এএসআই মুকুল মিয়া তদন্তে মিথ্যা বলে প্রতীয়মান হন। এদিকে, অপহরণ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই রুহুল আমীনের সঙ্গে এজাহারে বর্ণীত আসামীসহ অজ্ঞাতনামা বা ঘটনা সমূহে জড়িতদের সু-নিবির সম্পর্কের থাকায় ভিক্টিমকে নিয়ে আসামীদের অবস্থানের কথা জানিয়েও কোন ফল হচ্ছেনা। উল্টো বাদীর সোর্সকে আনামীরা হুমকী প্রদান করে। মামলার আইও’র আর্থিক বাণিজ্য, আসামীসহ জড়িতদের সখ্যতার ফলে ভিক্টিম উদ্ধার হচ্ছেনা। তবে, আসামীসহ জড়িতদের পক্ষে চুক্তির মধ্যস্ততাকারীর মাধ্যমে তিনি (আইও) যে কোন সময় ভিক্টিমকে চাইলে পাবেন বলে নির্ভরশীল সূত্রগুলো জানায়। ভিক্টিমের নামে তার পিতার দেয়া মূল্যবান জমি হস্তগত করতেই অপহরণকারীরা অপতৎপরতা চালাচ্ছে।
এদিকে, ভিক্টিমের নামীয় জমি অপহৃতার পিতার পরিবারের প্রতিপক্ষ ও ঘটনার মূলপরিকল্পনাকারী আঃ খালেক ওরফে সাইদুরের নামে দলিল করে দেয়ার জন্য চাপসৃষ্টি করছে। অপরদিকে, মামলার আইও’র সঙ্গে সখ্যতা গড়ায় মূল পরিকল্পনাকারী, অপহরণ ও অন্যান্য ঘটনায় জড়িতরা মামলা তুলে নেয়ার জন্য বাদীকে কঠোরভাবে চাপসৃষ্ট করছে। স্বাক্ষী না দেয়ার জন্য স্বাক্ষীদেরকেও হুমকী দিচ্ছে। শুধু তাই না; বাদী, স্বাক্ষী ও তাদের পরিবারের প্রতি নানান ষড়যন্ত্রও করছে। এ পর্যন্ত কয়েকদফা হামলা করার চেষ্টাও চালিয়েছে। চাক্ষুষ এ অপহরণের ঘটনাকে প্রভাবশালী আসামীরা প্রেম ঘটিত বলে চালাতে মরিয়া হয়ে লেগেছে। এব্যাপারে, অপহৃত স্কুলছাত্রীর পিতা মামলার বাদী বলেন, মেয়েকে উদ্ধারে পুলিশের রহস্যজনক ভূমিকার কথা উল্লেখ করে বলেন, তার মেয়েকে (ভিক্টিমকে) উদ্ধার, প্রকৃতপক্ষে জড়িতদের গ্রেপ্তারসহ ন্যায় বিচারের স্বার্থে থানার এসআই রুহুল আমীনের কার্যকলাপ লক্ষ্য করলেই ভিক্টিম ও প্রকৃত রহস্য উম্মোচন হবে। এজন্য, তিনি এসআই রুহুল আমীনকে রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, ঢাকা ও চট্টগ্রাম রেঞ্জ ছাড়া অন্য কোন রেঞ্জে বদলীর দাবী জানান।