এস এম রাফি ১ জানুয়ারি ২০২৩ , ৯:৫০ অপরাহ্ণ প্রিন্ট সংস্করণ
ওদের উচ্চ শিক্ষা অর্জনে বড় বাঁধা দারিদ্র্যতা
জহির রায়হান কাউনিয়া (রংপুর থেকেঃ
গরীব ঘরে জন্ম ওদের। সুখের দেখা জুটেনি ভাগ্যে। নুন আনতে পান্তা ফুরায় অবস্থা। তবুও নানা প্রতিকূলতার সাথে লড়াই করে জীবন যুদ্ধে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার স্বপ্ন ওদের চোখে মুখে। ওরা যেন গোবরে পদ্ম ফুল । এদের কারো বাবা কুলি,কেউ দরিদ্র কৃষক, কারো বাবা দিন মজুর। তাদের সন্তানরা এসএসসি পরীক্ষায় ভালো ফল করলেও উচ্চ শিক্ষা কিভাবে গ্রহন করবে, সে চিন্তা ওদের সারাক্ষণ তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে। অর্থের অভাবে ভর্তি হতে পারছেনা তারা। সমাজের বিত্তবানদের একটু সহানুভুতি পেলে কাউনিয়ার ৫ অদম্য মেধাবী শিক্ষার্থীদের উচ্চ শিক্ষা অর্জনের স্বপ্ন পূরন হবে।
মনিরুজ্জামানঃ দরিদ্র ঘরে জন্ম মনিরুজ্জামানের। নতুন বই কিনে পড়ালেখা করতে পারেনি সে। দরিদ্রতা আর নানা প্রতিকুলতার সাথে যুদ্ধ করে কাউনিয়া মোফাজ্জল হোসেন সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে থেকে এসএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়েছে মনিরুজ্জামান । উপজেলার বল্লভবিষু গ্রামের কোল্ড স্টোর শ্রমিক শাহিনুল ইসলাম ও গৃহিনী মোছাঃ মরিয়ম বেগমের পুত্র সে। ৬ শতক জমির বাড়ি ভিটা ছাড়া আর কোন জমি- জমা নেই তাদের। শ্রমিক বাবার সামান্য টাকায় চলে সংসার, বাবা তার পড়া লেখার খরচ দিতে না পাড়ায় হরিশ্বর গ্রামে নানীর বাড়িতে থেকে সে পড়ালেখা করছে। ছেলের অনেক স্বপ্ন লেখাপড়া শিখে ইঞ্জিনিয়ার হবে। কিন্তু সেই স্বপ্ন পূরুণে অর্থের যোগান হবে কি ভাবে ? আর্থিক সহযোগিতা না পেলে মনিরুজ্জামানের শিক্ষার প্রদীপও নিভে যেতে পারে। তার স্বপ্ন পূরনে এখন বড় বাঁধা দারিদ্রতা। এ বাঁধা ডিঙ্গিয়ে সেই স্বপ্ন পূরন হবে কিনা সে চিন্তাই এখন সারাক্ষন মনিরুজ্জামান কে তাড়া করে বেড়ায় । সমাজের বৃত্তবানরাই পারে তার স্বপ্ন পুরন করতে।
আরিফা খাতুনঃ কাউনিয়া উপজেলার নাজিরদহ একতা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে অংশ নিয়ে জিপি এ-৫ পেয়েছে আরিফা খাতুন। উপজেলার কিশামত চিনাতুলী গ্রামের দরিদ্র কৃষক আশরাফুল হোসেন ও গৃহিনী ফরিদা খাতুনের এর কন্যা সে। চরম অর্থ সংকটের মাঝেও এবার এসএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে সে। দরিদ্রতার সাথে লড়াই করে এসএসসি পাস করলেও উচ্চ শিক্ষা গ্রহন নিয়ে এখন দুচিন্তায় পড়েছে আরিফা। তার শিক্ষার খরচ জুটবে কিভাবে এচিন্তায় বিভোর তার দরিদ্র কৃষক পিতা । তারা ৩ ভাই বোন। আরিফা এতো দিন পড়াশুনার খরচ চালিয়েছে বিভিন্ন কারুকাজ খচিত টুপি সেলাই করে । মাত্র ১৬ শতাংশ জমিতে বাড়ি ভিটা তাদের। অন্যর জমি বর্গা নিয়ে চাষাবাদ করে তার পিতা আশরাফুল। সামনে এগিয়ে যাওয়ার নিরন্তর সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে সে। মা ফরিদা খাতুন মেয়ের সাফল্যে খুশি হলেও ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। মেয়ে চায় ডাক্তার হতে, কিন্তু দরিদ্র পরিবারের পক্ষে কিভাবে তা সম্ভব। সংসারে একজন মাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তির ওপর নির্ভরশীল তাদের সংসার। তিনি মেয়ের জন্য সকলের কাছে দোয়া ও সহযোগিতা কামনা করেছেন।
আরফিনা আক্তার রিয়াঃ দারিদ্রতা ও অর্থ সংকট দমিয়ে রাখতে পারেনি কাউনিয়া উপজেলার নাজিরদহ গ্রামের দরিদ্র কৃষক মোঃ আবু খায়েরের কন্যা রিয়া কে। চরম অর্থ সংকটেও আরফিনা এবার এসএসসি পরীক্ষায় কাউনিয়ার ইমামগঞ্জ স্কুল এন্ড কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগে অংশ নিয়ে জিপিএ-৫ পেয়েছে। দারিদ্রতার সাথে লড়াই করে এসএসসি পাস করলেও উচ্চ শিক্ষা গ্রহন নিয়ে এখন দুঃচিন্তায় পড়েছে আরফিনা । মা রোকসানা বানু জানায় বাড়ী ভিটা ছাড়া কোন জমি জিরাত নেই তাদের। ওরা ২ ভাই ২বোন পড়ালেখা করে। অভাবের মাঝেও সব প্রতিবন্ধকতাকে পদদলিত করে ভালো কলেজে পড়ার স্বপ্ন নিয়ে আরফিনা । মেয়ের সাফল্যে খুশি হলেও পিতা আবু খায়ের তার ভবিষ্যৎ নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় আছেন। আরফিনা চায় ডাক্তার হতে, কিন্তু দরিদ্র পিতা- মাতার পক্ষে কিভাবে তা সম্ভব। তিনি মেয়ের জন্য সকলের কাছে দোয়া ও সহযোগিতা কামনা করেছেন।
মাহফুজার রহমানঃ উপজেলার খলাইঘাট গ্রামের দিনমজুর পিতা মমিনুর রহমানের পুত্র মাহফুজার রহমান প্রমান করছে ইচ্ছা শক্তি থাকলে সব সম্ভব। মাহফুজার রহমান নাজিরদহ একতা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে এস এস সি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছে। ১১ শতাংশ জমিতে নিজস্ব বসতভিটা ছাড়া আর কোন জমি নেই তাদের। মাহফুজার জানায় ছোট ২ ভাই মাদ্রাসায় পড়ে। দিন মজুর পিতার সামান্য আয় দিয়ে ৩ ভাইয়ের পড়ালেখার খরচ ও ৫ জনের সংসার চলে কোন রকমে। তাই আমার উচ্চ শিক্ষার খরচ যোগান দেয়া আমার বাবার পক্ষে অসম্ভব। তাই অভাবের সংসারে অর্থ জোগান ও পড়ালেখার খরচ জোগাতে সে প্রাইভেট পড়িয়ে এ পর্যন্ত এসেছে । মা মনোয়ারা বেগম জানায়, তার ছেলের স্বপ্ন ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার। কিন্তু দিনমজুর পিতার পক্ষে ছেলের স্বপ্ন পুরুণ হবে কীভাবে।
আশরাফি আক্তার অন্তরাঃ পরিশ্রম ও অধ্যাবসায় থাকলে যে সাফল্যের চরম শিখরে পৌছা যায় তার প্রমান রেখেছেন উপজেলার চাঁনঘাট গ্রামের দিন মজুর আরিফুল ইসলামের কন্যা আশরাফি আক্তার । সে শহীদবাগ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মানবিক বিভাগ নিয়ে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে জিপিএ -৫ পেয়েছে। তারা ২ বোন। পিতা আরিফুল দ্বিতীয় বিয়ে করে আশরাফির মা (প্রথম স্ত্রী) কে বাবার বাড়িতে রেখে ছোট বউ নিয়ে অনত্র্য বসবাস করছেন। আশরাফি মায়ের সাথে বল্লভ বিষু গ্রামে নানার বাড়িতে থেকে পড়ালেখা করছে।সে বিসিএস দিয়ে শিক্ষকহতে চায়, কিন্তু টানাটানির সংসারে মেয়ের আশা পূরণ করা কী সম্ভব। বিত্তবানদের সহযোগিতা পেলে শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন পূরুণ হতে পারে আশরাফির।